নির্বাচনের দিন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিলেন। এরপর ব্যালট পেপার ভোট বাক্সে ফেলে আসার আগেই আপনার হাতের কোনো একটি আঙুলে লাগিয়ে দেওয়া হলো ভোটের কালি।
ঘন নীল রঙের এই ভোটের কালি আলাদা বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে সবার আগে যেটি লক্ষণীয়, সেটি হচ্ছে- এই কালি আপনার হাতে লাগা মানেই আপনি প্রাপ্তবয়স্ক।
১৮ বছর হওয়ার আগে আপনি ভোট দিতে পারার কথা না। আর ভোট দিতে না পারলে এই বিশেষ কালির দেখাও পাবেন না আপনি।
বিশ্বের অনেক দেশের নির্বাচনেই একই ব্যক্তির একাধিক ভোট দেওয়া ঠেকাতে ভোটের কালির ব্যবহার রয়েছে। জালভোট ঠেকাতে প্রাথমিকভাবে স্বল্প আয়োজনে এবং স্বল্প খরচের মধ্যে এই কালির বিকল্প নেই বললেই চলে। কখনো কী মনে প্রশ্ন জেগেছে, এই কালি কোত্থেকে এলো? এই কালির আলাদা বৈশিষ্ট্যই বা কী?
জানা যায়, ভোটের এই কালির উৎপত্তি হয়েছে ভারতে। বর্তমানে ভারতে শুধু মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড ভার্নিশ লিমিটেড ভোটের কালি প্রস্তুত করে থাকে। কোম্পানিটি ছিল মহীশুরের রাজাদের প্রতিষ্ঠিত। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর কর্ণাটক সরকার এ কোম্পানি অধিগ্রহণ করে নেয়।
ভারতের ডিডি নিউজকে মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড ভার্নিশ লিমিটেড জানিয়েছে, ভারতের চলতি নির্বাচনেও ভোটের কালি সরবরাহ করেছে তারা। এবারের নির্বাচনের জন্য প্রায় ২৬.৫ লাখ ফিয়াল বা ছোট বোতল তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি বোতলে রয়েছে ১০ মিলি কালি।
এ কালির বিশেষত্ব কী? কেন ভোটের সময় এই কালি ব্যবহার করা হয়? দেখা গেছে, এই কালি আঙুলে একবার লাগালে অন্তত ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ওঠে না। আর নখের কিউটিকল অর্থাৎ নখের চারপাশের নরম চামড়ায় লাগলে থেকে যায় অন্তত দুই থেকে চার সপ্তাহ।
মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড ভার্নিশ লিমিটেড কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানির শুধু দুজন সিনিয়র কেমিস্ট এ কালির ফর্মুলা জানতে পারেন। এই গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় কারণ, কেউ যেন এই কালি তুলে ফেলার উপায় আবিষ্কার করতে না পারে। এই দুজন কেমিস্টের কেউ অবসর নিলে তারা তাদের বাছাই করা উত্তরসূরিকে কালির ফর্মুলা জানিয়ে যান।
বর্তমানে মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড ভার্নিশ লিমিটেডের উৎপাদিত এ ভোটের কালি কানাডা, ঘানা, নাইজেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মালদ্বীপসহ ২৫টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন