কেরি বয়েড অ্যান্ডারসন
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৭ এএম
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ট্রাম্প না কমলা­— ফল আন্দাজ অসম্ভব

ট্রাম্প না কমলা­— ফল আন্দাজ অসম্ভব

এই মুহূর্তে পুরো বিশ্বের নজর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। এক সপ্তাহের মাথায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাদের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আগামী চার বছর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি এবং দেশীয়নীতি কেমন হবে, তা নির্ভর করছে এ নির্বাচনের ফলের ওপর। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতো কংগ্রেসের রূপরেখাও এ ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতো এবার কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও চলছে কঠিন লড়াই।

প্রতি দুই বছর অন্তর আমেরিকার নাগরিকরা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভার সদস্যদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। বর্তমানে এ নিম্নকক্ষে অল্পসংখ্যক প্রতিনিধির ব্যবধানে রিপাবলিকান পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিদ্যমান। যার কারণে প্রতিনিধি সভার কর্মসূচি নির্ধারণের ব্যাপারে তাদের প্রভাব বেশি।

এ বছর প্রতিনিধি সভার নির্বাচনে চলবে তীব্র প্রতিযোগিতা। কারণ দুটি দলেরই রয়েছে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা। এবিসি নিউজের ৫৩৮ নামক জরিপকারী সংস্থা বলছে, ডেমোক্রেট পার্টির চেয়ে এবারও নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকান দলের হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা সামান্য বেশি। তবে উল্টোটা হওয়াও অসম্ভব নয়। সাধারণত যেই দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করে, সে দলই প্রতিনিধি সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু সবসময় যে এমনটাই ঘটে, তা নয়। কখনো কখনো এর উল্টোটাও ঘটতে দেখা গেছে।

কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে আবার এত সহজে রদবদল হয় না। সিনেটররা ছয় বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করে থাকেন এবং একবারে সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ সিনেটরদের পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সিনেটে ডেমোক্রেট দলের সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, যার দরুন সিনেটের কার্যাবলিতে তারা প্রভাব খাটাতে পারছে। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে তাদের হাত থেকে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

সিনেটকে কেন্দ্র করে ডেমোক্র্যাটদের সামনে এখন দুটো চ্যালেঞ্জ রয়েছে—একটা স্বল্পমেয়াদি এবং অন্যটা দীর্ঘমেয়াদি। এ বছর নির্বাচনী আসনগুলোতে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখাটা তাদের স্বল্পমেয়াদি চ্যালেঞ্জ। সিনেটে দুই দলেরই প্রায় সমানসংখ্যক প্রতিনিধি থাকায় প্রতিটি নির্বাচনী আসনের মূল্য অত্যধিক। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার অনেক পুরোনো ডেমোক্র্যাট সিনেটর, জো ম্যানসিন সম্প্রতি দল ত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধন করেছেন। এ বছরই তিনি অবসর নিচ্ছেন এবং এ কথা প্রায় নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা যায় যে, তার আসনে এবার এক রিপাবলিকান প্রার্থী অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন। ওহাইওতে সিনেটর শেরড ব্রাউন এবং মনট্যানাতে সিনেটর জন টেসলারও জনপ্রিয় রিপাবলিকান প্রার্থীদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন। মিশিগানে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী এলিসা স্লটকিন এবং রিপাবলিকান প্রার্থী মাইক রজার্সের ভেতর তুমুল লড়াই হওয়ার কথা রয়েছে। এ দুজন প্রার্থীই সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন। কিন্তু গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি ডেমোক্রেট পার্টির দৃঢ় সমর্থন, আরব-আমেরিকানদের ভোট হারানোর জোগাড় করে দিয়েছে; যার খেসারত এলিসা স্লটকিনকে দিতে হতে পারে। পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন রাজ্যেও চলবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, এবার সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে যাবে। এবিসি নিউজের ৫৩৮ জরিপ বলছে যে, এমনটা ঘটার সম্ভাবনা ৮৮ শতাংশ।

অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটদের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জের ভেতর রয়েছে সিনেটের মৌলিক প্রশাসনিক কাঠামোর পরিবর্তন এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো। সংবিধান অনুযায়ী প্রতি রাজ্যের জন্য দুটি করে আসন মজুত রয়েছে। রাজ্যের জনসংখ্যার সঙ্গে এ আসন বিন্যাসের কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন—ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের জনসংখ্যা প্রায় চার কোটি আর ওয়াইওমিং রাজ্যের জনসংখ্যা মাত্র ৫০ লাখ, কিন্তু সিনেটে উভয় রাজ্যের প্রতিনিধির সংখ্যা সমান। এজন্য জনসংখ্যার হিসেবে সিনেটে ছোট রাজ্যগুলোর প্রতিনিধিত্ব তুলনামূলকভাবে বেশি। আমেরিকায় বর্তমানে নগরায়ণ বাড়লেও দেশটির গ্রামীণ জনগোষ্ঠী রিপাবলিকান পার্টির ভেতর নিজের পরিচয় খুঁজে পাচ্ছে। দুপক্ষের ভোটারদের ভেতর বাড়ছে ব্যবধান। রাজনৈতিক আবহাওয়ার পরিবর্তন আর সিনেটের আসন্ন রূপরেখা—দুটোই রিপাবলিকান পার্টির অনুকূলে। উচ্চকক্ষে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে, তা ফিরে পেতে দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির ভূমিকা যেমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ আবার তার হাতে ক্ষমতাও তেমনই বেশি। এ ক্ষমতার মাত্রাও অনেক দিন ধরে বর্তমান। কিন্তু তার পাশাপাশি কংগ্রেসের ভূমিকাও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। আইন প্রণয়ন করা, সরকারের বাজেট নির্ধারণ করা, রাষ্ট্রপতির নির্বাহী কার্যক্রম তদারকি করাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কংগ্রেস পালন করে থাকে। তদুপরি পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে এবং বিচার বিভাগীয় ও প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে রাষ্ট্রপতির সুপারিশপ্রাপ্ত লোক নিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সিনেট মূল্যবান ভূমিকা রেখে থাকে। বস্তুত রাষ্ট্রপতির কর্মসূচির বাস্তবায়ন ও সফলতা কংগ্রেসের ওপর নির্ভরশীল।

