ফুটবল ইতিহাসে বল নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়—পেনাল্টির সময় দুই বা তিনবার ছোঁয়া হলো কি না, হাত লেগেছে কি না কিংবা অফসাইডে স্পর্শ হলো কি না—এসব নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে গিয়ে রেফারিদের হিমশিম খেতে হয় প্রায়ই। সেই বিতর্কের অবসান ঘটাতে কাতার থেকে নিউইয়র্কে উন্মোচিত হলো ২০২৬ বিশ্বকাপের অফিসিয়াল বল ‘ট্রায়োন্ডা’, অ্যাডিডাসের সর্বশেষ উদ্ভাবন, যেখানে যুক্ত হলো অত্যাধুনিক স্মার্ট চিপ প্রযুক্তি।
ট্রায়োন্ডার নকশা ও নাম তিন আয়োজক দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডাকে প্রতিনিধিত্ব করে। চার-প্যানেল নির্মাণের এই বলের প্রতিটি অংশে রয়েছে স্বতন্ত্র জাতীয় রঙ—নীল, লাল ও সবুজ। মিলিত হয়ে এগুলো তৈরি করেছে ত্রিভুজ প্রতীক, যা তিন দেশের ঐক্যকে নির্দেশ করে। বলের গায়ে যুক্তরাষ্ট্রের তারকা, কানাডার ম্যাপল লিফ এবং মেক্সিকোর ঈগল—এই প্রতীকগুলো খোদাই করা হয়েছে সূক্ষ্ম নকশায়। সোনালি রেখায় সাজানো পুরো বলটি যেন ট্রফির মাহাত্ম্যকেই তুলে ধরে।
কিন্তু আসল আকর্ষণ বলের ভেতরে। অ্যাডিডাস কানেক্টেড বল টেকনোলজির সর্বশেষ সংস্করণে যুক্ত হয়েছে পার্শ্ব-মাউন্টেড চিপ সিস্টেম, যেখানে 500Hz আইএমইউ মোশন সেন্সর বসানো হয়েছে বিশেষ স্তরে। এই চিপ মুহূর্তেই তথ্য পাঠাতে পারে ভিএআর রুমে, যা খেলোয়াড়দের অবস্থানগত ডেটা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মিলে অফসাইড সিদ্ধান্ত বা হ্যান্ডবল শনাক্ত করতে সাহায্য করবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। ফলে মাঠে সিদ্ধান্ত হবে আরও দ্রুত ও নির্ভুলভাবে।
বলটির সঙ্গে সমন্বয় করবে মাঠজুড়ে স্থাপন করা ৮ থেকে ১২টি উচ্চক্ষমতার ক্যামেরা। এভাবে প্রতিটি স্পর্শই ধরা পড়বে নির্ভুলভাবে। যদিও এতে জিপিএস নেই, তবে গোল লাইন টেকনোলজি সক্রিয় থাকবে আগের মতোই।
পারফরম্যান্সের দিক থেকেও ট্রায়োন্ডা আলাদা। গভীর সিম, খোদাই করা প্রতীক আর বিশেষ পৃষ্ঠ বলটিকে আকাশে উড়তে সাহায্য করবে স্থিতিশীলভাবে। অ্যাডিডাস ফুটবলের জেনারেল ম্যানেজার স্যাম হ্যান্ডি বলটির উন্মোচনে বলেন, ‘প্রতিটি খুঁটিনাটি এখানে গুরুত্ব পেয়েছে। খোদাই করা টেক্সচার, স্তরযুক্ত গ্রাফিক্স আর উজ্জ্বল রঙ বলটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।’
ইউরো ২০২৪-এর অফিসিয়াল বল ‘ফুসবাল্লিবে’ হাত ছোঁয়ার মতো সূক্ষ্ম স্পর্শ শনাক্ত করতে পারত। ট্রায়োন্ডা সেই সীমা আরও ছাড়িয়ে যাচ্ছে—এবার সিদ্ধান্তে রেফারিদের নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হবে বল নিজেই।
মন্তব্য করুন