আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার যে লড়াই ছিল, তা হলো সাংস্কৃতিক লড়াই। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, বাঙালি মুসলমান যদি সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে জিততে না পারে, তাহলে স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।’
শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরসি মজুমদার অডিটরিয়ামে আয়োজিত ‘জুলাই ও মুসলিম : রাজনৈতিক কর্তাসত্তা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
‘সেন্টার ফর বেঙ্গল স্টাডিজ’ ও সঞ্চারণের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন লেখক ও বুদ্ধিজীবী ডা. ফাহমিদ-উর-রহমান ও কাতারের হামাদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. উসামা আল আযামী। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে গবেষণাধর্মী সাময়িকী ‘বাঙলানামা’র চতুর্থ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শাহবাগ ও শাপলার যে লড়াই, সেটাও একটা সাংস্কৃতিক লড়াই। শাহবাগ বাঙালি জাতীয়তাবাদের মোড়কে আমাদের ওপর এই লড়াই চাপিয়ে দিয়েছে। ২০১৩ সালে মনে হয়েছিল আমরা পরাজিত হয়েছি। কিন্তু ২০২৪ সালে তরুণরা রক্ত দিয়ে দেখিয়ে দিল, আসলে বাঙালি জাতীয়তাবাদেরই মৃত্যু ঘটেছে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই সময়ে আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ আবারও প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়েছে। তারা একে-অপরকে মোকাবিলা করতে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে পুরোনো বয়ান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় শাহবাগের স্লোগান এখন আবার শোনা যাচ্ছে। তুমি কে, আমি কে, বাঙালি বাঙালি স্লোগান আবার ফিরে আসছে।’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিটা জাতির পরিবর্তনের জন্য কিছু হিরোর প্রয়োজন হয়। জুলাই বিপ্লব আমাদের বেশ কিছু হিরো দিয়ে গেছে। তাদের গল্প, গান, কবিতাসহ নানা সাংস্কৃতিক মাধ্যমে ধারণ করতে হবে।’
ডা. ফাহমিদ-উর-রহমান বলেন, ‘২০২৪-এর জুলাইয়ে আমরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক মৃত্যু দেখেছি। কিন্তু এর সাংস্কৃতিক কাঠামো এখনো রয়ে গেছে। আজকের এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি ঢাকার নবাব পরিবার পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের উন্নতির জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখানে নবাবদের কোনো চর্চা করা হয় না। কিন্তু যারা এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছে, তাদের সবসময় এখানে চর্চা হয়।’
ফাহমিদ-উর-রহমান আরও বলেন, ‘আজকে যে নতুন বন্দোবস্তের কথা উঠছে, সেখানে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পাশাপাশি এসবও সংস্কার করতে হবে।’
মন্তব্য করুন