মহান রাব্বুল আলামিন একটি সময়কে আরেকটি সময়ের ওপর, একটি স্থানকে আরেকটি স্থানের ওপর, একটি মাসকে আরেকটি মাসের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। নিঃসন্দেহে বছরের শ্রেষ্ঠ মাস হচ্ছে মাহে রমজান। এ মাসটিতে আল্লাহ তার বান্দার আমল এবং দোয়ার মাধ্যমে তার ১১ মাসের সব ভুল-ত্রুটি তথা অপরাধ ক্ষমা করে দেন।
রমজান মাসে রয়েছে দোয়া কবুলের কয়েকটি বিশেষ সময়, সে সময়গুলোতে দোয়া করলে আল্লাহ বান্দার দোয়া ফেরত দেন না।
সুরা আল আহযানের ২১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, “অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।”
রমজান মাস রহমত বরকত মাগফিরাত ও নাজাত লাভের মাস। আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নেওয়ার মাস। যে যত বেশি চাইতে পারবে, আল্লাহ তাআলা তাকে তত বেশি দান করবেন।
আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ লাভের অতি মূল্যবান দুটি সময় আছে রমজান মাসে । আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ বান্দাকে যে সময় ফেরত দেন না। রমজানে এ সময়টিতে দোয়া করে কাঙ্ক্ষিত জিনিস লাভের সুর্বণ সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন রোজাদার।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কোন সময়ের দোয়া মহান আল্লাহ বেশি গ্রহণ করেন। জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন-
‘রাতের দুই-তৃতীয়াংশ শেষের দোয়া অর্থাৎ রাতের দুই ভাগ অতিক্রম করার পর যে দোয়া করা হয়।’
সে হিসেবে একটি সময় হলো-
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষিত রাতের দুই-তৃতীয়াংশের পরের সময় এটি। এ সময় দোয়া কবুলের জন্য বিশেষ সময়। এ সময়টি আল্লাহ তাদের চাহিদা পূরণের আশ্বাস দিয়ে ডাকতে থাকেন- - ‘কে আমাকে ডাকবে? যার ডাকে আমি সাড়া দেব।’
এ মুহূর্তে যে আল্লাহকে কোনো কিছু পাওয়ার জন্য ডাকবে এবং আহ্বান করবে আল্লাহ তাআলা তাকে চাহিদা মোতাবেক দান করবেন-
- ‘কে আমার কাছে কিছু চাইবে? যা আমি তাকে দান করব।’
আল্লাহ বান্দার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন- - ‘কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ সুতরাং ফজরের আগের (রাতের দুই-তৃতীয়াংশের পরের) সময়টি আল্লাহর কাছে-
এ সময়টিতে ‘আল্লাহ তাআলা সব সময় প্রথম আসমানে আসেন এবং বান্দাকে তাদের চাহিদা পূরণের আশ্বাস দিয়ে ডাকতে থাকেন। যারা এ সময়টিতে আল্লাহর কাছে কাঙিক্ষত জিনিস চায়, আল্লাহ তাআলা তাদের ডাকে সাড়া দেন এবং কাঙিক্ষত জিনিস দান করেন।
মনে রাখবেন, রমজানের শেষ রাতের কোনো আবেদন বিশেষ করে আল্লাহ অগ্রাহ্য করেন না। বান্দা যা চায় তাই কবুল করে নেন। তাই রমজানের শেষ রাতের গুরুত্ব অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।
শেষ রাতের দোয়ার পরপরই রোজার জন্য সেহরি গ্রহণ করা জরুরি। কারণ দিনভর রোজা রেখে কোরআন তেলাওয়াত, নামাজ পড়া এবং রোজগারের জন্য শক্তি সঞ্চার করতে সেহরি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও কল্যাণের। আর যারা সেহরি গ্রহণ করে ফেরেশতারা তার কল্যাণ ও মাগফিরাতে দোয়া করতে থাকেন। দ্বিতীয় সময়টি হলো-
ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে বান্দা রোজায় ক্লান্ত, পিপাসার্ত ও ক্ষুধার্থ থাকে। এ সময়টিতে ইফতার সামনে নিয়ে আল্লাহর কাছে বান্দার যে কোনো প্রার্থনাই কবুল হয়ে যায়।
এ সময় মানুষ দুর্বল ও মানুষের হৃদয় নরম থাকে। আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসায় হৃদয় থেকে আল্লাহর কাছে যে কোনো প্রার্থনাই কবুল হয়ে যায়। আল্লাহর মহব্বতে হৃদয় ভরপুর থাকে।
ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে বান্দা আল্লাহর হুকুম পালনে প্রচণ্ড ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় খাবার সামনে থাকা সত্ত্বেও খাওয়া থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের অপেক্ষা করতে থাকে। সে সময়টি আল্লাহর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং তা দোয়া কবুলের গুরুত্বপূর্ণ সময়।
মুসলিম ভাই-বোনদের কর্তব্য দোয়া কবুলের এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ দুটি সময় অবহেলায় ত্যাগ না করা। শেষ রাত তাওবা-ইসতেগফারে অতিবাহিত করা এবং সেহরি খাওয়া।
ইফতারের আগের মুহূর্তটিতে ইফতারি ও রান্না-বান্নাসহ সকল কাজ শেষ করে কিছু মুহূর্ত তাওবা-ইসতেগফারের সঙ্গে ইফতারের জন্য অপেক্ষা করা।
রমজানে অধিকাংশ মানুষ এই সময়টা ঘুমিয়ে থাকে, কিন্তু এ সময় দোয়া কবুল করানো, ক্ষমা ও আল্লাহর অনুগ্রহ লুফে নেওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ।
এ ছাড়াও দোয়া কবুলের জন্য অন্যতম সময় লাইলাতুল ক্বদর। শুধু রমজান নয়, বরং সারা বছরের মধ্যে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ রাত হলো লাইলাতুল ক্বদর। এ রাত দোয়া কবুলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ রাতে মাগরিব থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত অসংখ্য মানুষকে ক্ষমার ঘোষণা দেওয়া হয়। অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
পরিশেষে বলা যায়, রমজানে দোয়া কবুলের বিশেষ কিছু সময় থাকলেও সারা মাসজুড়েই চলে ক্ষমা এবং অনুগ্রহ দানের এক মহোৎসব। সুতরাং রমজানে সবসময় দোয়া ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে কাটানো উচিত। আসন্ন মাহে রমজানকে যথাযথভাবে দোয়া, ইস্তিগফার, কোরআন তেলাওয়াত এবং অন্যান্য নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন।
মন্তব্য করুন