কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৫:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যেভাবে হত্যা করা হয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামকে

নিউইয়র্ক পুলিশে কর্মরত ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দিদারুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত
নিউইয়র্ক পুলিশে কর্মরত ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দিদারুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের ব্যস্ত এলাকায় সোমবার সন্ধ্যায় ঘটে যায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। ‘৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউ’ নামের একটি ৪৪ তলা ভবনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে চারজনকে হত্যা করেন এক বন্দুকধারী। নিহতদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম (৩৬)। পরে নিজেও আত্মহত্যা করেন ওই বন্দুকধারী।

ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যায় নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের কমিশনার জেসিকা এস. টিশ জানান, হামলাকারীর নাম শেন ডেভন তামুরা (২৭)। তিনি লাস ভেগাসের বাসিন্দা এবং নেভাডা অঙ্গরাজ্যের অস্ত্র লাইসেন্সধারী। শেনের বিরুদ্ধে আগে থেকে মানসিক সমস্যার ইতিহাস থাকলেও তার এই ভয়াবহ হামলার সঙ্গে মানসিক অসুস্থতার সরাসরি কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করা যায়নি।

কীভাবে ঘটল হত্যাকাণ্ড

সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে একটি কালো রঙের বিএমডব্লিউ গাড়ি থামে নিউইয়র্কের পার্ক অ্যাভিনিউতে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে হামলাকারী শেন হাতে একটি এম৪ রাইফেল নিয়ে প্রবেশ করেন ভবনটিতে। লবিতে ঢুকে প্রথমেই লক্ষ্য করেন বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামকে, যিনি সেদিন ব্রঙ্কসের ৪৭ নম্বর প্রিসিঙ্কটে ডিউটির বাইরে থাকলেও ভবনটিতে কাজ করছিলেন। বিনা বাক্যব্যয়ে ঠান্ডা মাথায় দিদারুলকে গুলি করেন শেন।

এরপর এক নারীকে গুলি করেন, যিনি একটি পিলারের আড়ালে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। লবির মধ্যেই গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে যান হামলাকারী। নিরাপত্তা ডেস্কে পৌঁছে একজন সিকিউরিটিকে লক্ষ্য করে গুলি করেন, পরে আরেকজন পুরুষকেও গুলি করেন তিনি। তবে তখনই একটি লিফট থেকে নেমে আসা এক নারীকে অক্ষত অবস্থায় ছেড়ে দেন।

পরবর্তী পর্যায়ে হামলাকারী লিফটে উঠে ৩৩তম তলায় যান। সেখানে রুডিন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির অফিস অবস্থিত। সেখানেই আরেক নারীকে গুলি করে হত্যার পর নিজ বুকের মধ্যে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন শেন তামুরা।

শোকস্তব্ধ নিউইয়র্ক, বেদনায় বাংলাদেশ

নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস এই হামলাকে ‘ঘৃণ্য ও জঘন্য’ উল্লেখ করে বলেন, ‘দিদারুল ছিলেন এই শহরের প্রকৃত প্রতিনিধি। তিনি ছিলেন একজন সৎ, নিবেদিতপ্রাণ এবং সাহসী পুলিশ অফিসার।’

নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘দিদারুল তার দায়িত্ব পালনের সময় নিজেকে ঝুঁকির মুখে ফেলেন এবং নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। ঠান্ডা মাথায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি হিরো ছিলেন এবং হিরো হিসেবেই বিদায় নিয়েছেন।’

দিদারুল ইসলাম নিউইয়র্ক পুলিশের একজন দায়িত্বশীল ও প্রশংসিত সদস্য ছিলেন। তিনি ২০২১ সালে পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। কর্মরত ছিলেন ব্রঙ্কসের ৪৭ নম্বর প্রিসিঙ্কটে। তার দুই সন্তান রয়েছে এবং তার স্ত্রী বর্তমানে আট মাসের গর্ভবতী। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তারা তৃতীয় সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষায় ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের পর পুরো ভবন লকডাউন করা হয় এবং চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই ভয়াবহ ঘটনা কেবল নিউইয়র্ক নয়, বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি ও মানবতাপ্রেমী মানুষদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে।

সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৩০ জুলাই : আজকের নামাজের সময়সূচি

খালি পেটে যে খাবার বয়ে আনতে পারে বিপদ

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিলেন ২ বাংলাদেশি

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্কবিষয়ক বৈঠক চলছে

নিজের বিয়ে আটকাতে প্রধান শিক্ষকের কাছে আবেদন

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদেরের পদ স্থগিত

লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে তিস্তার পানি

বাঙলা কলেজ সাংবাদিক সমিতির ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

ছারছীনা পীরকে তারেক রহমানের ‘সালাম’

ড্যাবের ৮ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বিএনপির

১০

বাংলাদেশে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে হানডা

১১

পুলিশের ১১ কর্মকর্তাকে বদলি

১২

বিএনপি নেতা রকিবুল ইসলাম বকুলের রোগমুক্তি কামনায় দোয়া

১৩

সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য, আছে শর্ত

১৪

সত্য বললে আর মামলা-নির্যাতন হবে না : আমিনুল হক

১৫

খুলনার ভিডিও নিয়ে শ্যামনগরে চিকিৎসকদের নামে অপপ্রচারের অভিযোগ

১৬

মিরসরাইয়ে বিএনপি-যুবদলের শীর্ষ পাঁচ নেতা বহিষ্কার

১৭

ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী-ভোটাররা যা করতে পারবেন, যা পারবেন না

১৮

বিসিসিআই অফিসে ৮ লাখ টাকার জার্সি চুরি, গার্ড গ্রেপ্তার

১৯

‘জুলাই সনদ’ ২ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির

২০
X