জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জেরে তৈরি উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে বুধবার ভোররাতে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারতীয় সামরিক সূত্র জানিয়েছে, দেশটির তিন বাহিনী- স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী সমন্বিতভাবে এ অপারেশন চালিয়েছে। পাকিস্তানে এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’।
অপারেশনের পর এর বিস্তারিত তুলে ধরেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। বুধবার (৭ মে) ভোরে চালানো এই অভিযান নিয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্রিফ করেন তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে কর্নেল কুরেশি ছাড়াও অংশ নেন আরেক নারী কর্মকর্তা উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এবারই প্রথমবার দেশটির কোনো বড় সামরিক অভিযানের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন কোনো নারী সেনা অফিসার।
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে তাদের দৃঢ় বক্তব্য কেবল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ়প্রতিজ্ঞতাই নয়, বরং সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের ক্রমবর্ধমান শক্তির প্রতিফলনেরই প্রকাশ।
কে এই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি?
কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘কোর অব সিগন্যালস’-এর একজন দক্ষ ও সম্মানিত কর্মকর্তা। তিনি ভারতের প্রথম নারী সেনা কর্মকর্তা হিসেবে বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় একটি ভারতীয় সেনা দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
২০১৬ সালে তিনি ‘এক্সারসাইজ ফোর্স ১৮’ নামে ভারতের আয়োজিত বৃহত্তম সামরিক মহড়ায় নেতৃত্ব দেন, যেখানে ১৮টি দেশের সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ ছিল। সেখানে কুরেশি ছিলেন একমাত্র নারী কমান্ডার।
গুজরাটের বাসিন্দা কুরেশি বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। তার পরিবারে সামরিক ঐতিহ্য রয়েছে — তার দাদা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন এবং তার স্বামী মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রির একজন কর্মকর্তা।
তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেছেন, যার মধ্যে ২০০৬ সালে কঙ্গোর মিশনে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। কুরেশির মতে, এসব মিশনে তার দায়িত্ব ছিল মানবিক সহায়তা ও সংঘর্ষপূর্ণ অঞ্চলে যুদ্ধবিরতির পর্যবেক্ষণ করা।
তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘দেশের জন্য কঠোর পরিশ্রম করা উচিত — এটি একটি গর্বের মুহূর্ত।’
অপারেশন সিঁদুর
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটক নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং এর প্রতিশোধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান চালায়। অভিযানে পাকিস্তান ও পিওকে-তে অবস্থিত ৯টি অবকাঠামোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়।
ওই সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করে এবং একাধিক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যার মধ্যে ইন্দাস পানিচুক্তি স্থগিতকরণ এবং সার্ক ভিসা অব্যাহতি স্কিমের আওতাধীন সব পাকিস্তানি নাগরিকের ভিসা বাতিল এর মত পদক্ষেপ।
মন্তব্য করুন