কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৪, ০২:৩১ এএম
আপডেট : ০৫ জুন ২০২৪, ০৮:৪০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

এককে ধাক্কা, বিজেপি এবার সঙ্গীনির্ভর

লোকসভা নির্বাচন
এককে ধাক্কা, বিজেপি এবার সঙ্গীনির্ভর

ভারতে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৫০-এর বেশি আসন পাবে বলে বুথফেরত জরিপের ফলে যে আভাস দেওয়া হয়েছিল, তা যেন মিথ্যা প্রমাণিত হতে চলেছে। মঙ্গলবার সকালে ভোট গণনা শুরুর প্রথম কয়েক ঘণ্টায় এনডিএ জোটের বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকার খবর আসতে থাকে। পরে সময় যত গড়াতে থাকে, বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার পক্ষে সুখবর আসতে থাকায় সব হিসাবনিকাশ পাল্টাতে থাকে। ৫৪৩ আসনের লোকসভায় গত রাত ১টা পর্যন্ত ভারতের নির্বাচন কমিশন যে ৪৩৪টি আসনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে, তাতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি পেয়েছে ২০৭টি আসন। ৮৮টি আসনে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। দুই জোটের মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। আসনের দিক থেকে ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশে চমক সৃষ্টি করেছে কংগ্রেস জোটের অখিলেশ যাদবের দল সমাজবাদী পার্টি (এসপি)। পশ্চিমবঙ্গেও আগের মতোই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী ফলের যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বিজেপি এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারছে না। জোটগতভাবে দলটিকে ক্ষমতায় আসতে হবে। অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস বলেছে, দেশের মানুষ মোদির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের ভেতরে-বাইরের বেশ কয়েক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে কংগ্রেস। খবর এনডিটিভি ও হিন্দুস্তান টাইমসের।

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ৪৩৪টি আসনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০৭টিতে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। ৮৮টি আসনে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। অন্য দলগুলোর মধ্যে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ৩২টি, তৃণমূল কংগ্রেস ২২টি, জনতা দল (জেডি-ইউ) ১১টি, ডিএমকে আটটি, তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) আটটি, শিবসেনা (উদ্ভব) ছয়টি, শিবসেনা (এসএইচএস) ছয়টি, লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিলাস) চারটি ও সিপিআই (এম) চারটি আসনে জয় পেয়েছে। আম আদমি পার্টি, ওয়াইএসআরসিপি ও ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) তিনটি করে আসন পেয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআই), কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) (লিবারেশন)-সিপিআই (এমএল) (এল), জনতা দল (জেডি-এস), জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স (জেকেএন), রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি), ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপিএসপি), ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ (আইইউএমএল) দুটি করে আসনে জয় পেয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি দল একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ছয়জন। ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, বিজেপি ৩৩ আসনে এগিয়ে রয়েছে। কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে ১১ আসনে। সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ৫ আসনে এগিয়ে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে ৭ আসনে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলে এটা নিশ্চিত যে, বিজেপি এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারছে না। লোকসভার মোট ৫৪৩ আসনের মধ্যে সরকার গড়তে প্রয়োজন ২৭২ আসন। বিজেপি যেসব আসনে এগিয়ে রয়েছে, সেগুলোতে জয় ধরলেও আসনসংখ্যা তার চেয়ে কম থাকে।

গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে ৩০৩ আসনে জয় পেয়েছিল। সেবার বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ৩৫২ আসনে জয় পায়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে বিজেপি জিতলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। সেক্ষেত্রে এনডিএ জোট শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হবে বিজেপিকে। এনডিএ জোটের শরিকদের প্রধান অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি-ইউ)। এই দুই দল ছাড়া আরও একাধিক এনডিএ শরিকের ওপর নির্ভর করতে হবে বিজেপিকে। এদের মধ্যে রয়েছে মহারাষ্ট্রের শিবসেনার সিন্ধে গোষ্ঠী, বিহারে লোক জনশক্তি পার্টি এবং উত্তর প্রদেশের রাষ্ট্রীয় লোক দল। গত নির্বাচনে কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছিল ৫২টি আসন। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ইউপিএ জোট পেয়েছিল ৯৪ আসন। সেই কংগ্রেস এখন পর্যন্ত

এককভাবে ৮৮টি আসনে জয়ী হয়েছে। যে উত্তর প্রদেশকে বিজেপির ঘাঁটি বলে ধরা হয় সেই রাজ্যে মোদি চমক এবার আর কাজে লাগেনি। রাজ্যের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৫টিতে এগিয়ে আছে ইন্ডিয়া জোট। এমনকি অযোধ্যায় যেখানে রামমন্দির অবস্থিত, সেই লোকসভা কেন্দ্রেও হেরে গেছে বিজেপি। যে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবার সবচেয়ে বেশি আসন পাবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সেখানে মাত্র ১২টি আসনেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বিজেপিকে। এখানে ২৯টি আসনে এগিয়ে থেকে নিজের শক্তিমত্তা সম্পর্কে আবারও জানান দিল তৃণমূল কংগ্রেস। এখানে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র একটি আসন। এ রকম অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন তৃণমূলপ্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর কংগ্রেস বলেছে, ভোটের ফলেই স্পষ্ট, মোদির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন দেশের মানুষ। মঙ্গলবার বিকেলে নয়াদিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করে কংগ্রেস। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী। সংবাদ সম্মেলনে খাড়গে বলেন, ‘ভোটের এই ফল বিজেপির নৈতিক হার। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে কংগ্রেস লড়াই করেছিল। এই লড়াই শেষ হয়নি। আগামীদিনেও আমরা সংসদে এই নিয়ে আওয়াজ তুলব। মানুষ এবার কোনো দলকেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়নি।’

নীতিশ-নাইডুর সঙ্গে যোগাযোগ করছে কংগ্রেস: হিন্দুস্তান টাইমস জানতে পেরেছে, এনডিএ জোটের শরিক অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু এবং বিহারের জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডি-ইউ) প্রধান নীতিশ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কংগ্রেসপ্রধান মল্লিকার্জুন খাগড়ে। এ ছাড়া ওডিশার নবীন পাটনায়েকের বিজু জনতা দল (বিজেডি) এবং বিহারের লোক জনশক্তি পার্টির (রাম বিলাস) সঙ্গেও কথা হয়েছে তার। বিহারে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ১৫টি লোকসভা আসনে এগিয়ে রয়েছে নীতিশ কুমারের দল। রাজ্যটিতে বিজেপি পাচ্ছে মাত্র ১৩টি আসন। একই জোটের দুই দল হিসেবে জেডি-ইউ বিজেপির প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে। নীতিশের সঙ্গে খাগড়ের যোগাযোগের বিষয়ে জেডি-ইউর এক নেতা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, তার দলের অবস্থান বদলের সম্ভাবনা কম।

নীতিশ কুমার এ বছরই এনডিএ জোটে যোগ দেন। এর আগে তিনি ইন্ডিয়া জোটের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা ছিলেন। কংগ্রেসের এক নেতা বলেছেন, আজ মঙ্গলবার নীতিশ কুমারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা সম্রাট চৌধুরী। তবে তিনি দেখা করেননি। কংগ্রেস নেতাদের আশা, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডেকেও ইন্ডিয়া জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে রাজি করাতে পারবেন তারা। শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা রাজ্যটিতে ১০ আসনে এগিয়ে রয়েছে। শিবসেনার আরেক অংশের নেতা উদ্ভব ঠাকরের সঙ্গেও তাদের কথা হয়েছে। বিজেডির নবীন পাটনায়েক বিজেপি বা কংগ্রেস—দুই দলের থেকেই সমান দূরত্ব বজায় রেখেছিল। তবে হিন্দুস্তান টাইমস জানতে পেরেছে, ওডিশা বিধানসভায় নিজেদের সুযোগ বাড়ানোর জন্য কংগ্রেসের সহায়তা চেয়েছে বিজেডি। ২০১৯ সালে রাজ্যটির বিধানসভায় কংগ্রেসের আসন ছিল ৯টি। তবে এখন দলটির দখলে ১৬টি আসন রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিয়ের আগে প্রবাসীর জীবনে ঘটে গেল ভয়াবহ বিপর্যয়

গাজীপুরে অবৈধ গ্যাস সংযোগে রমরমা বাণিজ্য

ঢাকা পৌঁছেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী

অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন দুই ট্রেনের হাজারো যাত্রী

আর্জেন্টিনা ভক্তদের জন্য সুখবর, মাঠে ফিরেছেন তারকা ফুটবলার

দুই হাতে বল নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ‘বাইক স্ট্যান্ট’, ভিডিও ভাইরাল

সব বলে দেওয়ার হুমকি দিলেন ঢাবি ভিসি

পাওনা ৭০০ টাকায় কাল হলো রিকশাচালকের

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ২ বন্ধু আটক

 অমর্ত্য সেনকে কি বাংলাদেশে বের করে দেবে ভারত?

১০

রাজধানীতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ , যান চলাচল বন্ধ

১১

ডিভোর্সের গুঞ্জন, মুম্বাই বিমানবন্দরে গোবিন্দ

১২

যমুনা ব্যাংকে চাকরি, আবেদন করুন আজই

১৩

উপদেষ্টারা অসহায়, সবকিছু নির্ধারণ করে আমলারাই : ফখরুল

১৪

ড. ইউনূসের কারণে বিশেষ সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ : প্রেস সচিব

১৫

নির্বাচন নিয়ে অনৈতিক চাপ দিলে পদত্যাগ করব : সিইসি

১৬

যাতায়াত সুবিধাসহ আরএফএল গ্রুপে চাকরির সুযোগ

১৭

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে ইরানের সেনাপ্রধানের হুংকার

১৮

বাজার স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে ইরানের অনুকরণে ব্যবস্থার ঘোষণা সিরিয়ার

১৯

সকালে সময় বাঁচাতে রোজ পাউরুটি খাচ্ছেন? চিকিৎসকদের স্পষ্ট সতর্কবার্তা

২০
X