কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

উপজেলা নির্বাচন সরকারের আরেকটা ভাওতাবাজি : আমীর খসরু

জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবি : কালবেলা
জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবি : কালবেলা

উপজেলা নির্বাচন সরকারের আরেকটা ‘ভোটচুরির ভাওতাবাজি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

আমীর খসরু বলেন, ‘ওরা উপজেলা নির্বাচন দিয়েছে। যে দেশে ভোট নেই সেই দেশে ভোটে অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই। যেখানে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, যেখানে কোনো পার্টিসিপেশন নেই, সেখানে আবার কীসের ভোট? সুতরাং এই যে উপজেলা নির্বাচন, এটা দেশের মানুষকে আরেকটা ধাপ্পাবাজির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটা ভোটের নামে ভাওতাবাজি। ভোট বলে কিছু নেই এ দেশে। একটা ভোটচুরি প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত জাতিকে আজকে তারা (সরকার) জিম্মি করে রেখেছে।’

সরকারের এহেন অপকর্মের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর ‘ঐক্য অটুট’ থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করে আমীর খসরু বলেন, ‘আমাদের সুখবর হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ আজকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। আমরা যারা বিরোধী দলে আছি আমাদের ঐক্য অটুট আছে, বিএনপির ঐক্য অটুট আছে। এই ঐক্য ভাঙার চেষ্টার কোনো কিছু বাকি নেই। টাকা-পয়সা থেকে ভয়ভীতি, জেল-জুলুম, নিপীড়ন-নির্যাতন সব চেষ্টা করা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ধান ক্ষেতে ঘুমিয়েছে, বেড়িবাঁধে ঘুমিয়েছে কিন্তু নেতাকর্মীরা কমপ্রোমাইজ করেনি।’

‘আমরা ৩১ দফা ঐক্যবদ্ধভাবে দিয়েছি, এটা চলমান আন্দোলনের দফা অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সাম্য-মানবিক মর্যাদা, ন্যায় বিচার ইত্যাদি বিষয়ে আমরা এক হয়েছি। আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না। আমাদের এই আন্দোলন চলমান আছে,’ যোগ করেন তিনি।’

৭ জানুয়ারির ভোটে ৯৫ শতাংশ ভোটার না যাওয়া চলমান আন্দোলনে বিরোধী দলের ‘রাজনৈতিক সফলতা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৯৫ শতাংশ মানুষ ওই নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে যায়নি। এবার সেই চিন্তা থেকে সরকার ভোটারদের আনতে নতুন কৌশল নিয়েছে। এবার তারা চিন্তা করেছে যে- মানুষ নৌকাকে ভয় পায়, নৌকার কথা শুনলে বোধহয় ভোটকেন্দ্রে যাবে না; সেজন্য নির্বাচনে তারা এবার দলীয় প্রতীক বাদ দিয়ে দিয়েছে। অথচ তারাই স্থানীয় সরকার আইন করেছে নৌকা দিয়ে অর্থাৎ দলীয় প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করার জন্য। আইনটা কিন্তু বাতিল করেনি, আইন রেখে তারা এখন নৌকা প্রতীক নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছে না। কারণ ওরা দেখছে, বাংলাদেশের জনগণ নৌকা যেখানে আছে সেখানে নেই, তারা নৌকা বয়কট করেছে। তাই এই উপজেলা নির্বাচন আরেকটি ভাওতাবাজির নির্বাচন। ভোটচুরি প্রকল্পই তাদের ক্ষমতার উৎস, এই ভোটচুরির প্রকল্প তাদের ক্ষমতায় রাখার ব্যবস্থা করেছে।

আমীর খসরু বলেন, ‘সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ব্যাংক মার্জার (একত্রীভূত) করার। মার্জার তো কোনো সরকারের সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এটা ভেলেটনটারি সিদ্ধান্ত, এটা বাজারের সিদ্ধান্ত। এটা করতে শেয়ার হোল্ডারদের মতামত প্রয়োজন হয়। কিন্তু কী দেখা যাচ্ছে? শেয়ারহোল্ডারদের কোনো খবর নেই। তারা (সরকার) সিদ্ধান্ত দিচ্ছে মার্জার করতে হবে। যারা ব্যাংক লুটপাট করে খেয়ে ফেলেছে তাদের জন্যে এই মার্জার আরেকটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। যারা লুটপাট করে বাংলাদেশের সম্পদ নিয়ে গেছে, যারা ব্যাংকের আমানতের টাকা লুটপাট করেছে- তাদেরকে রক্ষা করার জন্য, তাদেরকে আরও সুবিধা দেওয়ার জন্য জোর করে এই একত্রীভূত করার প্রক্রিয়া সরকার নিয়েছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির উদ্যোগে ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশের দিনটি ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে প্রবাসী সরকার শপথ গ্রহণ করে। আলোচনা সভায় প্রজাতন্ত্র দিবসের দাবি উপস্থাপন করেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, যারা অন্যায়, জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলে- তাদের এ দেশে বসবাস করা সম্ভব নয়। এই জুলুমবাজ, দখলদার সরকারকে বিতাড়িত করতে না পারলে এ দেশে সাধারণ মানুষের বসবাস কঠিন হয়ে পড়বে। এই দেশ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলাম, এমন দৃশ্য এমন পরিবেশ দেখার জন্য নয়। গণতন্ত্র থাকবে না, সেজন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি; অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না, সেজন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি। এই কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না। আপনারা জেগে উঠুন-দেশকে বাঁচান, মানুষকে বাঁচান। এই গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াইকে এগিয়ে নিন, এদেরকে পরাজিত করুন।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, স্বাধীনতার পতাকা (একাত্তরের ২ মার্চ) দেখানো হয়েছে মানুষকে। এই পতাকা রক্ষা করবার জন্য লড়াই করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে। মানুষ যুদ্ধ করেছে এবং আমরা জিতেছি। আজো মানুষের মধ্যে বিক্ষোভের যে আগুন জ্বলছে, সেই আগুনকে ঠিকমতো গুছিয়ে সেটাকে একটা দাবানল তৈরি না করলে- বিক্ষোভকে আন্দোলনে রূপান্তরিত করা সম্ভব নয়। এটার জন্য কোনো হটকারী কর্মসূচির কথা আমি বলব না। কারণ হটকারিতা কোনোদিন গণতন্ত্রের জন্য সুখকর হয় না, সফলতার দিকে নিয়ে যায় না। কিন্তু গঠনমূলকভাবে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। যত দেরি হবে তত আমাদের জন্য ক্ষতি হবে।

জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারি পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির তানিয়া রব, মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, কে এম জাবির বক্তব্য রাখেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে বিএনপি সংকল্পবদ্ধ : মির্জা ফখরুল

সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ হচ্ছে!

৭০ বছর বয়সে প্রেমিকা খুঁজতে বিজ্ঞাপন, সপ্তাহে খরচ ৪৩ হাজার টাকা

সৌদি আরবে গৃহকর্মীর বাঁচার আকুতি

রেলের ভাড়া বৃদ্ধি সম্পূর্ণ জনস্বার্থবিরোধী : জাতীয় কমিটি

বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে কন্যাসহ গৃহবধূর অনশন

নারী উদ্যোক্তার বেডরুমে উড়ন্ত সাপ, অতঃপর...

ভুট্টা গাছ টানতেই বেরিয়ে এলো ৪৫ গোখরা সাপ

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত জানাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে রাস্তার ইট বিক্রির অভিযোগ

১০

হিটস্ট্রোকে মরছে গবাদিপশু-মুরগি, খামারিদের হাহাকার

১১

সাবেক বার্সা তারকাকে পেছনে ফেললেন লেভা

১২

ইসরায়েলিদের বাঁচাতে ফিলিস্তিনিদের কাছে দুই দেশের আকুতি

১৩

চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার

১৪

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পেছানোর নির্দেশ ইসির

১৫

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ দিনাজপুরের জনজীবন

১৬

তীব্র গরমে হাতপাখা বিক্রির হিড়িক

১৭

তাপপ্রবাহ আর লোডশেডিংয়ে জামালপুরে বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কা

১৮

লঙ্কান লিগে মুশফিক-তামিম!

১৯

৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আশঙ্কা, সতর্কসংকেত জারি

২০
*/ ?>
X