দীর্ঘ একমাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধরত ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। অঞ্চলটিতে স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের নির্মূলে চলমান অভিযানে সাফল্যের দাবি করে আসছে নেতানিয়াহু সরকার। যদিও নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব কখনোই দেয় না তেলআবিব। এরই মধ্যে মঙ্গলবার নতুন করে হামাসের সদরদপ্তর হিসেবে পরিচালিত একটি বিশেষ টানেল ধ্বংসের দাবি করেছে ইসরায়েল। বলা হচ্ছে এই টানেল থেকেই গত ৭ অক্টোবরের নজিরবিহীন হামলা পরিচালনা করে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার রাজধানী গাজা সিটিতে অবস্থিত হামাসের একটি সামরিক কমান্ড সেন্টারের নিচে এই বিশেষ টানেলটি অবস্থিত। টানেলটি দখলে অংশ নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনীর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৪০১ ও গিভাতি ইউনিটের সেনারা। বলা হচ্ছে হামাসের এই বিশেষ টানেলটি ইসরায়েলের কিরিয়া সামরিক সদরদপ্তরের নিচে অবস্থিত আইডিএফের টানেলের মতোই বিস্তৃত ও সাজানো।
ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, বিশেষ এই টানেলটি মাটি থেকে প্রায় ৩০ মিটার নিচে অবস্থিত। ওপর থেকে নিচে নামতে ব্যবহার করা হয় সাতজনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি লিফট। ধারণা করা হচ্ছে টানেলটিতে গাজার হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ দেইফ লুকিয়ে ছিলেন।
জানা যায়, হামাসের বিশেষ এই টানেলে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, এয়ার কন্ডিশনার ও অন্যান্য ভূগর্ভস্থ মিনি কমান্ড সেন্টারের তুলনায় আরও উন্নত যোগাযোগের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এমনকি এই টানেলে বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও যুক্ত ছিল দাবি করে ইসরায়েল। আইডিএফ ডিভিশন ১৬২ এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইতজিক কোহেন বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামাসের সামরিক ক্ষমতাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে কাজ করে যাচ্ছে।
মঙ্গলবারের অভিযানে হামাসের সমস্ত দূরপাল্লার কর্নেট অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করছে ইসরায়েলি বাহিনী। যদিও হামাসের কাছে এখনও স্বল্পপাল্লার রকেট-চালিত-গ্রেনেড লঞ্চারগুলোর একটি বড় মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
২০১৪ সালে গাজা আক্রমণের সময় ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের টানেলগুলোতে প্রবেশে পথ ধ্বংস করলেও এবার পুরো টানেল ব্যবস্থাকেই গুঁড়িয়ে দিতে চাইছে। যদিও এখন পর্যন্ত গাজার মাত্র ৩০ শতাংশ টানেল ব্যবস্থা ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানায় আইডিএফ। ইসরায়েলে সেনাবাহিনী মূলত তিনটি লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়। যার প্রথমটি হামাস যোদ্ধাদের নিমূল দ্বিতীয়টি হামাসের টানেলগুলো ধ্বংস ও তৃতীয়টি গোষ্ঠীটির হাতে বন্দি সব ইসরায়েলির মুক্ত করা।
এবারের যুদ্ধে টানেল ধ্বংসে রোবটসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব মাধ্যমে টানেল শনাক্তের পর দ্বিতীয় ধাপে একজন কর্নেল পদমর্যাদার একজন কমান্ডারের নির্দেশে টানেলে প্রবেশ করছে ইসরায়েলি সেনাসদস্যরা।
মন্তব্য করুন