অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:২৩ এএম
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বিশেষ সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম

‘দেশের জনগণ জ্বালানি সুবিচার নয় বরং অবিচারের শিকার’

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। ছবি: কালবেলা
অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। ছবি: কালবেলা

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম; জ্বালানি বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সাম্প্রতিক গতি-প্রকৃতি নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটির শেষ পর্ব প্রকাশ হলো -

কালবেলা: বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পলিসি কি কতিপয় মানুষ বা একটা বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিচ্ছে?

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম: আমরা পরিষ্কারভাবে এবং বারবার এ কথাই বলেছি। সরকার বলেছে, তারা এ খাত উন্নয়নে দেশি-বিদেশি ব্যক্তি খাত বিনিয়োগ আকর্ষণে সফল হয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। সেজন্য ‘দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ করে এ খাতে প্রতিযোগিতাবিহীন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। আসলে প্রতিযোগিতা তুলে দেওয়ায় অন্যায় ও অযৌক্তিক বিনিয়োগ ব্যয় ও মুনাফা বৃদ্ধির সুযোগ যেমন সৃষ্টি হয়, তেমন বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সে বিনিয়োগ করার সুযোগ পায়। আইনের মেয়াদ দফায় দফায় বৃদ্ধি অব্যাহত রেখে এ সুযোগ বছরের পর বছর অব্যাহত রাখা হয়েছে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একজন কাজ পেয়ে আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দেয়। তাতে ব্যয় মাল্টিপ্লাই হতে থাকে। আবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা কাজ শেষ করে না। বারবার সময় বৃদ্ধি করায়। বারবার সময় বাড়ায়, সঙ্গে ব্যয়ও বাড়ায়। এখানে যদি আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা বলি, প্রকৃতপক্ষে যত টাকায় ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব ছিল, তার থেকে তিন-চারগুণ বেশি ব্যয় হয়েছে।

কালবেলা: জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কি প্রভাব পড়ছে জনগণের ওপর? আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্লান্ট তৈরি করেছি, এটা তো দীর্ঘদিন আমাদের সুফল দেবে।

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম: বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি মানে সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি। আর এই মূল্যবৃদ্ধি ন্যায্যতার ভিত্তিতে যৌক্তিক পন্থায় করা হচ্ছে না। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে যে যেখানে যেভাবে পারছে পণ্য ও সেবার দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। সরকার বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম বেঁধে দেয়। কিন্তু সেই দামে বিক্রি হয় না। সরকার জ্বালানি খাতকে তার বড় আয় ও লাভের খাত হিসেবে দেখে। দেশের শিল্প ও কৃষি খাত যেভাবে জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতার শিকার এবং সরকার ভর্তুকি দেবে না বলে সেসব জায়গায় যেভাবে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ঘটানো হচ্ছে, তাতে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যেই চূড়ান্ত সর্বনাশের শিকার হতে হবে সরকার ও জনগণ উভয়েরই।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে। তাদের নির্মাণ ব্যয়ের সঙ্গে আমাদের নির্মাণ ব্যয় তুলনা করলে দেখা যায়, এ দুই ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য আকাশপাতাল। এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে আমরা অনুধাবন করতে পারি, জ্বালানির সুবিচার থেকে বাংলাদেশের মানুষ কতটা বঞ্চিত। আর এ সুবিচার বঞ্চিত করা বা হওয়ার মাত্রা পরিমাপের একটাই প্যারামিটার, তা হলো লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ও লুণ্ঠনমূলক মুনাফা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যয় ন্যায্য ও যৌক্তিক ব্যয় অপেক্ষা যতটা অধিক বৃদ্ধি করা হবে, ততটাই হবে লুণ্ঠনমূলক ব্যয়/মুনাফা। কিন্তু জ্বালানি সুবিচার বিবেচনা করার বিষয়টি একেবারেই সরকারের ভাবনাতে নেই। ফলে দেশের জনগণ জ্বালানির সুবিচার নয় বরং অবিচারের শিকার। তাই জ্বালানি সুবিচার সুরক্ষিত না হলে জনগণের সার্বিক অধিকার সুরক্ষিত হতে পারে না। সুতরাং বিদ্যুৎ সরবরাহে লুণ্ঠনমূলক ব্যয়বৃদ্ধিতে নিয়ামক হলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্লান্টে সুফল পাওয়া যাবে, এমন ধারণা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণ অবিচারের শিকার হচ্ছে। দেশের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে মানুষের খরচ বাড়ছে না, এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে না। আর এ খরচ বৃদ্ধি এবং মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে যেটা হচ্ছে তা হলো, জ্বালানি অবিচারেরই অভিঘাত। একমাত্র বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়া সরকারের আর কিছু বলার নেই। অথচ সে উৎপাদনক্ষমতার অর্ধেকেরও বেশি ব্যবহার হয় না। তাহলে আমি এ সেক্টরেরই একজন হিসেবে এর উন্নয়ন কীভাবে দেখব? দেশের জ্বালানি উন্নয়ন নিয়ে দুটি মিথ চালু রয়েছে। সেগুলো হলো—সরকার বলছে জ্বালানি খাতে বড় ধরনের উন্নয়ন হয়েছে আর এ সেক্টরের বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানি খাতের সর্বনাশ হয়েছে।

