জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জেরে তৈরি উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, দেশটির তিন বাহিনী- স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী সমন্বিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথমবার তিন বাহিনী একযোগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিল।
সেনাবাহিনীর বিবৃতি অনুযায়ী, এই অভিযান চালানো হয়েছে সুনির্দিষ্ট জঙ্গি ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে, যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনা ও পরিচালনা হচ্ছিল। বিবৃতিতে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে- এই হামলায় কোনো পাক সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানা হয়নি। অত্যন্ত সংযত থেকে নিশানা বেছে নিয়ে ও পরিকল্পিতভাবে এই অপারেশন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে দাবি ভারতের।
ভারতীয় সামরিক সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানে এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। অপারেশনে ধ্বংস করা হয়েছে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি, যার মধ্যে রয়েছে জেইশ-ই-মহম্মদের বাহাওয়ালপুরের সদর দপ্তর এবং লস্কর-ই-তৈয়েবার মুরিদকির ঘাঁটি। তিন বাহিনীই ব্যবহার করেছে আধুনিক প্রিসিশন স্ট্রাইক অস্ত্র, কামিকাজে ড্রোন এবং লয়টারিং অ্যামিউনিশন- এমন সব প্রযুক্তি যা লক্ষ্যে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়।
সূত্র জানায়, এই পুরো অভিযানটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে চালানো হয়। রাতভর তিনি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন এবং পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রেখেছেন। অপারেশনের পরপরই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল মার্কিন এনএসএ এবং পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিওকে অবহিত করেন।
ভারত বলছে, এই অভিযান পেহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক জঙ্গি হামলার প্রত্যুত্তর। সেই হামলায় নিহত হন ২৬ নিরীহ মানুষ, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এরপরই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন- এই হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ সে জবাবই বহন করে এনেছে।
প্রসঙ্গত, কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে সম্প্রতি ওই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করছে ভারত। অন্যদিকে পাকিস্তান হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তবে উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের একাধিক শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সেনারা। এ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। অন্যদিকে, ভারতীয় হামলাকে ‘বিনা প্ররোচনায় কাপুরুষোচিত’ বলে আখ্যা দিয়েছে পাকিস্তান। তারা পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করেছে।
জিও নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাল্টা হামলায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) পাঁচটি যুদ্ধবিমান, একটি ড্রোন এবং একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর ধ্বংস করেছে পাকিস্তান। নিরাপত্তা সূত্রের খবর অনুসারে, বার্নালা সেক্টরে পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘনকারী একটি ভারতীয় ড্রোন পাকিস্তান সেনাবাহিনী গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত দেশের নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া উত্তর ভারতগামী ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন