অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) শিল্পের বিকাশ এবং স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানিয়েছেন এই খাতের শিল্প উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মতো নীতিগত ও আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেলে আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের এপিআই খাতকে এগিয়ে নেওয়া : সরকারের সমর্থন ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন সংশ্লিষ্টরা। এ আয়োজন করে অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএআইএমএ)।
আলোচনায় বিএআইএমএর সভাপতি এস এম সাইফুর রহমান ওষুধের কাঁচামাল শিল্পের সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ১০ থেকে ১৫টি কোম্পানি প্রায় ৭০ ধরনের ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করে। অথচ প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার, যা এখনো আমদানিনির্ভর। সরকারের নীতি সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা পেলে এসব কাঁচামালের অধিকাংশই দেশেই উৎপাদন সম্ভব। এমনকি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল রপ্তানিও সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন জরুরি। জুট শিল্পের মতো এ শিল্পেও একটি টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আশ্বাসও পাওয়া গেছে।
সাইফুর রহমান জানান, প্রতি বছর ভারত এপিআই শিল্পে উদ্যোক্তাদের প্রায় ২১ হাজার ৯৪০ কোটি রুপি সহায়তা দেয়। চীন সরকার নিজ অর্থায়নে এ খাত গড়ে তুলেছে। আমাদের দেশেও একই রকম নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও এপিআই শিল্পের বিকাশ অত্যন্ত জরুরি।
তিনি জানান, ২০১৮ সালে এ খাতে ১৮ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছিল। তবে কোভিড-১৯ এবং নানা জটিলতায় রপ্তানি কমে গেছে। ভারত যদি ৩০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করতে পারে, আমরা চাইলে সহজেই ২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করতে পারি। এ জন্য আগামী পাঁচ বছর অব্যাহত সহায়তা প্রয়োজন। এনবিআরের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের ভ্যাট ও ট্যাক্স রিফান্ড নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। এ ছাড়া তিনি পোশাক খাতের মতো ‘লো কস্ট রিফাইন্যান্স’ সুবিধা দেওয়ারও আহ্বান জানান।
বিএআইএমএর কার্যনির্বাহী সদস্য ও গণস্বাস্থ্য ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম জামালউদ্দিন বলেন, সরকারের সহযোগিতা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং দক্ষ জনবলের ঘাটতির কারণে এখনো দেশে শক্তিশালী এপিআই শিল্প গড়ে ওঠেনি। ফলে প্রতিবছর দেড় থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের এপিআই পণ্য আমদানি করতে হয়। এর ৫০ শতাংশ দেশেই উৎপাদন সম্ভব, যদি সরকার আন্তরিক হয়। তিনি এ খাতের পণ্যের আমদানিতে কর বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান।
বিএআইএমএর সদস্য ও সোডিক্যাল কেমিকেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা যদি এ খাতকে বড় করতে পারি, তাহলে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অষনেক শিক্ষার্থী এ খাতে যুক্ত হতে পারবে।
বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, এই খাতের সম্ভাবনা অত্যন্ত ব্যাপক। নীতিগত সহায়তা পেলে আমদানি নির্ভরতা কমবে। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে এই খাতে বিনিয়োগ করেছে। যদি দেশের চাহিদার ৫০ শতাংশ কাঁচামাল দেশেই উৎপাদন করা যায়, তাহলে ওষুধ শিল্পে আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
মন্তব্য করুন