জাহিদ হাসান শাকিল
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তারেক রহমান : গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার অতন্দ্র প্রহরী

জাহিদ হাসান শাকিল। ছবি : সংগৃহীত
জাহিদ হাসান শাকিল। ছবি : সংগৃহীত

আজ ৩ সেপ্টেম্বর। কোটি কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস। দীর্ঘ ১৮ মাসের কারাবরণ শেষে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান জামিনে মুক্তি পান। এ মুক্তি আসে দেশের জনগণের তীব্র দাবির মুখে। এরপর থেকে দিনটি বিএনপি ও গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে তারেক রহমান কারামুক্তি দিবস হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে। এ দিনটি কেবল একজন নেতার মুক্তির স্মারক নয় বরং গণতন্ত্রের জন্য জনগণের সংগ্রামের প্রতীক।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বারবারই অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্বে আচ্ছন্ন হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে গণতন্ত্রকে বারবার বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে, কখনো সামরিক শাসনের মাধ্যমে, কখনো আবার নির্বাচনী কারচুপি ও প্রতিহিংসার রাজনীতির মাধ্যমে। এই দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার ভেতর থেকেই উঠে আসেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি কেবল একটি রাজনৈতিক দলের নেতা নন বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরীতে পরিণত হয়েছেন।

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির নিরঙ্কুশ বিজয়ের পেছনে তারেক রহমানের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৭ সাল থেকেই তিনি দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হন। সারা দেশের গ্রামগঞ্জে তৃণমূল পর্যায়ে সমাবেশ ও সাংগঠনিক সভার মাধ্যমে তিনি বিএনপির তৃণমূল ভিত্তি পুনরুজ্জীবিত করেন। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা তাকে দ্রুত জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে আসে। তবে ২০০১ সালের বিজয়ের পর তারেক রহমান দেশি-বিদেশি শক্তির নজরে পড়েন। বিশেষ করে বাংলাদেশে গড়ে ওঠা বহুমুখী ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে তার দৃঢ় জাতীয়তাবাদী অবস্থান অনেকের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আওয়ামী লীগও বুঝতে পারে, যদি তারেক রহমানকে থামানো না যায়, তবে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে তাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় নানা ষড়যন্ত্র।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা দখল করে। কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, মামলা বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই ৭ মার্চ ২০০৭ সালে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর শুরু হয় তার ওপর অমানবিক নির্যাতন। টানা ১৮ মাস কারাভোগে তার শারীরিক অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে ওঠে যে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে। তাদের রিপোর্টে বলা হয়, এই নির্যাতনের উদ্দেশ্য ছিল তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মোট ৮৩টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে ছিল দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং, অবৈধ সম্পদ, এমনকি চাঁদাবাজিরও অভিযোগ। কিন্তু অনুসন্ধান, তদন্ত এবং বিচার শেষে দেখা যায়, অধিকাংশ মামলা প্রমাণের অভাবে খারিজ হয়ে যায়। কয়েকটিতে তিনি খালাস পান। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই মামলাগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করে। এমনকি বিচারকদের ওপরও রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল, যার প্রমাণ হলো একজন বিচারকের রায় সরকারের পক্ষে না দেওয়ায় দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন।

মুক্তির পরও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান নিতে হলেও তিনি সেখান থেকেই দল পরিচালনা করেন। সরকার তার বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয়, গণমাধ্যমে ব্ল্যাকআউট আরোপ করে এবং তার বাকস্বাধীনতা হরণ করে। কিন্তু প্রবাস থেকেই তিনি বিএনপিকে সংগঠিত রাখেন এবং গণআন্দোলনের রূপরেখা দেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাস ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসানে গণঅভ্যুত্থান গড়ে ওঠে, যেখানে বিএনপি ছিল প্রধান শক্তি। তারেক রহমান প্রবাস থেকে আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দেন। তার আহ্বানে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী প্রাণ বিসর্জন দেন। এই আন্দোলনের ফলেই ১৬ বছরের দীর্ঘ দমন-পীড়নের অবসান ঘটে। তারেক রহমান প্রমাণ করেন, তিনি কেবল একটি দলের নয় বরং জনগণের নেতা।

তারেক রহমান আজ কেবল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নন বরং বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। ষড়যন্ত্র, মিথ্যা মামলা, কারাভোগ এবং দীর্ঘ প্রবাসজীবনের মধ্য দিয়েও তিনি যে অটল থেকেছেন, তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংগ্রামকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বর তার কারামুক্তি দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় অন্যায়, দমন-পীড়ন ও ষড়যন্ত্রের জালে বেঁধেও একজন জনপ্রিয় নেতাকে দমিয়ে রাখা যায় না। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে তারেক রহমানের ভূমিকা যে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হবে, সে বিষয়ে জনগণের মধ্যে এখন আর কোনো সংশয় নেই।

লেখক : জাহিদ হাসান শাকিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাগরে লঘুচাপের আভাস, রয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি

৩১ দফা নতুন বাংলাদেশ গঠনের রূপরেখা : আইয়ুব খান

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে পাকিস্তান-আফগানিস্তান

শিক্ষা ভবন অভিমুখে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ‘ভুখা মিছিল’ আজ

মা-ছেলে হত্যা, মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

পড়াশোনায় সাফল‍্য থাকবে সকালের যে ৫ অভ‍্যাসে

কচুরিপানায় মিলল মানুষের কঙ্কাল

ছাতিম ফুলের মোহনীয় ঘ্রাণে মেতে ওঠে প্রকৃতি

লোকাল পারচেজ বিভাগে নিয়োগ দিচ্ছে যমুনা গ্রুপ

১০

ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি পদে চাকরি দিচ্ছে আরএফএল গ্রুপ

১১

রাফাহ সীমান্ত বন্ধ করে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছেন নেতানিয়াহু

১২

১৯ অক্টোবর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৩

সালাউদ্দীন আলীকে গ্লোবাল হিউম্যান পিস ইউনিভার্সিটির ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান

১৪

আজ যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া

১৫

১৯ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

রোববার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৭

তারেক রহমানের ৩১ দফা রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রূপরেখা : আনিসুল হক

১৮

পর্তুগালে বাংলাদেশি প্রকৌশলীর মৃত্যু

১৯

সাত কলেজের প্রস্তাবিত কাঠামো নিয়ে সাবেক ইডেন শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ

২০
X