কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১১:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ছাত্র আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা জানাল এমএসএফ

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের লোগো। ছবি : সংগৃহীত
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের লোগো। ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) জানিয়েছে, ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট মাস পর্যন্ত সারা দেশে কমপক্ষে ৮০৯ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষার্থী, নারী-শিশু, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ রয়েছেন।

শনিবার (৩১ আগস্ট) মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তাদের আগস্টের মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এমএসএফ জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি, সংঘর্ষ ও বিভিন্ন ধরনের সহিংসতায় আগস্ট মাসে নিহত হয়েছেন ৫৫৬ জনের বেশি। জুলাই মাসে নিহতের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২৫৩ জন।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অপর এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভ ও পরবর্তী সহিংসতায় কমপক্ষে ৬৫০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন ৩৩ হাজারেরও অধিক।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও নেতাকর্মীদের নামে ২৬৮ টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে হয়েছে ১০০ টি মামলা। এর মধ্যে দুটি গণহত্যা, একটি গুমের, একটি অপহরণ এবং দুটি হত্যাচেষ্টা মামলা এবং বাকিগুলো হত্যা মামলা।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা করা হয়েছে। দায়েরকৃত মোট মামলায় আসামির তালিকায় সুনির্দিষ্টভাবে নাম আছে প্রায় ২৬ হাজার ২৬৪ জনের। একইসঙ্গে ‘অজ্ঞাতনামা’ আসামির সংখ্যা কমপক্ষে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫ শত ৫৫ জন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক সহিংসতার ২৩টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২০৪ জন। তাদের মধ্যে ৯ জন নিহত ও ১৯৫ জন আহত হয়েছেন।

সহিংসতার ২৩টি ঘটনার মধ্যে ১২টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দের কারণে, ৯টি বিএনপি-আওয়ামি লীগে, ১টি আওয়ামি লীগের অন্তর্দ্বন্দ ও অপর ১টি ঘটনা ঘটেছে জামাতের সাথে বিএনপির। নিহতদের মধ্যে ৫ জন বিএনপির আর ৩ জন আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কারা হেফাজতে গণমাধ্যম সূত্রে ৭ জনের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল ২ জন। এ মাসে ১ জন হাজতি ও ৩ জন কয়েদির মৃত্যু হয়েছে। কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ জন, ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে ১ জন, রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের মধ্যে সংঘর্ষে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে শৌচাগারে ১ জন বন্দির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় মোট ১৪ টি ঘটনায় ৩৭ সাংবাদিক নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৫ সাংবাদিক তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ও আক্রমণের শিকার হয়েছেন আর লাঞ্ছিত ও হুমকির শিকার হয়েছেন ২ সাংবাদিক।

নির্যাতনের শিকার সাংবাদিকের মধ্যে ২ জন নারী সাংবাদিক রয়েছেন। তারা হলেন চ্যানেল ২৪-এর সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি আমিনা বিলকিস ময়না এবং দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার ফটোসাংবাদিক এস এম তামান্না।

এদিকে রাজধানীর হাতিরঝিল লেক থেকে রাহানুমা সারাহ (৩২) নামে এক নারী সাংবাদিকের লাশ উদ্ধার হয়েছে।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন ২৫ জন সাংবাদিক। ৮টি মামলার মধ্যে ৩টি হত্যা মামলা করা হয়েছে ঢাকায়, ১টি হত্যা মামলা বগুড়াতে, ১টি সিলেটে বিষ্ফোরক আইনে, ২টি মামলা রংপুরে যার একটি হত্যা মামলা আর অপরটি পীরগঞ্জে বিএনপি অফিসে ভাঙচুর ও ১টি মামলা হয়েছে রাজশাহীতে চাঁদাবাজি ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্তদের মধ্যে দুই সাংবাদিক শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপা গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এছাড়াও ২৯ আগস্ট আইনজীবী এমএইচ গাজী তামিম জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা ও ৩২ সিনিয়র সাংবাদিকসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ দাখিল করেছেন।

সাইবার নিরাপত্তা আইনে আরও ২টি মামলার ১টিতে গ্রেফতার হয়েছেন ১জন, অপর মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ৪ জন সাংবাদিকসহ আরো অজ্ঞাত ৫জনকে আসামি করা হয়েছে।

দেশের সীমান্ত নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক গুলিতে ৩ বাংলাদেশী নাগরিক নিহত, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন ৩ বাংলাদেশী নাগরিক।

অপরদিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ৮ বাংলাদেশী নাগরিককে আটক করে ধরে নিয়ে গেছে।

৩৭টি জেলায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর, মন্দির,মঠ, লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ১৪৮ টি ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা ১৪১টি ও ৭ টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর।

দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয় নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যা গত মাসের তুলনায় ১২৭টি কম। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ১৯টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ৮টি, ধর্ষণ ও হত্যা ২টি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩ জন প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরী।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকায় গাইবেন আতিফ আসলাম, আয় যাবে জুলাই শহীদদের পরিবারে

ঢাকা-৭ আসনে ৩১ দফার প্রচারণা মীর নেওয়াজের

গভীর রাতে সাংবাদিক সোহেলকে তুলে নিয়ে গেছে ডিবি

বাংলাদেশের কাছে হারের পর যা বললেন ভারতের কোচ

ভারতের বিপক্ষে জয় ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তের একটি : হামজা চৌধুরী

হাসিনাকে ফেরাতে দিল্লিকে চিঠি দিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

রাজধানীতে রাতে গাড়িতে আগুন

পিপি কার্যালয়ের সামনে পটকা ফুটিয়ে ভীতির চেষ্টা

গভীর রাতে রাজধানীতে মার্কেটে আগুন

বাংলাদেশ দলকে জামায়াত আমিরের অভিনন্দন

১০

টানা ২ দফায় স্বর্ণের দাম কত কমলো দাম?

১১

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ে বন্ধ হচ্ছে ৫ সেবা

১২

পারিবারিক নির্যাতনের শিকার ঝালকাঠির শিশু রাইসার পাশে তারেক রহমান

১৩

ভারতকে হারিয়ে হামজাদের জন্য ২ কোটি টাকার তাৎক্ষণিক বোনাস

১৪

২২ বছর পর বাংলাদেশের ভারত বধে তারেক রহমানের অভিনন্দন

১৫

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আ.লীগ নেতার মৃত্যু

১৬

তারেকের দল নিয়ে যে তথ্য দিল ইসি

১৭

জনগণের ভালোবাসাই আমার শক্তি : ফারুক

১৮

কালবেলা-এসএমসি ডায়াপার গোলটেবিল বৈঠক / সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভব শিশুর নিউমোনিয়া প্রতিরোধ

১৯

তিউনিসিয়ার বিপক্ষে যে একাদশ নিয়ে মাঠে নামতে পারে ব্রাজিল

২০
X