আর্থিক সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টিতে প্রথমবারের মতো দুর্বল ৪ ব্যাংককে সবল ব্যাংকগুলো থেকে নিয়ে দেওয়া হয়েছে ৯৪৫ কোটি টাকা সহায়তা। ধাপে ধাপে এসব ব্যাংককে ৬ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে। তারল্য পাওয়া ব্যাংকগুলো হচ্ছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, আস্থা সংকটের কারণে এই চার ব্যাংক সমস্যার মধ্যে রয়েছে। যে সহায়তা দেওয়া হয়েছে, তা খুবই নগণ্য। আস্থা ফেরানো গেলে ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আর শিখা জানান, সিটি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৩০০ কোটি টাকা ধার পেয়েছে। সিটি ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকও সমপরিমাণ অর্থ পেয়েছে।
অন্যদিকে বেঙ্গল কমার্স ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা পেয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। তবে টাকার পরিমাণ জানাননি মুখপাত্র। এ ছাড়া, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী তারল্য সহায়তা পেয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। দুর্বল একটি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বুধবার দুপুরের পর তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাড়পত্র পেয়েছেন। তবে টাকা বুঝে পেতে কিছুটা সময় লাগছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গতকাল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে সিটি ব্যাংক ২০০ কোটি, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৫০ এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক দিয়েছে ৫০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা পাবে। আর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে সিটি ব্যাংক ৩০০ কোটি এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক দিয়েছে ৫০ কোটি টাকা। মোট পেয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি কয়েক ধাপে ২ হাজার কোটি টাকার ধার সুবিধা পাবে। শরিয়াহভিত্তিক গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ২৫ কোটি টাকা ধার দিয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক। ছোট ব্যাংক হওয়ায় গ্লোবাল ইসলামীকে মোট ৫০০ কোটি টাকার ধার দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা ধার দিয়েছে সিটি ব্যাংক, ৫০ কোটি দিয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ২০ কোটি বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক। সব মিলিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক পেয়েছে ২৭০ কোটি টাকা। ব্যাংকটিকে মোট ২ হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়ার কথা রয়েছে। এসব ব্যাংককে দেওয়া তারল্যের সমন্বিত অঙ্ক ৯৪৫ কোটি টাকা। সিটি ব্যাংক ৭০০ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১৫০ কোটি, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৫০ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ২৫ কোটি এবং বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০ কোটি টাকা ধার দিয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, সবল ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ দুর্বল ব্যাংক দিতে ব্যর্থ হলে, সেই টাকা তিন দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ফেরত দেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে আরও জানা যায়, ধারের টাকা কোনো ব্যাংক ঋণ হিসেবে বিতরণ করতে পারবে না। দুই ব্যাংকের সমঝোতার ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির মানে হলো, কোনো কারণে কোনো ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই টাকা দেবে। আপাতত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি টাকা না দিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে ধারের ব্যবস্থা করছে। অর্থাৎ বাজারের টাকা এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে যাবে। ফলে মূল্যস্ফীতিতে বাড়তি প্রভাব পড়বে না।
সংকটে পড়া সাত ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার তারল্য-সহায়তা চেয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ৫ হাজার কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ২ হাজার কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৭ হাজার ৯০০ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ১ হাজার ৫০০ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সাড়ে ৩ হাজার কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ৫ হাজার কোটি ও এক্সিম ব্যাংক ৪ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে।
আওয়ামী সরকারের পতনের পর অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত ব্যাংকগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২০ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তন এনেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর মধ্যে আট ব্যাংক তারল্য-সংকটে ভুগছে। তবে ছয়টি ব্যাংকের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাদের অনেক শাখায় নগদ টাকার লেনদেন প্রায় বন্ধ। আমানতকারীদের চাপে শাখা ব্যবস্থাপকসহ ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা প্রতিদিনই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন।