বৈষম্যমূলক নীতি-আইন, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে গ্রামীণ নারীরা পিছিয়ে পড়ছে। পরিবারে মা এবং কন্যারাই বেশিরভাগ খাবার তৈরির কাজটি করেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, এ চিত্রটি বিশ্বব্যাপী। এমনকি মাঠে খাদ্য উৎপাদনের কাজেও নারীরা পুরুষের থেকে এগিয়ে আছে। অথচ, গ্রামীণ ১৩ শতাংশ নারী ভূমির মালিক এবং ৪-৫ শতাংশ নারীর সেই ভূমির ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ভূমির অধিকারে নারীদের এই দুর্বল পরিস্থিতির পেছনে রয়েছে পিতৃতান্ত্রিকতা, ভূমি স্বাক্ষরতার অভাব, ভূমি দস্যুদের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব, দূর্নীতি ইত্যাদি। তাই ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে গ্রামীণ নারী কৃষকের ক্ষমতায়ন অপরিহার্য বলে এক তৃণ মূল সংলাপে বক্তরা এসব বলেন।
শনিবার (২১ অক্টোবর) টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম লক্ষ্য ক্ষুধামুক্তি অর্জনে গ্রামীণ নারী ভূমি কৃষি অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে এএলআরডি তৃণমূল নারীদের সংলাপের আয়োজন করে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম লক্ষ্য ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ বিনিমার্ণে গ্রামীণ নারী কৃষকের ক্ষমতায়ন, অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে তৃণমূলের সংলাপে দেশের ২০টি জেলা থেকে নারী কৃষক, জেলেসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রধানেরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদনে পুরুষের থেকে নারীর অংশগ্রহণ এখন অনেক অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, নারীরা সরকারি সেবা সেভাবে পাচ্ছে না। তারা শ্রম দেয় বেশি কিন্তু মজুরি পান অনেক কম। নারীরা সব থেকে বেশি অবহেলিত। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত নারী সদস্যদেরকে অর্থও অন্যান্য সহায়তা বরাদ্দের ক্ষেত্রে, ক্ষমতা প্রদানের ক্ষেত্রে পুরুষের সমান অধিকার দিতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী জনগণকে সর্বাধিক ক্ষমতা দিতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে এএলআরডি’র কর্মসূচি সমন্বয়কারি মং সিং নিও বলেন, বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার কারণে কৃষিব্যবস্থা ধীরে ধীরে নারীর হাত থেকে পুরুষের হাতে চলে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ এ উৎপাদনশীল খাতে গ্রামীণ নারীর অবদান অ-আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির অংশ। ফলে, নারীর শ্রম অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা নেই বললেই চলে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন এএলআরডি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার সানজিদা খান রিপা। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ক্ষুধামুক্তি। ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে নারী কৃষকদের কৃষি বিষয়ক সরকারি পৃষ্ঠপোষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি খাসজমি বিতরণ করা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যমাত্রার বিশেষ করে নারী, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, পারিবারিক কৃষক, মৎস্যচাষী সকলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে ভূমিসহ অন্যান্য উৎপাদনশীল সম্পদ ও উপকরণ, বিপণন ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরী। কিন্তু, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিসংখ্যানে জানতে পারি বাংলাদেশে অপুষ্টির কারণে ১২ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের ১২ শতাংশের বয়স এবং উচ্চতার তুলনায় ওজন অনেক কম। পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন শিশু খর্বাকায়। ৫২ দশমিক৭ মিলিয়ন মানুষ বিভিন্নমাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন। এছাড়াও, কৃষি উৎপাদনশীলতার সাথে যুক্ত নারীরা পুরুষের সমান সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন