কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় সংকটে মার্কিন ডলার

মার্কিন ডলার। ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন ডলার। ছবি : সংগৃহীত

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিশ্ববাজারে মার্কিন ডলারের ঐতিহাসিক পতন ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোর মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মান কমেছে ১০ শতাংশেরও বেশি- এমন বড় ধরনের দরপতন এর আগে দেখা গিয়েছিল ১৯৭৩ সালে, যখন যুক্তরাষ্ট্র স্বর্ণমান থেকে সরে আসে।

তবে এবারের প্রেক্ষাপট ৭০-এর দশকের চেয়ে ভিন্ন। এবার ডলারের পতনের মূলে রয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী অর্থনৈতিক নীতি, বিশেষ করে শুল্ক আরোপ, এককেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি এবং ক্রমবর্ধমান সরকারি ঋণ। এর ফলে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রতি আস্থার ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের চালু করা বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যে শুল্কনীতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা এবং সরকারি ব্যয়ের লাগামহীনতা- সব মিলে ডলারের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্বে আস্থার সংকটও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।

ডলারের মান কমে যাওয়ায় মার্কিন নাগরিকদের বিদেশ সফরের খরচ বেড়ে গেছে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি বিনিয়োগও কমে যাচ্ছে, এমন এক সময়ে যখন দেশটি আরও বেশি ঋণ নিতে চাইছে।

তবে দুর্বল ডলার মার্কিন রপ্তানিকারকদের জন্য কিছু সুবিধাও এনেছে। কারণ ডলার সস্তা হলে মার্কিন পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়। তবে আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক অর্থনীতিতে চাপ রয়ে গেছে।

বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসন কিছুটা নীতিগত নমনীয়তা দেখালেও ডলারের মান ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে। অথচ শেয়ারবাজার এবং বন্ডের বাজারে ইতিবাচক গতি দেখা যাচ্ছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের বৈদেশিক মুদ্রা গবেষক স্টিভ ইংল্যান্ডার বলেন, ‘ডলার শক্তিশালী কি না, সেটাই মুখ্য নয়। আসল প্রশ্ন হলো, বিশ্ব ডলারের ভূমিকাকে কীভাবে দেখছে।’

ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর বিনিয়োগকারীরা ধারণা করেছিল, তার প্রশাসন ব্যবসাবান্ধব হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেবে। সে কারণে ডলারের চাহিদা বাড়ার আশা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটা।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের সময় ডলার সূচক সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছলেও এরপর থেকেই ডলারের অবনমন শুরু হয়। ব্যবসাবান্ধব আশার জায়গা থেকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা দেয় মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ সুদের আতঙ্ক।

২ এপ্রিল ট্রাম্প এক ঘোষণায় একাধিক দেশের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেন, যেটি ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। এতে শেয়ারবাজার, বন্ড ও ডলারের বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়।

এই পরিস্থিতি শুধু ডলারের দুর্বলতা নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্ব, আর্থিক নীতি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গভীর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের পতন সাময়িক নাও হতে পারে, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে।

সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা কতটা উপযোগী, ভাবার অনুরোধ তারেক রহমানের

বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

শাহজালালে বোয়িং বিমানে লাগেজ ট্রলির আঘাত

আখতারকে রংপুর-৪ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

মধ্যরাতে বরখাস্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার

‘একসঙ্গে সমুদ্রে নেমে তো গোসল করতে পারব না’

জুলাই যোদ্ধার তালিকায় এক ব্যক্তির নাম ২ জায়গায়

বিএনপির অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনায় মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ

১০

রাজধানীতে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে লায়ন্স ক্লাবের খাবার বিতরণ

১১

জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদের মতবিনিময় / নির্বাচনী জোট গঠনে একমত

১২

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসার সুপার কারাগারে

১৩

তারেক রহমান নেতৃত্ব না দিলে জুলাই আন্দোলন সফল হতো না : মুরাদ

১৪

চট্টগ্রাম নগরীতে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার

১৫

‘প্রেমে ব্যর্থ হলে বাথরুম পরিষ্কার করি’

১৬

মেয়ের জন্য চিপস আনতে গিয়ে প্রাণ হারান মোবারক

১৭

১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় সংকটে মার্কিন ডলার

১৮

তারেক রহমান জুলাই বিপ্লবের মূল নেতৃত্বে ছিলেন : অধ্যাপক মোর্শেদ

১৯

তারা ভেবেছে, নারীঘটিত বিষয় নিয়ে প্রচারে আমার ভোট কমে যাবে : আমির হামজা

২০
X