মিসরের রেড সি উপকূলীয় শহর শারম এল-শেখে গাজা যুদ্ধের অবসান ও বন্দি বিনিময় নিয়ে পরোক্ষ আলোচনায় বসেছে ইসরায়েল ও হামাস। সোমবার (৬ অক্টোবর) থেকে এ আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে মিসরের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংযুক্ত সংবাদমাধ্যম ‘আল কাহেরা নিউজ’।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার আলোকে বন্দি ও আটক ব্যক্তিদের বিনিময়ের জন্য প্রাথমিক শর্ত তৈরি নিয়ে আলোচনায় বসেছেন দুপক্ষের প্রতিনিধিরা। আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে মিসর ও কাতার।
একজন মিসরীয় কর্মকর্তা জানান, সোমবার বিকেলে শারম এল-শেখে এই বৈঠক শুরু হয়। আলোচনায় ইসরায়েলি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির শীর্ষ আলোচক রন ডারমার, আর হামাসের পক্ষে নেতৃত্বে রয়েছেন জ্যেষ্ঠ নেতা খালিল আল-হাইয়া।
মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ‘আল-কাহেরা নিউজ’ জানিয়েছে, আলোচনার শুরুতে আরব মধ্যস্থতাকারীরা হামাস প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে তারা ইসরায়েলি দলের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন। দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বসবেন বলে জানা গেছে। আলোচনায় পরবর্তীতে যোগ দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারও।
হামাস জানিয়েছে, আলোচনার মূল ফোকাস থাকবে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ নিয়ে। এতে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহার ও বন্দি বিনিময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাস তিন দিনের মধ্যে অবশিষ্ট ৪৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে—যার মধ্যে প্রায় ২০ জন এখনো জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বিনিময়ে তারা অস্ত্র ত্যাগ করবে এবং গাজার প্রশাসনিক ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই আলোচনা ‘মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ হবে’, যদিও হামাসের কিছু কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো লাশ পাওয়া না গেলে জিম্মিদের শনাক্ত করতে সময় লাগতে পারে।
এদিকে, আলোচনার দিনই গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির নির্দেশ সত্ত্বেও ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি কাঠামো ১৯৭০-এর দশক থেকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’
তিনি এই বক্তব্য দেন ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের বার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে, যে যুদ্ধের মাধ্যমে মিশর সিনাই উপদ্বীপ পুনরুদ্ধার করেছিল—যেখানেই বর্তমানে আলোচনার শহর শারম এল-শেখ অবস্থিত।
মন্তব্য করুন