ইউক্রেনের গোপন এক অভিযানে রাশিয়ার সেতু, বিমানঘাঁটিসহ গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধাস্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বলা হচ্ছে, ইউক্রেনের সামরিক অভিযানের ইতিহাসের এটি ছিল সবচেয়ে বড়। হামলায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে খেলো করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি এবার আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারেন।
প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইসের এক বক্তব্যে এমন সতর্কতা উচ্চারিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছেন এবং তিনি ইউক্রেনকে নিশ্চিহ্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠতে পারেন।
ক্রিমিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে সংযোগকারী একটি সেতুতে ইউক্রেনের হামলার খবরের বিষয়ে রাইসের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল। রাইস এই হামলাকে অভূতপূর্ব বলে অভিহিত করেন। ফক্স নিউজের ‘ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ প্রোগ্রামে তিনি বলেন, এটি দেখায় ইউক্রেন পুতিনকে তার আগ্রাসনের জন্য জবাবদিহি করতে পারে।
বুধবারের (৪ জুন) প্রোগ্রামে তিনি বলেন, এটি কয়েকটি বিষয় দেখায়। প্রথমত, যুদ্ধের প্রকৃতি পরিবর্তন হচ্ছে। মানে, আপনি তুলনামূলকভাবে সস্তা ড্রোন দিয়েও সফল হতে পারেন। বিশেষ করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের রাশিয়ার কৌশলগত বিমান বহরের বিরুদ্ধে অভিযানটি হলে তো কথাই নেই। দ্বিতীয়ত, এটি দেখায় যে ইউক্রেনীয়রা তাদের প্রতিরক্ষা শিল্পে এই ড্রোন তৈরি এবং তাদের ব্যবহারের কৌশল খুবই উন্নত করছে। তৃতীয়ত, এটি একটি অবিশ্বাস্য গোয়েন্দা সাফল্য।
তিনি বলেন, ভ্লাদিমির পুতিন নিঃসন্দেহে এখন ভাবছেন এটি কী ভেতরের কোনো কাজ ছিল, বিশ্বাসঘাটকতা বা গুপ্তচরবৃত্তি? সম্ভবত আপনি রাশিয়ায় এবার ‘উইচ হান্ট’ দেখতে পাবেন। কারণ তিনি বোঝার চেষ্টা করবেন কে এটি ভেতর থেকে করেছে। সুতরাং এটি দেখায় যে, সামান্য সাহায্যে ইউক্রেনীয়রা ভ্লাদিমির পুতিনকে তার আগ্রাসনের জন্য মূল্য দিতে বাধ্য করতে পারে।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা সেবা (এসবিইউ) জানিয়েছে, মঙ্গলবার কের্চ সেতুতে প্রায় ২,৫০০ পাউন্ড বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আর সেটি করা হয় পানির নিচে থেকে।
ফুটেজে দেখা গেছে, সেতুর একটি স্তম্ভের কাছে কেন্দ্রীভূত বিস্ফোরণ ঘটে। মাত্র কয়েক দিন আগে ইউক্রেনের অপারেশন স্পাইডার’স ওয়েব নামে একটি সমন্বিত ড্রোন হামলার পর অতর্কিত বিস্ফোরণটি ঘটে। ড্রোন হামলায় রাশিয়ার গভীর অভ্যন্তরে পাঁচটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে পার্ক করে রাখা রাশিয়ার শক্তিশালী বোমারু বিমান এবং নজরদারি বিমানগুলো ধ্বংস হয়। যদিও সুস্পষ্ট কোনো তথ্য এখনো জানা যায়নি।
রাইস উল্লেখ করেন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের অধীনে তিনি দায়িত্ব পালনের সময় থেকে পুতিনের আচরণ আরও অস্থির হয়ে উঠেছে। তিনি ইউক্রেনকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করার জন্য তার অটল সংকল্পে অটুট।
রাইস বলেন, তিনি আগের চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি সবসময় খুব নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তি ছিলেন। ভুল বুঝবেন না, তিনি কখনো জেফারসনীয় গণতন্ত্রী ছিলেন না। তিনি সবসময় একজন স্বৈরাচারী ছিলেন। তিনি সবসময় একজন সাম্রাজ্যবাদী ছিলেন, কিন্তু এখন তার মধ্যে কিছু একটা আরও প্রবলভাবে কাজ করছে। তাতে মনে হয়, ইউক্রেনকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তিনি মরিয়া।
মন্তব্য করুন