গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সরকার মামলা করলেও শ্রমিকদের নাম করে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। রোববার (২৮ জানুয়ারি) শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণের পর জামিন পেয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এর আগে, সকালে ৬ মাসের সাজার বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল ও জামিন আবেদন করেন ড. ইউনূস।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, আমার দিক থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার, সরকার বারবার বলছে, সকল পর্যায়ে থেকে বলছে, এই মামলা সরকার করেনি। কিন্তু আপনারা তো (সাংবাদিক) সাক্ষী। আপনারা তো কোনো কিছু বলছেন না। এটা কী সরকার করল, না কি শ্রমিক? এ জবাবটা আমাকে দেন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরত সরকারি, সরকারের অধীন। শ্রমিকত কোনো মামলা করেনি, সেটা আপনারা (সাংবাদিক) বলেন। এটা তো মিথ্যা কথা।
তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ছিল আমাদের একটা স্বপ্ন। আমরা পৃথিবীকে বদলাতে চাই। দারিদ্র্যকে মুছে ফেলতে চাই। এটাই ছিল আমাদের স্বপ্ন। যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা পেছনে লেগেছিলাম। জানি না আমরা ভবিষ্যতে আমাদের কী হবে না হবে। আমাদের কোনো কিছুই জানা ছিল না। আমরা গেছি, খুঁটিনাটি দেখে দেখে আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। ফলে গ্রামীণ ব্যাংক আস্তে আস্তে প্রসারিত হলো। এটা হয়ে গেল আমাদের অপ্রত্যাশিত একটা বীজতলা। স্বপ্নের বীজতলা। আমরা স্বপ্ন দেখি আর বীজ বুনি এটার মধ্যে। কী হবে ভবিষ্যতে। সেটা ক্রমে ক্রমে আমরা প্রসারিত করলাম, নানা দিকে গেলাম... স্বাস্থ্যের দিকে, প্রযুক্তির দিকে নিয়ে গেলাম, একটার পর একটা।
এ সময় ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আশা করি নিম্ন আদালতের সাজা আপিলে বাতিল হবে। আজকের আদালত আমাদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে এবং নিম্ন আদালতের সম্পূর্ণ রায়কে সাসপেন্ড করেছে। একইসঙ্গে আগামী ৩ মার্চ নিম্ন আদালতের সেসব নথি আনার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছে। আর আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে স্থায়ী জামিন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, ১ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ড. ইউনূস গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান। সাজাপ্রাপ্ত অপর তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ চারজনকেই এক মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন একই আদালত।
২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর শ্রম ট্রাইব্যুনালে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। গত বছর ৬ জুন মামলার অভিযোগ গঠিত হয়। ২২ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় ৯ নভেম্বর। গত ২৪ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয়নি। গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি।
মন্তব্য করুন