বাঙালিদের ভাত খাওয়ার অভ্যাস নিয়ে নানা মন্তব্য শোনা যায়। কেউ সমালোচনা করলেও যারা ভাতপ্রেমী, তারা এসব পাত্তা দেন না। দিনের শুরুতে কিংবা দিনের শেষে পেটভরে ভাত খেলে শরীরে এক ধরনের প্রশান্তি আসে। আমাদের দেশে এখনো তিন বেলাই ভাত খাওয়ার প্রবণতাই বেশি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ ভাত কমিয়ে শাকসবজি, ফলমূল ও রুটি খাওয়ার দিকে ঝুঁকছেন। প্রশ্ন হলো—ভাত খাওয়া কি আসলেই ক্ষতিকর?
ভাতের উপকারিতা
বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ বহু দেশে ভাত প্রধান খাদ্য। এটি সহজপাচ্য এবং কার্বোহাইড্রেটে ভরপুর, যা শরীরকে শক্তি জোগায়। চালের ধরনভেদে এতে সামান্য ভিটামিন বি, ম্যাগনেশিয়াম ও আয়রনও থাকে। তবে ভাতে ফাইবার প্রায় থাকে না। ব্রাউন রাইসে কিছুটা ফাইবার রয়েছে।
দিনে কতবার ভাত খাওয়া উচিত?
ওজন কমাতে চান বা ডায়েট মেনে চলতে চান, তাহলে দিনে বারবার ভাত খেলে সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শাকসবজি বা রুটি হতে পারে বিকল্প। তবে সাধারণ সুস্থ মানুষের জন্য দিনে একাধিকবার ভাত খাওয়ায় আপত্তি নেই।
পুষ্টিবিদদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষ দিনে গড়ে ১০০ গ্রাম চালের ভাত খেতে পারেন (প্রায় ৩৫০-৩৬০ কিলোক্যালরি)। যাদের শারীরিক পরিশ্রম কম, তাদের জন্য ৬০-৭০ গ্রাম চাল যথেষ্ট। শিশু-কিশোর (১২-১৪ বছর), যারা সারাদিন খেলাধুলা বা দৌড়ঝাঁপ করে, তারা ১২০-১৫০ গ্রাম চাল খেতে পারে। তবে এই পরিমাণ বয়স, লিঙ্গ, ওজন ও উচ্চতার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ভাত
ডায়াবেটিস হলে ভাত একেবারেই বাদ দিতে হবে—এমন নয়। তবে ভাতের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি, তাই এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত ব্যায়াম, ওষুধ বা ইনসুলিনের মাধ্যমে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখলে মাপমতো ভাত খেতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ভাত খাওয়ার ভারসাম্য
ভাতের সঙ্গে যখন ডাল, শাকসবজি ও মাছ খাওয়া হয়, তখন ফাইবারের ঘাটতি পূরণ হয় এবং শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও প্রোটিনও পায়। তাই দিনে বারবার ভাত খাওয়া ক্ষতিকর নয়, যদি পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
মন্তব্য করুন