দেশে বা বিদেশের যেকোনো স্থানে কাজের জন্য কিংবা ভ্রমণের সময় অনেকেরই হোটেলে থাকার প্রয়োজন পড়ে। অনেক সময় হোটেলের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার বিষয়টি মাথায় থাকে না। আবার অনেকের হোটেল কক্ষে লুকানো ক্যামেরা নিয়ে আতঙ্ক কাজ করে। প্রায় সময় হোটেলকক্ষে গোপন ক্যামেরা বসানোর অভিযোগ উঠছে, যা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার জন্য বড় ধরনের হুমকি।
প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় গোপন ক্যামেরা এখন কক্ষে থাকা পর্দা, ঘড়ি, স্মোক ডিটেক্টর, চার্জার অ্যাডাপ্টর, ওয়াশরুশ কিংবা সাজসজ্জার জিনিসের ভেতরে সহজেই লুকিয়ে রাখা যায়। তাই হোটেলে থাকার সময় ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী একটু সচেতনতা আর কয়েকটি সহজ কৌশল জানলেই আপনি দ্রুত সন্দেহজনক কোনো যন্ত্র বা ক্যামেরা শনাক্ত করতে পারবেন।
হোটেল কক্ষের চারপাশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ
কক্ষে ঢোকার পর প্রথমেই ভালোভাবে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কক্ষে থাকা স্মোক ডিটেক্টর, ঘড়ি, বৈদ্যুতিক সকেট, দেয়ালের সাজসজ্জা, খেলনা বা আয়না ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। এগুলোর কোনোটি অস্বাভাবিক জায়গায় বসানো থাকলে বা আশপাশের জিনিসের তুলনায় নতুন মনে হলে ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে।
অন্ধকার করে টর্চলাইট ব্যবহার
ঘরের সব আলো নিভিয়ে টর্চলাইট জ্বালিয়ে হোটেলকক্ষের চারপাশ ভালোভাবে দেখতে হবে। ক্যামেরার লেন্স আলো প্রতিফলিত করে, তাই কোথাও আলোর প্রতিফলন দেখা গেলে বুঝতে হবে সেখানে ক্যামেরা রয়েছে। আয়না, ঘরের কোণ বা ছবির ফ্রেমও পরীক্ষা করতে হবে।
ফোনের ক্যামেরার মাধ্যমে ইনফ্রারেড শনাক্তকরণ
গোপন ক্যামেরা থেকে নির্গত অতি লাল বা ইনফ্রারেড আলো খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়। তবে স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিয়ে তা শনাক্ত করা যায়। এ জন্য প্রথমে কক্ষের আলো নিভিয়ে স্মার্টফোনের ক্যামেরা চালু থাকা অবস্থায় সন্দেহজনক স্থানগুলোর ছবি পরখ করতে হবে। ক্যামেরার পর্দায় যদি ক্ষুদ্র আলোকবিন্দু বা ঝলক দেখা যায়, সেটি ইনফ্রারেড আলোর উৎস হতে পারে।
ক্যামেরা-ডিটেকশন অ্যাপ
এখন হিডেন ক্যামেরা খুঁজে বের করার অ্যাপও আছে। অ্যাপ স্টোর থেকে ‘হিডেন ক্যামেরা ডিটেক্টর’ অ্যাপ নামিয়ে নিন। এবার সেই অ্যাপসের নিয়ম জেনে সহজেই লুকানো ক্যামেরা খুঁজে বের করতে পারবেন।
ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে অচেনা যন্ত্রের সন্ধান
ওয়্যারলেস ক্যামেরা সাধারণত একই ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকে। আর তাই স্মার্টফোনের ওয়াই-ফাই সেটিংসে গিয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত যন্ত্রগুলোর তালিকা দেখতে হবে। তালিকায় যদি অপরিচিত বা সন্দেহজনক নামের যন্ত্র যেমন আইপি ক্যামেরা বা ক্যামেরা দেখা যায়, তবে সতর্ক হতে হবে।
রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ডিটেক্টর ব্যবহার
কম দামের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ডিটেক্টর ব্যবহার করে সহজেই ক্যামেরা বা মাইক্রোফোনের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব। কক্ষে এ ধরনের কোনো যন্ত্র চালু থাকলে ডিটেক্টরে আলো জ্বলে বা শব্দ হবে। ফলে সহজেই গোপন ক্যামেরা শনাক্ত করা যাবে।
আয়না পরীক্ষা করা
আয়নার পেছনে ক্যামেরা লুকানো থাকতে পারে। আর তাই আয়নার নির্দিষ্ট স্থানে আঙুল দিয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে। যদি আঙুল ও তার ছবির মধ্যে ফাঁক দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে, সেটি সাধারণ আয়না। আর ফাঁক না থাকলে সন্দেহ করতে হবে।
ট্রায়াল বা বাথ রুম পর্যবেক্ষণ
ট্রায়াল রুম কিংবা হোটেলের রুম, বাথরুমে গোপন ক্যামেরায় ধারণ করছে ভিডিও। এরপর তা দিয়ে নারীদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। হোটেল হোক বা ড্রেসিং রুম, লুকানো ক্যামেরা রাখা এই যুগে এনিয়ে দুশ্চিন্তা অমূলক কিছু নয়। প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে কীভাবে অসাধু কাজ করা যায় তারই নিদর্শন গোপন ক্যামেরা।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন