ভারতীয় বিমানবাহিনী রাজস্থানে পাকিস্তান-ভারত আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখা বরাবর বিশাল এক সামরিক মহড়া শুরু করতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার (৬ মে) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই মহড়া বুধবার রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার ভোর ৩টা পর্যন্ত চলবে।
ভারতীয় বিমানবাহিনী বলছে, তারা একটি পূর্বপরিকল্পিত নিয়মিত প্রশিক্ষণ মহড়া পরিচালনা করতে যাচ্ছে। মহড়া চলাকালীন সীমান্তের কাছাকাছি বিমানবন্দরগুলোতে উড্ডয়ন ও অবতরণ সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে বলেও তারা জানিয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, এটি একটি পূর্বনির্ধারিত নিয়মিত প্রশিক্ষণ অনুশীলন হলেও, কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার পরবর্তী উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে এই মহড়াকে অনেকেই শক্তি প্রদর্শনের বার্তা হিসেবে দেখছেন।
খবরে বলা হয়, এই সামরিক মহড়ার পাশাপাশি দেশজুড়ে প্রায় ৩০০টি স্থানে ‘সিভিল ডিফেন্স’ বা বেসামরিক প্রতিরক্ষা অনুশীলনও শুরু হয়েছে—যা ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর প্রথমবার দেখা যাচ্ছে। এই ধরনের মহড়া মূলত সেইসব এলাকায় হচ্ছে যেখানে সেনাঘাঁটি, তেল শোধনাগার, পারমাণবিক কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো রয়েছে।
এর আগে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে এক সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মত বৈঠক করেছেন। সূত্রের খবর অনুযায়ী, পহেলগাম হামলার পর প্রতিক্রিয়া নিয়ে নানা স্তরে আলোচনার অংশ হিসেবে এইসব উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হচ্ছে।
এদিকে পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা সোমবার সফলভাবে ‘ফাতাহ’ নামের একটি দেশীয়ভাবে তৈরি ভূমি-থেকে-ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে যার পাল্লা ১২০ কিমি পর্যন্ত। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের দাবি, এই মিসাইল পরীক্ষা তাদের ‘যুদ্ধের কার্যক্ষমতা যাচাইয়ের’ অংশ ছিল এবং এটি ‘এক্সারসাইজ ইন্ডাস’ নামের একটি সামরিক মহড়ার অন্তর্ভুক্ত।
এই মহড়ার নামকরণ নিজেই একটি বার্তা বহন করছে বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ দিল্লি সম্প্রতি ইন্দাস পানি চুক্তি স্থগিত করায় ইসলামাবাদ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় এবং একে ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ বলেও অভিহিত করে।
এদিকে ভারতও একাধিক মিসাইল পরীক্ষা করেছে। দেশটি সম্প্রতি একটি উন্নত প্রযুক্তির পানির নিচে স্থাপিত মাইন পরীক্ষা করেছে, যা জাহাজের শব্দ, চৌম্বকীয় ও চাপ সিগন্যাল শনাক্ত করতে সক্ষম। পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার মাত্র পাঁচদিন পর ভারতও একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছিল।
উল্লেখ্য, ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটক নিহত হন। এই ঘটনায় ভারত পাকিস্তানের ওপর দায় চাপাচ্ছে। অন্যদিকে পাকিস্তান অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করছে— ভারত সরকার নিজেই এই ‘ফলস ফ্লাগ’ হামলা চালিয়েছে।
মন্তব্য করুন