ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা হিসেবে পরিচিত ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিনসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি বেসরকারি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে প্রিগোজিনের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট হওয়া যায়নি। তিনি ছাড়াও দুর্ঘটনায় ওয়াগনারের গ্রুপের কমান্ডার ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা দিমিত্রি উটকিন ও উপপ্রধান ভ্যালেরি চেকালভ ছিলেন। দুর্ঘটনায় তারা সবাই নিহত হয়েছেন। ফলে এখন ওয়াগনারের ভবিষ্যত কী হবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
চলতি বছরের গত ২৩ জুন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে বিদ্রোহ করেন ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন। এরপর তিনি মস্কো অভিমুখে দখলের জন্য যাত্রা করেন। যদিও তা একদিনের মাথায় বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কের হস্তক্ষেপে বতিল করেন প্রিগোজিন। তবে এ বিদ্রোহের কারণে তার উপর চটে যান পুতিন। সময় করে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এ ঘটনার দুই মাস পর বিমান বিধ্বস্তে তার মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ অনেকে পুতিনকে অভিযুক্ত করছেন।
এদিকে পুতিনের এমন ঘোষণার পর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআই-এর পরিচালক উইলিয়াম বিল বার্নস প্রিগোজিনের মৃত্য নিয়ে সতর্ক করেন। এছাড়া তার বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বও সতর্ক করেছিল।
বিমান বিধ্বস্তের সময়ে ওয়াগনারের প্রধানের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা এখনো স্পষ্ট হওয়া যায়নি। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে বিদ্রোহের পর তাদের দমাতে নাটকীয়ভাবে কিছু করা হয়েছে। রাশিয়ার এ ভাড়াটে সেনাদল ইউক্রেন আগ্রাসনে বিরাট প্রভাব ফেলেছিল। যার প্রমাণ মিলেছে বিদ্রোহের কারণে এরপর থেকে রাশিয়ার ইউক্রেনে প্রভাব কমতে শুরু করেছে। এমনকি ওয়াগনার যুদ্ধ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে মস্কো ও ক্রেমলিন। তবে বিদ্রোহের পর নতুন করে অফ্রিকায় অপারেশন শুরু করে ওয়াগনার।
রাশিয়ার পর নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিষয়ে বিবৃতি দেয় ওয়াগনার। সম্প্রতি আফ্রিকা থেকে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় প্রিগোজিন রাশিয়ায় বিনিয়োগকারীদের আফ্রিকায় বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এছাড়া তাকে ক্ষমা করা হবে এজন্য নতুন করে ফেরার জন্য চেষ্টা করেন প্রিগোজিন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রাশিয়ার টিভের অঞ্চলে ওয়াগনারের শীর্ষ নেতাদের বহনকারী একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনার পেছনে রামিয়ার বিমান বাহিনীকে দায়ি করা হচ্ছে। বিমানটিতে প্রিগোজিন ছাড়াও এই বিমানের যাত্রী তালিকায় ছিলেন ওয়াগনারের গ্রুপের কমান্ডার ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা দিমিত্রি উটকিন, উপপ্রধান ভ্যালেরি চেকালভ, সের্গেই প্রপুস্টিন, ইভজেনি মাকারিয়ান, আলেকজান্ডার টোটমিন ও নিকোলে মাতুসিভ।
এসব ব্যক্তিদের মধ্যে দিমিত্রি উটকিন সাবেক জিআরইউ অফিসার ছিলেন। তিনি সিরিয়ার তেলের খনি পাহারার জন্য কাজ করেছিলেন এবং ওয়াগনার গ্রুপের সংঘবদ্ধ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ফলে এসব শীর্ষ নেতা নিহতের ফলে ওয়াগনার যেভাবে সংঘটিত হয়েছিল সেটি আর নেই।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, রাশিয়া থেকে বেলারুশে ওয়াগনারের ঘাঁটি স্থাপনের পর শত শত সেনা দেশ ত্যাগ করতে চেষ্টা করছেন। তাদের মধ্যে বেতন বৈষম্যসহ নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তাদের সেনাদের চার ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৫ হাজারের মতো সেনা কমে গেছে। এছাড়া গত মাস দুই ধরে রাশিয়ায় অনেকটাই নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল ওয়াগনার। পুতিনের সাথে বিরোধের ফলে তারা নতুন করে তাদের ছত্রছায়ার পথ খুঁজছিল। তবে শীর্ষ নেতাদের বিয়োগের পর আর এমন সক্রিয় থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমনকি প্রিগোজিনের জায়গায় নতুন কাউকে প্রতিস্থাপন করা হলে তিনিও তার মতো শক্ত ভূমিকা রাখতে পারবেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
রাশিয়ার পর অফ্রিকায় ওয়াগনারের শক্ত অবস্থানের জন্য ভূমিকা রেখেছিলেন প্রিগোজিন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা দেখভাল করছিলেন। কিন্তু ওই অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে প্রিগোজিনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল।
গত জুনে বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর সাবেক ভাইস-মার্শাল সিন বেল স্কাই নিউজকে বলেছিলেন, প্রিগোজিনকে ছাড়া ওয়াগনার কিছুই না। ফলে ওয়াগনার ছাড়া এটি টিকে থাকা কঠিন হবে। আমরা জানি এ বিদ্রোহের মাধ্যমে ওয়াগনারের সমাপ্তি হয়েছে।
মন্তব্য করুন