কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের কেনার চেষ্টা, কারা আছে পেছনে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি গোপন লোভনীয় প্রস্তাব পৌঁছে যায় হামাসের কাছে। ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি গোপন লোভনীয় প্রস্তাব পৌঁছে যায় হামাসের কাছে। ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা গোপনে ত্যাগ ও নিরস্ত্রীকরণের জন্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাসকে দুই বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

লোভনীয় এই প্রস্তাবে ছিল হামাস গোষ্ঠীর পরিবারসহ নিরাপদে বিদেশে চলে যাওয়ার সুযোগও। কিন্তু একবাক্যে সেই ‘লোভনীয়’ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন হামাসের শীর্ষ নেতারা।

এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় শুধু সামরিক অভিযান নয়, চালাচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধও। হামাসকে নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়ে এখন অর্থের মোহ দেখিয়ে সংগঠনটির অভ্যন্তরে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এর পেছনে কাজ করছে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু বিতর্কিত রাষ্ট্র।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি গোপন প্রস্তাব পৌঁছে যায় হামাসের কাছে। বলা হয়, নিরস্ত্রীকরণের পর যদি সংগঠনটির নেতারা যুদ্ধ ত্যাগ করে পরিবার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান, তাহলে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মূলত এটি ছিল এক প্রকার আত্মসমর্পণের বিনিময়ে মোটা অর্থের প্রস্তাব।

এই প্রস্তাবের টার্গেটে ছিলেন গাজার প্রতিরোধের তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতা—মোহাম্মদ সিনওয়ার, মোহাম্মদ শাবানেহ ও আজ আল দিন আল হাদ্দাদ। এদের প্রত্যেকেই প্রতিরোধ সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।

মোহাম্মদ সিনওয়ার, শহীদ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই, গাজার প্রতিরোধ নেতৃত্বে রয়েছেন। ইসরায়েল বহুবার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, ঘোষণা করেছে মাথার দামও। শাবানেহ চারটি ব্যাটালিয়নের কমান্ডার, যিনি নিজের সন্তানদের হারিয়েও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর আল-হাদ্দাদ ৭ অক্টোবরের ঐতিহাসিক হামলার আগের দিন যোদ্ধাদের সম্মুখ প্রতিরোধে ডাক দিয়েছিলেন।

তাদের সামনে এই প্রস্তাব তুলে ধরা হয়—চুপচাপ চলে যান, সংগঠনকে নিষ্ক্রিয় করে দিন, বিনিময়ে পেয়ে যাবেন বিলিয়ন ডলারের জীবন। কিন্তু প্রত্যুত্তর আসে একবাক্যে—আমরা বিক্রি হই না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা বুঝতে পারছে, শুধু গোলাবারুদ দিয়ে এই প্রতিরোধ দমন করা সম্ভব নয়। তাই চলছে ‘সফট টার্গেটিং’—মনস্তত্ত্ব, পরিবার, নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎকে হাতিয়ার করে যোদ্ধাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা।

এখানে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, জড়িত রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু বিতর্কিত দেশও, যারা পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের কৌশলের অংশীদার। তাদের উদ্দেশ্য, হামাস, ইসলামিক জিহাদসহ অন্যান্য প্রতিরোধ সংগঠনের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ঐক্য ভাঙা।

হামাসের এক মুখপাত্র বলেন, এই প্রস্তাব শুধু আমাদের আত্মার অবমাননা নয়, এটি আমাদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে অসম্মান করার ষড়যন্ত্র। আমাদের অস্ত্র আমাদের গর্ব, আত্মরক্ষা আর স্বাধীনতার প্রতীক। এটা বিক্রি হয় না।

গাজার জনগণ বলছেন, এই প্রস্তাব আসলে দখলদারদের ভয় এবং হতাশার বহিঃপ্রকাশ। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন অর্থের মাধ্যমে প্রতিরোধ ভাঙার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই কৌশল তাদের মনোবল ভাঙতে পারছে না, বরং আরও চেতনাসম্পন্ন করে তুলছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট জানায়, কে এই প্রস্তাবের অর্থায়ন করছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে এতে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে ধারণা করছে তারা।

উল্লেখ্য, যুদ্ধ এখন আর শুধু বুলেট আর বোমার নয়। এটি এক মনস্তাত্ত্বিক সংঘর্ষ—যেখানে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ‘আত্মা’ কেনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু ইতিহাস বলছে, স্বাধীনতার আন্দোলনে বিশ্বাসী যোদ্ধাদের আত্মা কখনো বিক্রি হয় না।

সূত্র : ওয়াইনেটনিউজ.কম

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আসিফ মাহমুদের ফেসবুক পেজ রিমুভ করল মেটা

প্রাকৃতিকভাবে শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ানোর সহজ ৭ উপায়

নতুন বছরে বড় পদক্ষেপ নিলেন কিম জং উন

জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়েতে বিএনপির পরিচ্ছন্নতা অভিযান

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে যা বললেন খায়রুল বাসার

তেঁতুলিয়ায় হাড় কাঁপানো শীত, বিপর্যস্ত জনজীবন

লঞ্চ-বাল্কহেড সংঘর্ষ, প্রাণে বাঁচলেন সহস্রাধিক যাত্রী

গাজীপুরে ভয়াবহ আগুন 

এসএসসি পাসেই ওয়ালটনে কাজের সুযোগ, আবেদন যেভাবে

যাত্রীবাহী দুই লঞ্চের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৪

১০

ফের প্রেমে পড়লেন বিল গেটসকন্যা

১১

৪০ দিনের বেশি নাভির নিচের লোম পরিষ্কার না করলে নামাজ হবে কি?

১২

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : ঐক্য ও গণতান্ত্রিক প্রত্যয়ের বার্তা

১৩

নাইজেরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক প্রাণঘাতী হামলা

১৪

দস্যু আতঙ্কে পেশা বদলাচ্ছেন বনজীবীরা

১৫

মেক্সিকোতে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১০

১৬

প্রথমবার একসঙ্গে শাহরুখ-রজনীকান্ত

১৭

জুমাবারে মসজিদে সামনের কাতারে কি জায়গা জুড়ে রাখেন, যা বলছে ইসলাম

১৮

ইয়েমেনে সৌদি-সমর্থিত বাহিনীর মধ্যে নতুন দ্বন্দ্ব

১৯

মনটা দেশে পড়ে থাকে: কেয়া পায়েল

২০
X