এবার যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তার ফল আন্দাজ করাটা অসম্ভব বললে ভুল হবে না। কারণ যেই দলই জয়ী হোক না কেন, ভোটের ব্যবধান হবে সামান্য। এমনটা হতে পারে যে, ২০২৫ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস জয়ী হয়েছেন, তাকে সহায়তা করছে ডেমোক্রেট সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি সভা আর তার বিরোধিতা করছে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেট। আবার হতে পারে যে, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়লাভ করেছেন, রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেট আর ডেমোক্রেট সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি সভা নিয়ে। এমনকি এমনটাও হতে পারে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিতে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ দুটোই রিপাবলিকানদের দখলে চলে গেছে। কিন্তু কমলা হ্যারিস সিনেট আর প্রতিনিধি সভা, দুটোর ডেমোক্রেটিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করবেন, এমনটা ঘটার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ।

যেই প্রার্থী প্রেসিডেন্টের আসনে অধিষ্ঠিত হন, কংগ্রেসের ওপর তার দলের নিয়ন্ত্রণ থাকলে তার পক্ষে সব ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সহজ হয়ে যায়। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের সব ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাকে বিশেষ কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। অন্যদিকে কংগ্রেসের উভয় কক্ষই যদি প্রেসিডেন্টের বিপক্ষের দলের হয়, সে ক্ষেত্রে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ ছাড়া খুব বেশি ক্ষমতা চর্চার সুযোগ তার হয় না। পুরো চার বছরের মেয়াদ জুড়েই তাকে কংগ্রেসের তদারকি এবং সমালোচনার শিকার হতে হয়। অন্যদিকে দুটো কক্ষ যদি ভিন্ন দুই দলের নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেই ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট কিছুটা স্বস্তি পান। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাকে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। সেই সীমাবদ্ধতাগুলো কী কী হবে এবং কতখানি হবে—তা নির্ভর করে কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে কতদূর সমঝোতা করা যায় তার ওপর।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল শুধু আমেরিকানদের জন্যই নয়; একই সঙ্গে বিশ্ববাসীর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আর পররাষ্ট্রনীতির প্রভাব বিশ্বের সকল দেশের ওপরই পড়ে। তবে মার্কিন প্রতিনিধি সভা ও সিনেটের নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করে দেবে যে, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তার কর্মসূচির ঠিক কতখানি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবেন।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং অক্সফোর্ড অ্যানালিটিকার সাবেক উপপরিচালক। নিবন্ধটি আরব নিউজের মতামত বিভাগ থেকে অনুবাদ করেছেন অ্যালেক্স শেখ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুপুরের মধ্যে ঢাকায় বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস 

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ

৩ সেপ্টেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

আজারবাইজান হয়ে ইরানে ড্রোন হামলা করে ইসরায়েল

যুদ্ধের অবস্থা জানালেন নেতানিয়াহু

ইরাকে মুক্তি পেল ৩৩ হাজারের বেশি বন্দি

কংগ্রেসে ইসরায়েলের সমর্থন কমছে : ট্রাম্প

বিদায় বেলায় বাড়তি ব্যস্ততা মিরপুরের ভ্যালোসিটি ব্যাটওয়ালার!

ম্যানইউর বিপক্ষে রূপকথার জয়, এবার জরিমানা ভোগ করছে গ্রিমসবি

আরেকটি সুযোগ পেলেন স্টয়নিস

১০

দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন সাবেক আইজিপি মামুন

১১

ভারতের স্পন্সর হতে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে

১২

বিগ ব্যাশে খেলবেন অশ্বিন!

১৩

মার্করামের ঝড়ে হেডিংলিতে উড়ে গেল ইংল্যান্ড

১৪

শারজায় পাকিস্তানের বিপক্ষে আফগানদের জয়

১৫

সাবেক আইজিপি ক্ষমা পাবেন কি, যা বললেন চিফ প্রসিকিউটর

১৬

সাভারে খাল উদ্ধারে নেমেছে প্রশাসন

১৭

উমামার প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা

১৮

নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে দরকারি সব পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার: প্রেস সচিব

১৯

রাজশাহীতে বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষ, ১৪৪ ধারা জারি

২০
X