বিরোধপূর্ণ নাগোর্নো-কারাবাখের একটি তেলের ডিপোতে বিস্ফোরণ হয়ে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আরও প্রায় ৩০০ মানুষ আহত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আজারবাইজানের হাতে জাতিগত নিধনের ভয়ে দলে দলে কারাবাখ ছাড়ছে আর্মেনীয়রা। এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল সোমবার গভীর রাতে কারাবাখের আঞ্চলিক রাজধানী স্টেপানাকার্টের একটি তেলের ডিপোতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
কারাবাখের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, বিস্ফোরণস্থল থেকে ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর এ ঘটনায় আহত আরও সাতজন মারা গেছে। এ ঘটনায় আরও ২৯০ জন মানুষ আহত হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর।
কারাবাখ থেকে যারা গাড়ি করে আর্মেনিয়ায় চলে যাবে এই ডিপো থেকে তাদের তেল দেওয়া হচ্ছিল। তেল নিতে কয়েকশ মানুষ জড়ো হলে হঠাৎ সোমবার গভীর রাতে এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় আহতদের সহায়তায় ইয়েরেভান থেকে স্টেপানাকার্টের দিকে একটি হেলিকপ্টার রওনা হয়েছে। এতে চিকিৎসকদের একটি দল রয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী দেবেন।
এ বিস্ফোরণের পরপর নিকটবর্তী স্থানীয় হাসপাতালগুলো প্রস্তুত করে আজারবাইজান। এসব হাসপাতালে আহতদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হলেও তাতে রাজি হয়নি কারাবাখ কর্তৃপক্ষ।
কারাবাখ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে অঞ্চলটি আজারবাইজানের অংশ হলেও সেটি জাতিগত আর্মেনীয় অধ্যুষিত এলাকা। সেখানে ১ লাখ ২০ হাজার আর্মেনীয় বসবাস করেন। বিরোধপূর্ণ এ অঞ্চল নিয়ে এরই মধ্যে দুটি যুদ্ধে জড়িয়েছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া। প্রথমটি ১৯৯০-এর দশকে এবং দ্বিতীয়টি ২০২০ সালে। ২০২০ সালের যুদ্ধে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার আগে কারাবাখের বেশকিছু অঞ্চল নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় আজারবাইজান।
সম্প্রতি এ অঞ্চলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার সেখানে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেয় আজারবাইজান। সামরিক অভিযানের ২৪ ঘণ্টার মাথায় আর্মেনীয়রা আত্মসমর্পণ করলে কারাবাখের ওপর সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে ঘোষণা দেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। একই সঙ্গে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুদেশ। যুদ্ধবিরতির পরপর আর্মেনীয়দের অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা জানায় আজারবাইজান। তবে তাদের এমন আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারেননি কারাবাখের নেতারা।
রোববার কারাবাখ রিপাবলিকের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ডেভিড বাবায়ান বলেছেন, আমাদের জনগণ আজারবাইজানের অংশ হিসেবে থাকতে চায় না। ৯৯ শতাংশ মানুষ আমাদের ঐতিহাসিক ভূমি ছেড়ে চলে যেতে চায়।
এদিকে কারাবাখের আর্মেনীয়দের স্বাগত জানাতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে আর্মেনিয়া সরকার। তারা বলছে, ১৩ হাজারের বেশি শরণার্থী তাদের দেশে প্রবেশ করেছেন।