কালবেলা: দেশের বিদ্যুৎ খাতের এ সংকটের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারা এবং দেশের ব্যবসায়ী শ্রেণির নেক্সাসের কথা বলেন বিশ্লেষকরা। আপনি কী বলবেন?

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম: দেশের মানুষ সরকারেরই অংশ। আমি, আপনিও সরকারের একটি অংশ। সাংবিধানিকভাবে দেশের ভালো-মন্দের ব্যাপারে নাগরিকদেরও দায়দায়িত্ব রয়েছে। সরকার সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে গিয়ে যে কাজই করবে, তা কল্যাণকর বলে বিবেচিত হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত রয়েছেন যথা—একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার বা একজন ক্লার্ক সবাই এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত। ফলে তারা যদি তাদের দায়িত্বের অপব্যবহার করে থাকে, তাহলে সেই দায় সরকারের ওপরই পড়ে। সেরকমই একটি অবস্থার শিকার হচ্ছে দেশের বিদ্যুৎ খাত।

রাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগের সচিব বা অতিরিক্ত সচিব সরকারের যে-সব কোম্পানির চেয়ারম্যান বা যে-সব কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডের সদস্য, সেই সব কোম্পানির অসংগতির সমস্ত দায়-দায়িত্ব তাদের। আমরা যদি সরকার ও ব্যক্তি যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানী এশিয়াটিক অয়েল এর কথা বলি, তাহলে বলতেই হবে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগেই এই কোম্পানির বিরুদ্ধে কত বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়ে আছে। অথচ সেই বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন ওই বিভাগেরই একজন অতিরিক্ত সচিব। তিনি ওই কোম্পানির বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? বা সরকারের ওই সেক্টরের একজন অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কি ব্যবস্থা নিলেন? এমন সব প্রশ্নের জবাব একটাই, তা’হলো তিনি একদিকে সর্প হয়ে দংশন করেন, অন্যদিকে ওঝা হয়ে ঝাড়েন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভূমিকা যদি এমনই হয়, তাহলে মন্ত্রণালয় একটি সেক্টরকে কিভাবে সুরক্ষা দেয়?

ওইসব কর্মকর্তাদের এমন ক্ষমতা তাদেরকে এত বেশি বেপরোয়া করে তুলেছে যে, তাদেরকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ বা জবাবদিহির আওতায় আনা যাচ্ছে না। তারা মন্ত্রীর অগোচরে অবৈধভাবে মিটার ভাড়া বাড়িয়ে ভোক্তাদের নিকট থেকে অর্থ লুন্ঠন করার মত শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন। তাদের মধ্যে যদি ন্যূনতম দায়বদ্ধতা থাকতো, যদি তারা র‌্যাশনাল হতেন, যদি সততা এবং অসততার মানদন্ডে তাদের বিবেক তাদেরকে দংশন করতো, তাহলে তাঁরা অব্যশই বলতেন, “এই স্বার্থ সংঘাতের মধ্যে আমরা রাষ্ট্রের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারবো না।”

কালবেলা: জ্বালানি খাতে সরকারের যে নিজস্ব কোম্পানিগুলো রয়েছে সেগুলো ভূমিকা রাখতে পারছে না কেন?

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম: এলপিজি খাতে সরকারের নিজস্ব একটি কোম্পানি রয়েছে। সেই কোম্পানিকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে। এলপিজি ব্যবসাকে প্রমোট করার জন্য সরকারের জ্বালানি বিভাগ নগ্নভাবে নানা ধরনের জনবিরোধী পলিসি তৈরি করেছে। বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির হাতে এলপিজি খাত পুরোপুরিই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তা এখন দৃশ্যমান। যদি বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারি কোম্পানিকে বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে বাজারে প্রতিযোগিতায় রাখা হতো, যদি সরকার নিজের কোম্পানিকে শক্তিশালী করত, তাহলে এলপিজির বাজার অলিগোপলির শিকার হতো না। ভোক্তারাও লুণ্ঠনের শিকার হতো না। বিইআরসির নির্ধারিত দাম অপেক্ষা বেশি দামে ভোক্তাদের এলপিজি কিনতে হতো না।

জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রেও এই একই অবস্থা বিরাজ করছে। অর্থাৎ কয়লা, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের বাজারও ওলিগোপলির শিকার। সেখানেও ভোক্তারা লুণ্ঠনের শিকার। লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাবো, মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে জ্বালানি বিভাগের একেবারে মাঠ পর্যায়ের প্রায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসাধু ও দূর্নীতিগ্রস্ত। উন্নয়নে প্রতিযোগিতাবিহীন বিনিয়োগ ও গণশুনানী ব্যতিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় তারা অসাধূ ব্যবসাকে রক্ষা তথা পাহারা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত। এর থেকে ভিন্ন কোন কিছু বলার সুযোগ নেই।

কালবেলা: জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছি আমরা। সঠিক পরিকল্পনায় কি এ সংকট থেকে বেঁচে যাওয়া যেত বলে মনে করেন?

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম: দেশ গ্যাস সংকটে রয়েছে। সরকার যখন জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না এবং ঠিক যে সময় আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম সবচেয়ে বেশি তখন আমরা এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত কেন নিলাম? দৈনিক ৭৫০ এমএমসিএফডি এলএনজি গ্রিডে সরবরাহ ধরে ভর্তুকি এবং ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু সেই পরিমাণ এলএনজি আনা হয়নি। ভোক্তাদের জ্বালানি সংকট কমেনি। অথচ নির্ধারিত পরিমাণে এলএনজি সরবরাহ না করে, কম সরবরাহ করে বর্ধিত মূল্যহারে ভোক্তার কাছে থেকে ঠিকই গ্যাস বিল আদায় করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, বরাদ্দকৃত ভর্তুকির দরকার হয়নি, বরং কোনো কোনো বছরে রাজস্ব ৭-৮ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থেকে যায়। খেয়াল করলে সহজেই বোঝা যায়, বেশি দামে এলএনজি আমদানির পেছনে কারণ ছিল জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করা নয়, ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধি করা। সে কাজটি পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ অতি দক্ষতার সঙ্গে করেছে।

আমরা যদি এলএনজি না-ই আনব, তাহলে দাম যখন সবচেয়ে বেশি ঠিক তখন কেন আনতে গেলাম? গণশুনানিতে ভোক্তারা বলে এসেছেন, ‘আমরা অন্ধকারে থাকব, তবু এত দামে গ্যাস চাই না।’ তারপরও এত দামি এলএনজি আমদানির কথা বলে সেই বাড়তি দাম গ্যাসে সমন্বয় করে ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার বাড়ানো হয়েছে। অথচ গ্যাস সংকট তখনো ছিল, এখনো আছে। ভোক্তাদের সঙ্গে এমন প্রতারণা করার প্রয়োজন কেন হলো? সেই প্রশ্নের জবাব একটাই—মূল্যবৃদ্ধি।

যতক্ষণ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাদের জাবাদিহিতে বাধ্য করা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণ নিরাপদ নয়, সরকারও নয়। ঘুষের বিনিময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত গণ-কর্মচারীদের নিকট থেকে আগে অবৈধ স্বার্থ হাসিল করা হতো। এখন রাজনৈতিক ক্ষমতা দ্বারা সে-স্বার্থ হাসিল করা হয়। যে-সব সরকারি কর্মকর্তা আজ চাকরিতে ডুকছেন, তারা যদি এমন অবস্থার শিকার হন, তাহলে তারা কি সৎ কর্মকর্তা হিসেবে জনস্বার্থ সুরক্ষা করবেন? নাকি যে-সব কর্মকর্তা বিদেশে বেগমপাড়া গড়ে তুলেছেন, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন? এসব বিষয় এখন ভাবার সময় এসেছে। এসব ভাবনা না ভেবে যদি কোন পরিকল্পনা করি তাহলে কেবল বিদ্যুৎ সংকটই নয়, কোন সংকট থেকেই আমরা জাতিকে বাঁচাতে পারবো না।

কালবেলা: সরকার বলছে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রাইসিস তৈরি না হলে আমাদের বিদ্যুৎ খাতে ক্রাইসিস তৈরি হতো না?

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম: আমরা ভারত থেকে আদানির বিদ্যুৎ আমদানি করি। আদানির কাছ থেকে আরও বেশি বিদ্যুৎ কেনা হবে, বলা হচ্ছে। সেই বিদ্যুৎ কিনতে আরও বেশি ডলার লাগবে। ভারত থেকে আদানির বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে যদি ডলার সংকট হয়, আবার ডলার সংকটের কারণে আমার দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করতে না পারায় যদি সে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে পারি, তাহলে বিদ্যুৎ ক্রাইসিসের ব্যাপারে সরকারের ওই যুক্তি কি গ্রহণযোগ্য বলা যায়?

ডলারের দাম কেন বাড়লো? সেটার দায়বদ্ধতা কোথায়? অর্থনীতির বিশ্লেষকরা তো মনে করেন না যে ডলারের দাম বৃদ্ধি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। সরকার সুদ লেনদেনে নয়-ছয় পলিসি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুরো অর্থনীতিকে নয়-ছয় করে ফেলেছে। আজ পর্যন্ত বড় বড় ব্যবসায়ীদেরকে যে সকল সুবিধা দেওয়া হয়েছে, ছোট ছোট পুঁজি বিনিয়োগকারীরা তো সেই সুবিধা পায়নি। ব্যবসায়ীদেরকে ঢালাওভাবে সুযোগ-সুবিধা দিতে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে ফতুর করে ফেলা হয়েছে। সরকার ব্যাংক থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে টাকা নিতে গিয়ে টাকা ছাপানোর পরিমাণ ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে ফেলেছে। টাকার দাম কমেছে। ডলারের দাম বাড়েনি।

যেখানে আমরা জ্বালানির সংকটে রয়েছি, সেখানে আমরা আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ কেন কাটছাঁট করলাম না কেন? সরকার বলছে, সে জ্বালানি কিনতে পারছে না—ডলার নেই। সেই অবস্থায় গণ্ডায় গণ্ডায় ব্যয়বহুল উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হলো কেন? সরকারের আর্থিক চাহিদা বাড়ল কেন? সংকট মোকাবিলা করার ব্যাপারে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ব্যর্থতাই বিদ্যুৎ সংকটের অন্যতম কারণ।

কালবেলা: সরকারের রাজস্ব চাহিদা বাড়ানোর ফলেই কি অর্থনীতিতে সংকট ঘনীভূত হয়েছে?

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম: আজকে যারা বেসরকারি খাতে কাজ করে তাদের ৪/৫ বছর যাবৎ কোন ইনক্রিমেন্ট নেই। অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। ৭-৮ কোটি মানুষ যেখানে এরকম অবস্থার শিকার, সেখানে সরকারের লাগামহীন আর্থিক চাহিদা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা অর্থনীতিতে সংকট ঘনীভূত করেছে। এসব কথা কেউ বলেনি, তা নয়। কিন্তু কারোর কোন কথা শোনার দরকার হয়নি। দেশের শিক্ষিত ও বুঝদার ব্যক্তিদের কোন কথা স্বীকৃতি পায়নি না। তাহলে আজকের সংকটে নিয়ে আবার এ-সব কথা কেন? সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো অন্ধের মত কথা কেন বলে? এই সংস্কৃতি কেন তৈরি হল? তারা যদি জনগণকে ভয় না পায়, জনস্বার্থ সুরক্ষায় কাজ না করে, তাহলে মানুষ তাদেরকে পয়সা দিয়ে পুষবে কেন? বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোন না কোনভাবে এসব প্রশ্নের নিষ্পত্তি হতে হবে।

সরকার একটি প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের সর্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সেই ক্ষমতা বলে সরকার জনগণের স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণ করে। তাতে যদি সরকার কোনো কারণে বিভ্রান্তির শিকার হয়, তাহলে সেখানে জনগণ কথা না বললে, কে কথা বলবে? কথা না বললে তো আমি জনবান্ধব হলাম না। সেরকম একটি জায়গায় আমরা পৌঁছে গেছি, যেখানে মানুষকে কথা বলা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

কালবেলা: সম্প্রতি রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হতে যাচ্ছে, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে। এখন আমাদের বিদ্যুৎ খাত কেমন হবে?

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম: আমাদের বিদ্যুৎ উন্নয়ন পলিসি (যদিও বাস্তবে কোন পলিসি নেই) নির্ভর করছে ভারতের বিদ্যুৎ রপ্তানি পলিসির উপর। কিছুদিন আগে আমাদের বিদ্যুৎ খাতের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বললেন, ভারতের রিজার্ভ ক্যাপাসিটি তথা সারপ্লাস বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ৪০ শতাংশ বেশি। ২০০৯ সালের দিকে পরিকল্পনা কমিশন যখন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তৈরি করে, তখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার তৈরি করার দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়। আমি তখন ভারতের বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্লানটি রিভিউ করি। তাতে দেখা যায়, তারা ২০৩০ সাল নাগাদ ১৪ লক্ষ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করবে। অথচ তখন তাদের প্রয়োজন হবে কমবেশী ৭ লক্ষ মেগাওয়াট। অর্থাৎ ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২০৩০ সালে হবে প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণ।

২০২৩ সালে দেখা যায়, ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা চাহিদার তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশী। যারা ভারতের সাথে তুলনা করে আমাদের চাহিদার তুলনায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বেশী থাকা সঠিক মনে করেন, তাহলে বুঝতে হবে ভারতের বিদ্যুৎ উন্নয়ন পলিসির ব্যাপারে তাদের ধারণা কতটা সিমীত। আমাদের নীতি নির্ধারকরা ভাবেননি যে, ক্রস বর্ডার বিদ্যুৎ ট্রেডিং ভারত এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ভারত এককভাবে বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে চায়। ফলে ভবিষতে ভারতের আশপাশের দেশসমূহ ভারতের বিদ্যুৎ আমদানীকারক দেশে পরিণত হবে। আর এই পলিসি সামনে রেখেই ভারত তার বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্লান তৈরি করেছে।

আজ সাংবাদিকরা আমাকে বলেন, ভারত আমাদের বর্ডার এরিয়া জুড়ে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মান করছে। আর আমরা দেখছি, আমরা যতই ডলার সংকটে থাকি ক্রমান্বয়ে আদানির মতো কোম্পানিগুলোর কাছে আমাদের বিদ্যুৎ কেনার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ অচিরেই আমরা বিদ্যুৎ আমদানিকারক দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। ফলে পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হওয়ার সাথে পায়রার ২য় ইউনিট চালু হওয়ায় নিসঃন্দেহে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা আরো বাড়বে। তবে সেই সাথে বিদ্যুৎ আমদানী বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্প্লাস বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তাই বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যয়বৃদ্ধি হবে নিয়ন্ত্রণহীন। বিদ্যুৎ সংকট পরিস্থিতি আরো জটিল হবে।

কালবেলা: আমাদের তো বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্যাপাসিটি রয়েছে, তাহলে আমরা আমদানি কেন করব?

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম: আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা সারপ্লাস নিয়ে এতকিছু বলা হয় কিন্তু উৎপাদনক্ষমতা সারপ্লাস হলেও আমাদের কখনো সারপ্লাস বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা ছিল না। অর্থাৎ আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদনক্ষমতা বেশি হলেও উৎপাদনে সক্ষমতা নেই। শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা সারপ্লাস হলে কি বিদ্যুৎ রপ্তানি করা যায়? রপ্তানি করতে গেলে তার আগে কি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা লাগবে না? আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার মতো কখনোই আমরা সাশ্রয়ী পন্থায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করিনি। কারণ আমরা বিদ্যুৎ আমদানিকারক দেশে পরিণত হওয়ার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছি। খেয়াল করলে বোঝা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কৌশল গ্রহণ করায় এখন আমদানি গ্যাস, কয়লা ও তরল জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় আমদানি ব্যয় অপেক্ষা অধিক। আগামীতে এ অবস্থা বজায় থাকবে এবং আমরা অচিরেই বিদ্যুৎ আমদানি বাজারে পরিণত হব।

