বাঙালি রান্নার অন্যতম উপকরণ হলুদ। হলুদ রান্নায় শুধু রং বা গন্ধই বাড়ায় না, এই মসলা আয়ুর্বেদ ও ঘরোয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত উপকারী টোটকা। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন, কেউ যদি টানা এক মাস প্রতিদিন হলুদ খায়—তাহলে শরীরে কী ধরনের পরিবর্তন দেখা যাবে? সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস্ অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে ওঠে আসে এর উত্তর।
তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক টানা এক মাস নিয়মিত হলুদ খেলে শরীরে যেসব পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে-
প্রদাহ হ্রাসে সহায়তা : হলুদের প্রধান সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন (Curcumin) শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ কমাতে কার্যকর। এই উপাদানটি আর্থ্রাইটিস, জয়েন্টের ব্যথা এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগে স্বস্তি দিতে সাহায্য করে।
হজমে উন্নতি : হলুদ পেটকে শান্ত রাখতে সহায়তা করে। এটি বদহজম, গ্যাস বা পেট ফাঁপার সমস্যা উপশমে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
ইমিউন সিস্টেম মজবুত করে : হলুদে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতিকর ‘ফ্রি র্যাডিকেলস’ থেকে সুরক্ষা দিতে সহায়তা করে।
মাসল পেইন কমায় : ব্যায়ামের পর হওয়া মাংসপেশির ব্যথা ও ক্লান্তি কমাতে হলুদ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে কিছু ক্ষেত্রে হলুদের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তা হলো :
হজমে সমস্যা : খালি পেটে বেশি পরিমাণে হলুদ খাওয়া শরীরের জন্য সবসময় ভালো নয়। এতে অম্বল, গ্যাস, পেট খারাপ বা বমিভাবের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি কারও কারও ক্ষেত্রে এটি হজমে জটিলতাও তৈরি করতে পারে। তাই উপকারের আশায় অতিরিক্ত হলুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
রক্ত পাতলা হওয়ার ঝুঁকি : হলুদ প্রাকৃতিকভাবে রক্ত পাতলা করার উপাদান হিসেবে কাজ করে। তাই যারা ইতোমধ্যেই ব্লাড থিনার (রক্ত পাতলা করার ওষুধ) খাচ্ছেন, তাদের হলুদ খাওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অতিরিক্ত হলুদ রক্তক্ষরণ ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষত অস্ত্রোপচার বা দুর্ঘটনার মতো পরিস্থিতিতে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত হলুদ খাওয়া নিরাপদ নয়।
লিভারের ক্ষতি : খুব বেশি পরিমাণে বা দীর্ঘদিন হলুদের সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার অভ্যাস লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলতে পারে। বিশেষ করে যাদের লিভার সংক্রান্ত পুরোনো সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই তাদের হলুদ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
অ্যালার্জির ঝুঁকি : হলুদে থাকা কিছু যৌগের কারণে অ্যালার্জি হতেই পারে। বিশেষ করে যাদের ত্বক সংবেদনশীল। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হলুদ খাওয়ার পর বা চামড়ায় লাগানোর পর দেখা দিতে পারে চুলকানি, র্যাশ, লালচে ফোলা বা জ্বালাভাব। এ ধরনের প্রতিক্রিয়া শরীরের ইমিউন সিস্টেম থেকে সৃষ্ট অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই আগে থেকে অ্যালার্জি থাকার ইতিহাস থাকলে হলুদ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
আয়রন শোষণে ব্যাঘাত : অতিরিক্ত হলুদ শরীরের জন্য সব সময় উপকারী নাও হতে পারে। অতিমাত্রায় হলুদ খেলে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা ধীরে ধীরে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে যাদের দেহে আগে থেকেই আয়রনের পরিমাণ কম, তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হলুদ খাওয়া এ সমস্যা আরও জটিল করে তুলতে পারে। তাই সঠিক মাত্রায় হলুদ গ্রহণ করা জরুরি।
এখন প্রশ্ন হলো কীভাবে হলুদ খাবেন?
১. রান্নায় মশলা হিসেবে ব্যবহার করুন
২. হালকা গরম পানিতে বা চায়ে মিশিয়ে খান
৩. রাতে ঘুমের আগে দুধে এক চিমটে হলুদ মিশিয়ে খাওয়া খুবই উপকারী
৪. সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন
এক মাস ধরে প্রতিদিন হলুদ খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে সেটি অবশ্যই সঠিক মাত্রায় এবং সঠিকভাবে গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খাওয়া সবসময় ভালো ফল আনে না। তাই হলুদের পূর্ণ উপকার লাভের জন্য প্রয়োজন মিতব্যয়িতা ও সচেতনতা বজায় রাখা।
মন্তব্য করুন