ফুটবলের অন্যতম সেরা দেশ ইতালির টেনিসে সর্বশেষ সাফল্য এসেছিল কবে? উত্তরটা রীতিমতো অবাক করবে আপনাকে। ১৯৭৬ সালে আদ্রিয়ানো পানাত্তার ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের পর ইতালি আর কোনো গ্রান্ড স্লাম বিজয়ী পায়নি। এরপর অনেকে এসেছেন কেউই পারেনি অবশেষে পানেত্তার ৪৮ বছর পর ইতালির অপেক্ষার অবসান ঘটালেন ২২ বছর বয়সী ইয়ানিক সিন্নার। দারুণ এক কামব্যাকে রাশিয়ান টেনিস তারকা দানিল মেদভেদেভকে কাদিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা ইতালিতে নিলেন তিনি।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) রড লেভার অ্যারেনায় ধ্রুপদশীল টেনিসের প্রদর্শনী দেখিয়ে ৩ ঘণ্টা ৪৪ মিনিটের ফাইনালে ৩-৬, ৩-৬, ৬-৪, ৬-৪, ৬-৩ গেমে তৃতীয় বাছাই মেদভেদেভকে হারান চতুর্থ বাছাই সিন্নার। অথচ ম্যাচ শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পর মনে হচ্ছিল সবচেয়ে একপেশে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ফাইনাল হতে যাচ্ছে এটি। প্রথম দুই সেট মেদভেদেভের ফ্লাট হিটিং রিটার্নে রীতিমতো অসহায় দেখাচ্ছিল সিন্নারকে। ফলস্বরূপ দুই সেটই হারতে হয় তাকে। মনে হচ্ছিল তৃতীয়বারের চেষ্টায় মেদভেদভের অস্ট্রেলিয়া জয় সময়ের ব্যাপার। তখনই মনে হয় সিন্নারের মনে পড়ে যে তিনি হারতে আসেননি এখানে।
দারুণভাবে প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে প্রথমে দুই সেট জিতে সমতা আনেন এরপর শেষ সেটে রীতিমতো মেদভেদভকে উড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে নতুন রাজার মুকুট পরলেন সিন্নার।
২০২২ সালে দুই সেটে এগিয়ে থাকার পরেও নাদালের কাছে ম্যাচ হেরেছিলেন মেদভেদেভ। এবারেও হলো তাই। প্রথম দুই সেটে দুর্দান্ত খেলা এই তারকা শেষ তিন সেটে শক্তি হারিয়ে ফেললেন। একের পর এক লম্বা র্যালির খেলা চলল মেলবোর্নে।
আগেই নিজের সার্ভ আর ফোরহ্যান্ডে কারিশমা দেখিয়েছেন সিন্নার। এবার দেখালেন ধৈর্যের শক্তিটাও। ২৭ কিংবা ৩৯ শটের গেমগুলোকে নিজের করে নিয়েছেন অবলীলায়। শক্তির সঙ্গে সঙ্গে মনোবলটাও যেন হারিয়ে ফেললেন মেদভেদেভ। তাতে নিজেকে ফেরানোর সুযোগটাও আরও শক্তভাবে আঁকড়ে ধরেছেন সিন্নার।
সিন্নারের জন্য এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ছিল সবদিক থেকেই স্বপ্নের মতো। সেমিফাইনালে তিনি রীতিমতো উড়িয়ে দেন বিশ্বের এক নম্বর টেনিস তারকা ও আসরের ফেভারিট নোভাক জোকোভিচকে। ফাইনালেও দুই সেটে পিছিয়ে থেকেও টানা তিন সেটে সেই দাপট বজায় রেখে তুলে নেন অবিস্মরণীয় জয়। এরপর গ্যালারিজুড়ে তুমুল করতালি আর জয়ধ্বনির মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য হতবাক হয়ে যান তিনি।
আবেগ সামলে প্রতিপক্ষের সঙ্গে করমর্দন শেষে সিন্নার ছুটে যান কোচ ও পরিবারের সদস্যদের কাছে। সেখানেও আরেকদফা আবেগঘন মুহূর্তের অবতারণা হয়। তারপর তো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, যখন তার হাতে উঠল অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা। অপেক্ষা ঘোচালেন নিজ দেশের।
মন্তব্য করুন