অবরুদ্ধ গাজায় অনাহারজনিত সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। গতকাল শুক্রবার গাজার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অঞ্চলটিতে এদিন অনাহার ও পুষ্টিজনিত কারণে ৯ জন মারা গেছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত গাজায় অনাহারজনিত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২২ জনে। অন্যদিকে, জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, গাজায় প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে এবং এ সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ইউনিসেফ ও মানবিক সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য বিশেষায়িত খাবার আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে ফুরিয়ে যাবে। সংস্থাটির কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ ল্যাজারিনি বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তার সহকর্মীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘গাজার মানুষ না মৃত, না জীবিত—তারা আসলে হাঁটাচলা করা কঙ্কাল।’
এরই মধ্যে গাজার দুর্ভিক্ষের একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা আলজাজিরা। আলজাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা সামান্য ফালাফেল (ডুবোতেলে ভাজা মটরশুঁটি) খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় বাজারগুলোতে সামান্য পণ্যের আকাশচড়া দাম। ভিডিওতে তাকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শোনা যায়, এসব বাজারে লুট করা ত্রাণসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। সেখানে সামান্য পেঁয়াজ ১০ মার্কিন ডলার এবং একটু ময়দা ১৭ মার্কিন ডলারেও বিক্রি হচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহ প্রবেশে বাধা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। তারা এর ফলে শিশুদের মধ্যে সৃষ্ট অপুষ্টির জন্য হামাসকে দায়ী করছে। তবে জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে, গাজায় সাহায্যের পরিমাণ ‘খুবই সামান্য’ এবং এ অঞ্চলে খাবারের সংকট ‘আগে কখনো এত ভয়াবহ ছিল না’। গাজার উত্তরাঞ্চলে ৪০ বছর বয়সী হানা আলমাধুন বিবিসিকে জানান, স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রায়ই খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘যদি কিছু পাওয়া যায়ও, তাহলে তার দাম এত বেশি যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে তা কেনা অসম্ভব। আটা এখানে অনেক দামি এবং সংগ্রহ করা কঠিন। মানুষ আটা কেনার জন্য স্বর্ণ ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বিক্রি করছে।’ তিন সন্তানের মা হানা আরও বলেন, ‘প্রতিটি নতুন দিন একটি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে।’
মন্তব্য করুন