বিশ্বজুড়ে চরম উত্তেজনা ও সংঘাতপূর্ণ সময়ের মধ্যে আগামী শুক্রবার ঘোষণা করা হবে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার। এ বছর এই পুরস্কার কে পাবেন, কার নামের সঙ্গে যুক্ত হবে এই সম্মাননা তা নিয়ে আলোচনা নিতান্তই কম নয়। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও নোবেল শান্তি পুরস্কার দাবি করে বসেছিলেন।
তবে এক বিষয় প্রায় নিশ্চিত— ট্রাম্প এ পুরস্কার পাচ্ছেন না। তিনি যতই নিজেকে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে দাবি করুন না কেন, বিশেষজ্ঞদের মতে নরওয়ের নোবেল কমিটি অন্তত এ বছর তাকে বেছে নেবে না।
নরওয়ের রাজধানী অসলোতে স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টা) বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে নোবেল কমিটি।
বিশ্বের সবচেয়ে অস্থির সময়
বিশ্ব এখন এমন এক অস্থির সময় পার করছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের চেয়েও জটিল। সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘাত–তথ্যভাণ্ডার অনুযায়ী, ১৯৪৬ সালের পর থেকে কখনোই একসঙ্গে এত বেশি সশস্ত্র সংঘাত চলেনি, যতগুলো ২০২৪ সালে সক্রিয় ছিল।
গাজা থেকে ইউক্রেন, আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল থেকে মিয়ানমার— প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয় চলমান। এই বাস্তবতায় ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
ট্রাম্পের দাবি ও বিশেষজ্ঞদের মত
ট্রাম্প বহুবার বলেছেন, তিনি ‘কমপক্ষে আটটি সংঘাতের অবসান ঘটিয়েছেন’ এবং তাই নোবেল পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এই দাবিকে হাস্যকর বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন। সুইডেনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পিটার ভ্যালেনস্টিন বলেন, ‘না, ট্রাম্প এ বছর নোবেল পাচ্ছেন না। হয়তো ভবিষ্যতে, যদি তার উদ্যোগগুলো বাস্তব কোনো শান্তির রূপ নেয়।’
তবে আপাতত ট্রাম্পের পক্ষে যুক্তি দেখানোর মতো কোনো বাস্তব অর্জন নেই। বরং তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি এবং আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি তাকে শান্তির চেয়ে সংঘাতের প্রতীক করে তুলেছে।
নোবেলের মূল দর্শনের সঙ্গে অসামঞ্জস্য
অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার বলেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার আলফ্রেড নোবেলের সেই উদ্দেশ্যের প্রতীক— যেখানে জাতির ভ্রাতৃত্ব, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও নিরস্ত্রীকরণকে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু ট্রাম্পের নীতিগুলো ঠিক বিপরীত দিকে গেছে।
তিনি বলেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে নানা আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সংস্থা থেকে প্রত্যাহার করেছেন, একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, এমনকি ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকিও দিয়েছিলেন। নিজের দেশে প্রতিবাদ দমনে সেনা মোতায়েন করেছেন, মতপ্রকাশ ও একাডেমিক স্বাধীনতার ওপরও আঘাত হেনেছেন।
নোবেল কমিটির দৃষ্টিভঙ্গি
নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির চেয়ারম্যান ইয়োরগেন ওয়াতনে ফ্রিডনেস বলেন, ‘আমরা কেবল কোনো ব্যক্তির বক্তব্য নয়, তার সামগ্রিক ভূমিকা ও অর্জন দেখি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— তিনি বাস্তবে শান্তির জন্য কী করেছেন।’
অর্থাৎ, কেবল ঘোষণা নয়, কার্যকর উদ্যোগই নোবেল পাওয়ার মূল শর্ত।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কারা এগিয়ে?
এ বছর মোট ৩৩৮ ব্যক্তি ও সংস্থাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যদিও প্রথা অনুযায়ী নোবেল কমিটি এই তালিকা ৫০ বছর গোপন রাখে। বিশ্বজুড়ে রাজনীতিবিদ, সংসদ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আগের বিজয়ীরাই কেবল মনোনয়ন দিতে পারেন।
২০২৪ সালে শান্তি পুরস্কার গিয়েছিল জাপানের ‘নিহোন হিদানকিও’ সংস্থার হাতে— যারা পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধে কাজ করে আসছে।
এ বছর বিশেষজ্ঞদের মতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন, সুদানের ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস, যারা যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত মানুষদের সাহায্যে প্রাণ ঝুঁকিতে কাজ করছে; প্রয়াত রুশ নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া, যিনি স্বামীর মানবাধিকার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন; এছাড়াও সম্ভাবনায় আছে ইউরোপের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা অফিস ফর ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (ওডিআইএইচআর)।
মন্তব্য করুন