প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডেতে বেশ কিছুদিন ধরেই ছন্দহীন বাংলাদেশকেই দেখছিল ক্রিকেট বিশ্ব। অন্যদিকে, দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের দ্বন্দ্বে দেশের ক্রিকেটের টালমাটাল অবস্থা। আগে থেকেই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নেই তামিম ইকবাল, চোটের কারণে প্রস্তুতি ম্যাচে নামা হলো না সাকিব আল হাসানেরও। দুজনের অনুপস্থিতি কোনো প্রভাবই ফেলল না। দারুণ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচে ৭ উইকেটের দাপুটে এক জয় পেয়েছে।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) গুয়াহাটিতে ৭ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে টাইগার। লঙ্কানদের দেয়া ২৬৪ রান তাড়ায় নেমে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৮ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় সাকিববিহীন বাংলাদেশ দল।
সর্বশেষ এশিয়া কাপে দুবারের দেখায় লঙ্কানদের কাছে পরাস্ত হতে হয়েছিল বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের আগে নিজেদের শেষবারের মতো ঝালিয়ে নিতে এসে কাঙ্ক্ষিত জয় তুলে নিয়েছে মিরাজ-লিটনরা। সাকিববিহীন ম্যাচে অধিনায়কত্ব পাওয়া মিরাজ আজ ব্যাটে-বলে দারুণ অবদান রেখেছেন। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের (৩২/১) পর ব্যাট হাতেও পেয়েছেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। তার আগে প্রতিভা দেখিয়ে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া তানজিদ তামিম ম্যাচটিতে সেঞ্চুরির আশাও জাগিয়েছিলেন। একইসঙ্গে রানে ফিরেছেন আরেক ওপেনার লিটন দাস। তিনিও দীর্ঘ সময় পর ফিফটি পেয়েছেন, যা মূল ম্যাচের আগে অনেকটা ফুরফুরে রাখবে বাংলাদেশকে।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে সাম্প্রতিক সময় ব্যাটিংয়ে ভোগা দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন লিটন-তানজিদ। মাত্র ২০.৪ ওভারে দ্রুতগতিতে ১৩১ রান তুলে নেন বাংলাদেশের নতুন ওপেনিং জুটি। ৫৬ বলে ১০ চারের মারে ৬১ রান করে দুশান হেমন্তকে ডিপ স্কয়ার লেগে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মাথিশা পাথিরানার হাতে উইকেট দিয়ে আসেন লিটন। এশিয়া কাপ থেকে টানা ফর্মহীনতায় ভোগা লিটনের এ ইনিংসটি বিশ্বকাপের মূল পর্বের আগে নিশ্চয়ই তার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে।
এদিকে অপরপ্রান্ত আগলে ধরে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে আরও ৫২ রানের জুটি গড়েন তরুণ ওপেনার তানজিদ। তাতে সহজ জয়ের পথেই হাঁটছিল বাংলাদেশ। ১৩৩ বলে যখন জয়ের জন্য মাত্র ৮১ রান দরকার তখন লাহিরু কুমারার বল পড়তে ভুল করে চারিথ আসালাঙ্কার হাতে ক্যাচ তুলে দেন তানজিদ। আউট হওয়ার আগে তিনি যা করে গেছেন তাতে বাংলাদেশের টপ অর্ডার নিয়ে যে দুশ্চিন্তা ছিল, তার অনেকটাই দূরে করে গেছেন।
তানজিদের বিদায়ের পর ক্রিজে এসে মিরাজকে সঙ্গ দিতে পারেননি তাওহীদ হৃদয়। গোল্ডেন ডাককে সঙ্গী করে দুনিথ ওয়েল্লাগের বলে কট বিহাইন্ড হয়েছেন তিনি। বাকি কাজটা মুশফিককে নিয়ে সেরে নিয়েছেন মিরাজ। চতুর্থ উইকেটে ৭৬ রানের জুটি গড়ার পথে ফিফটি তুলে নেন মিরাজ। ৬৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৬৭ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন তিনি।
তার আগে ১০ ওভার বল করে মাত্র ৩২ রান খরচায় ১ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন মিরাজ। সাকিবের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে ব্যাটে-বলে পারফরম্যান্স করে দলকে জিতিয়ে যোগ্য নেতৃত্বের প্রমাণ দিয়েছেন তিনি।
এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা। ৪৯.১ ওভার শেষে সবকটি উইকেট হারিয়ে তারা ২৬৩ রান সংগ্রহ করে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন পাথুম নিসাঙ্কা। এ ছাড়া ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ব্যাট থেকে আসে ৫৮ রান।
টাইগার বোলারদের মধ্যে শেখ মেহেদী হাসান ৩৬ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট তুলে নেন। এ ছাড়া একটি করে উইকেটের দেখা পেয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। কেবল উইকেটশূন্য ছিলেন তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ।
পায়ে চোট পাওয়ায় এ প্রস্তুতি ম্যাচে টাইগার শিবিরে ছিলেন না নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।মন্তব্য করুন