অতি জরুরী বিদ্যুৎ প্রয়োজন বলে আমরা তরল জ্বালানি দ্বারা হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি। বিদ্যুৎ সার্প্লাস ঘোষনা দিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিদ্যুৎ রপ্তানির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ-এক অভিনব তামাশা! অত্যন্ত বেশি ব্যয়ে উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ রপ্তানি হবে? কে কিনবে? কিনবে, যদি সরকার ভর্তুকি দেয়। সরকার দেশবাসীকে যতটুকু ভর্তুকি দেয়, তাদেরকে যদি তার চেয়েও বেশি ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করতে চায়, তখন হয়তো তারা কিনবে। সুতরাং আমার ভাবতে অবাক লাগে যে, এই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত কাদের নিয়ন্ত্রণে!

বিইআরসি’র গণশুনানিতে আমাকে অনেকেই বলতো, “আপনি তো এই সেক্টর নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। আপনার অবর্তমানে, আপনার পরে কে আসবে? কে এই কাজ করবে? কে কথা বলবে?” আমি তখন বলেছিলাম, “কথা বলার জন্য আগামীতে আর হয়তো কাউকেই দরকার হবে না।” আজ আমার মনে হচ্ছে, “এই কথাগুলোই হয়তো এই সেক্টর নিয়ে আমার শেষ কথা।” আমি তো কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে আমার দেশবাসীকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য কথা বলিনি। কিন্তু সরকারের পলিসি-প্লানিং তৈরির জায়গায় যারা ছিলেন, তারা সরকারকে কোন পথে কোথায় নিয়ে গেলেন? অবশ্যই দেশবাসী ও সরকারকে সেটিই বিশেষভাবে বোঝা দরকার।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি মানে সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি। আর এই মূল্যবৃদ্ধি ন্যায্যতার ভিত্তিতে যৌক্তিক পন্থায় করা হচ্ছে না। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে যে যেখানে যেভাবে পারছে পণ্য ও সেবার দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। সরকার বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম বেঁধে দেয়। কিন্তু সেই দামে বিক্রি হয় না। সরকার জ্বালানি খাতকে তার বড় আয় ও লাভের খাত হিসেবে দেখে। দেশের শিল্প খাত এবং কৃষি খাত যেভাবে জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতার শিকার এবং সরকার ভর্তুকি দেবে না বলে সে-সব জায়গায় যে-ভাবে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ঘটানো হচ্ছে, তাতে আগামী দুই তিন বছরের মধ্যেই চুড়ান্ত সর্বনাশের শিকার হতে হবে সরকার ও জনগণ উভয়েরই।

সাক্ষাৎকারটির আগের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

শ্রুতিলিখন – মুজাহিদুল ইসলাম

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে শিশুর মৃত্যু

গরমে অস্বস্তি, বৃষ্টি হতে পারে ঢাকায়

আজকের নামাজের সময়সূচি

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

আজ যেসব অঞ্চলে বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা

প্রভাবশালী প্রার্থীর পছন্দের প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগের অভিযোগ

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

জুমার দিন যেসব আমল করবেন

নির্বাচনী শোডাউনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যু 

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

১০

১ মণ ধানের দামেও মিলছে না দিনমজুর 

১১

বাংলাদেশে আসছেন কুরুলুস উসমানের নায়ক বুরাক

১২

সিলেটে ফের বিরতি ফিলিং স্টেশনে আগুন

১৩

এক হাজার সফল সার্জারি সম্পন্ন করেছে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল

১৪

আলুর হিমাগারে মিলল লাখ লাখ ডিম

১৫

শিক্ষার্থীদের বাস নিয়ে প্রোগ্রামে তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগ

১৬

মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

১৭

যুদ্ধ শেষে গাজায় যে পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র

১৮

দেড় শতাধিক লোকসহ টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ

১৯

স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে নাদিমের বাড়ি ৪৩ বছরের নারীর অনশন

২০
X