চলতি বছরে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের অবসরে যাওয়ার কথা। তারা দুজন অবসরে গেলে দুই শীর্ষ পদে কারা বসবেন, তা নিয়ে প্রশাসনে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া আহমদ কায়কাউসের চুক্তি বাতিলের পর ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পদে কে নিয়োগ পাচ্ছেন, তা নিয়েও চলছে নানা হিসাবনিকাশ। এ পদে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব শরিফা খানের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ২০ সচিবের অবসরে যাওয়ার কথা। তবে তাদের কেউ কেউ চুক্তিতে নিয়োগও পেতে পারেন।
বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের নিয়মিত চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছিল গত বছরের ১০ অক্টোবর। পরে তাকে আরও এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার। আগামী ১০ অক্টোবর চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। ফলে এ পদে কেউ নতুন আসবেন নাকি তাকেই আরও এক বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে, তা নিয়ে জল্পনার যেন শেষ নেই। চুক্তির বিষয়টি একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। যদি মাহবুবের চুক্তি না হয়, তাহলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সম্ভাবনাই বেশি। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। আগামী ৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। আর যদি তার চুক্তি না হয়, তাহলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল মুখ্য সচিব হতে পারেন। আবার জনপ্রশাসন সচিব মেজবাহ উদ্দিনকেও মুখ্য সচিব করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্য কেউ মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে বসবেন।
এদিকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ সচিবের অবসরে যাওয়ার কথা। তবে তাদের কেউ কেউ নতুন করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন। নতুন করে সচিব পদোন্নতি পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। আগামী এপ্রিল থেকেই এ ব্যাচের কর্মকর্তারা সচিব হবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পদে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব শরিফা খানকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এ পদে দায়িত্ব চালিয়ে আসা সাবেক মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার চুক্তি বাতিল করেছে সরকার। গত ৭ ফেব্রুয়ারি তার চুক্তি বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সুতরাং ফাঁকা ওই পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৫ জুলাই। নতুন করে চুক্তি না পেলে তাকে অবসরে যেতেই হচ্ছে। তিনি আরও এক বছরের চুক্তি পাবেন বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। যদিও বিষয়টি একান্তই প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১০ অক্টোবর। নতুন করে চুক্তি না পেলে তাকে অবসরে যেতে হবে। আগামী ৩০ এপ্রিল অবসরে যাওয়ার কথা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সিনিয়র সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগমের। ১৯ মে অবসরে যাচ্ছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ। ৩০ জুন চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর। তিনি নতুন করে আরও ছয় মাস কিংবা এক বছরের চুক্তি পেতে পারেন। চুক্তি না পেলে তাকে সেখানেই থামতে হবে। ১১ জুলাই অবসরে যাবেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) সত্যজিত কর্মকার। ১৪ জুলাই অবসরে যাবেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল। ২৭ আগস্ট নিয়মিত চাকরির বয়স শেষ হচ্ছে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিনের। ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন অবসরে যাচ্ছেন। ২৯ সেপ্টেম্বর চাকরি শেষ হচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মহিউদ্দিন আহমেদের চাকরি। ৯ অক্টোবর বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমানের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে শোনা যাচ্ছে। কারণ, তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পরিচালনা করছেন বলে প্রশাসনে সুনাম রয়েছে। ৪ নভেম্বর অবসরে যাবেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আ. হামিদ জমাদ্দার। ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমানের চাকরি শেষ হবে ২৪ নভেম্বর। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদের অবসর জীবন শুরু হবে ৭ ডিসেম্বর। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর চাকরির মেয়াদ আছে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তিনি আগামী জুলাইয়ে মুখ্য সচিব পদে কিংবা অক্টোবরে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পেলে তাকে এক বছরের চুক্তি দেবে সরকার। ৩০ ডিসেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের চাকরি শেষ হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমেদের নিয়মিত চাকরি শেষ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। একই দিন চাকরি শেষ হবে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিনের। ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এ কে এম শামিমুল হক সিদ্দিকীর চাকরি শেষ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর।