কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩১ এএম
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে

বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাগোষ্ঠীর আশ্রয় ও তাদের ঘিরে সংকট এমনিতেই বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ওপর নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কোনোভাবেই স্বস্তিদায়ক খবর নয়।

সোমবার কালবেলাসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের সীমান্তসংলগ্ন রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বেড়েছে। ফলে গত কয়েক দিনে নতুন করে আরও ১২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্তে অবস্থান করছে। সুযোগ পেলেই অনুপ্রবেশ ঘটবে তাদেরও। আর সীমান্ত পারাপারের অবৈধ কাজে বরাবরের মতোই সক্রিয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সংঘবদ্ধ দালাল চক্র। বিভিন্ন সময় দেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং তাদের অবস্থান বাংলাদেশকে যে ক্রমেই একটি দীর্ঘস্থায়ী সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, কোনো সন্দেহ নেই। এ সংকট সমাধানে নানা সময় কূটনৈতিক ও আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে। ২০১৭ সালের শেষদিকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে সই করে দেশটি। কিন্তু ২০১৯ সালে সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়। ২০২৩ সালের এপ্রিলে চীনের তরফ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেটা কিছুদূর এগোলেও আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার জান্তা সরকারের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে এ প্রক্রিয়া থেমে যায়। সে সময় দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত নয় বলে জানায় জাতিসংঘ। ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পরিণত হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংস হামলার শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আট লাখের মতো মানুষ আসে। সব মিলিয়ে দেশে এখন প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ে আছে। সে সময় মানবিক কারণ ও কূটনীতিকদের মতে, আন্তর্জাতিক চাপে আশ্রয় দেওয়া হয় তাদের। আজ তারাই দেশের অন্যতম বিপজ্জনক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যাবাসন সম্ভব তো হয়ইনি; উপরন্তু তাদের ভরণপোষণের চ্যালেঞ্জসহ ক্যাম্পে সহিংসতা, খুন, মাদক এখন নৈমিত্তিক বিষয়। ফলে নতুন করে তাদের অনুপ্রবেশ যে এ সংকট আরও জটিল করে তুলবে—সন্দেহ নেই কোনো। এই মুহূর্তে সার্বিকভাবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের। নতুন এ সরকারের হাতে এখন পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। রাষ্ট্র সংস্কারে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কর্মযজ্ঞে নতুন দায়িত্ব বর্তেছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো। এরই মধ্যে নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর বিষয়ে তাদের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক।

আমরা মনে করি, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাগোষ্ঠীকে যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসনের কোনোই বিকল্প নেই। এটিই সমাধানের স্থায়ী পথ। এজন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জরুরি বহুমুখী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জরুরি, যা এই মুহূর্তে সহজ কাজ নয়। কেননা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিষয়টিতে জটিলতার সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে নির্যাতন ও উৎপীড়ন চলছে, তা অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন। মিয়ানমারে নিষ্ঠুরতা বন্ধ এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মহলের আন্তরিকভাবে সোচ্চার হওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে আমাদের জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখাই আসল কাজ। পাশাপাশি সীমান্তে অনুপ্রবেশে যে চক্র তৎপর, তাদের যে কোনো প্রকারে উৎখাত করতে গোয়েন্দা নজরদারির সঙ্গে বাড়াতে হবে প্রশাসনের টহল।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ২৫ কেজি দুধ দিয়ে গোসল 

সেনাবাহিনীর হাতে ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক 

ইবি ছাত্রের রহস্যজন্যক মৃত্যুর তদন্তের দাবিতে ছাত্রশিবিরের টর্চ মিছিল

বাঙলা কলেজ শিক্ষার্থী শহীদ সাগরের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

কেশবপুরে ৩১ দফার প্রচারণায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অমলেন্দু দাস অপু

মাদ্রাসা টিকে আছে বলেই আমাদের ওপর বিভিন্ন ঝড় ঝাপটা আসে : ধর্ম উপদেষ্টা 

ইউনিভার্সিটি ইনোভেশন হাব স্বপ্ন গড়ার সূতিকাগার

রাজবাড়ী জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদ বাঙলা কলেজ শাখার কমিটি গঠন

গণঅভ্যুত্থান মেহনতি মানুষের কষ্ট লাঘব করেনি : সাইফুল হক 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক পোস্ট

১০

মাদকাসক্ত যুবককে পিটিয়ে হত্যা করল মা ও ভাই

১১

এবার পুলিশের সামনেই চাপাতি দেখিয়ে ছিনতাইয়ের ভিডিও ভাইরাল 

১২

বৃষ্টির দেখা নেই, আমন চাষে বিপাকে কৃষক

১৩

প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষায় কারা সুযোগ পাবে, বাছাই হবে যেভাবে

১৪

হাসপাতালের লিফটের নিচে পড়ে ছিল রোগীর অর্ধগলিত লাশ

১৫

পরিবারের সবাই ইয়াবা বিক্রেতা, অতঃপর…

১৬

নির্বাচন পেছাতে ‘সংস্কার-বিচারের’ নামে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে : আমিনুল হক

১৭

ডাকাতের রশির ফাঁদে যুবকের মৃত্যু, আহত ২

১৮

সরকার উসকানি দিয়ে এনসিপিকে গোপালগঞ্জ পাঠিয়েছে : ড. রেদোয়ান

১৯

জুলাই আন্দোলনে শহীদ তিন পরিবারে কান্না থামেনি আজও

২০
X