কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সেই দিনটি

বছরক্রান্তিতে হালখাতা

বছরক্রান্তিতে হালখাতা

হালখাতা হলো বছরের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদের প্রক্রিয়া। বছরের প্রথম দিন ব্যবসায়ীরা তাদের দেনা-পাওনার হিসাব সমন্বয় করে এদিন হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। এজন্য খদ্দেরদের বিনীতভাবে পাওনা শোধ করার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। ‘শুভ হালখাতা কার্ড’-এর মাধ্যমে ওই বিশেষ দিনে দোকানে আসার নিমন্ত্রণ জানানো হয়।

এ উপলক্ষে নববর্ষের দিন ব্যবসায়ীরা তাদের খদ্দেরদের মিষ্টিমুখ করান। খদ্দেররাও তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পুরোনো দেনা শোধ করেন। আগেকার দিনে ব্যবসায়ীরা একটি মাত্র মোটা খাতায় তাদের যাবতীয় হিসাব লিখে রাখতেন। এ খাতাটি বৈশাখের প্রথম দিনে নতুন করে হালনাগাদ করা হতো। হিসাবের খাতা হালনাগাদ করা থেকে ‘হালখাতা’র উদ্ভব।

মূলত পহেলা বৈশাখের সকালে সনাতন ধর্মাবলম্বী দোকানি ও ব্যবসায়ীরা সিদ্ধিদাতা গণেশ ও বিত্তের দেবী লক্ষ্মীর পূজা করে থাকেন এই কামনায় যে, তাদের সারা বছর যেন ব্যবসা ভালো যায়। দেবতার পূজার্চনার পর তার পায়ে ছোঁয়ানো সিন্দুরে স্বস্তিকা চিহ্ন অঙ্কিত ও চন্দন চর্চিত খাতায় নতুন বছরের হিসাব-নিকাশ শুরু করা হয়। এই দিন ক্রেতাদের আনন্দদানের জন্য মিষ্টান্ন, ঠান্ডা পানীয় প্রভৃতির ব্যবস্থা করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। অনেক ব্যবসায়ী অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেও হালখাতা বা শুভ মহরত অনুষ্ঠান করে থাকেন। হালখাতা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের সেতুবন্ধ তৈরি হয়। গত শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকে পুরান ঢাকায় হিন্দু ব্যবসায়ী, বিশেষ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে হালখাতা প্রথা অনুসরণের প্রবণতা ছিল। এমনকি বেশ ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গেই পালিত হতো অসাম্প্রদায়িক এ আচার অনুষ্ঠানটি। হালনাগাদের খাতাটি ছিল লাল রঙের লালসালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো। দুই-তিন ভাঁজ করে তার ওপর ফিতা দিয়ে বেঁধে রেখে হাত বিনিময় হতো। এ খাতাটিই ছিল বিগত বছরের যাবতীয় হিসাবের বিবরণী নথি।

সম্রাট আকবরের বাংলা সন প্রবর্তনের সঙ্গে যুগপৎভাবে শুরু হয় হালখাতার প্রথা। ১৬১০ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীরের নির্দেশে তৎকালীন ঢাকার সুবেদার ইসলাম খান চিশতি নিজ বাসভবনের সামনে প্রজাদের মিষ্টি বিতরণ করতেন। খাজনা আদায় ও হিসাব-নিকাশের সঙ্গে সঙ্গে চলত নানা উৎসব ও হালখাতার অনুষ্ঠান। পরে ব্রিটিশ আমলে ঢাকার ফরাশগঞ্জের রূপলাল হাউস, মিটফোর্ডের নলগোলার ভাওয়াল রাজার কাচারিবাড়ী এবং পাটুয়াটুলীর সামনে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে এরকম আয়োজন হতো পুণ্যাহ নামে। কৃষিনির্ভর সমাজে বিশেষ করে কৃষকের হাতে নগদ পয়সা আসার একমাত্র মাধ্যম ছিল ফসল বিক্রি। ফলনের মৌসুমে ফসল বিক্রির টাকা হাতে পাওয়া না গেলে কৃষকসহ ব্যবসায়ীদের সবাই খালি হাতে থাকতেন। ফলে সারা বছর তাদের বাকিতে জিনিসপত্র কিনতে হতো। এই পহেলা বৈশাখই ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যখন তারা নিজেদের বাকির টাকা পরিশোধ করতেন। কেউ কেউ কিছু পরিশোধ করে নতুন বছরের জন্য নতুন হিসাবের খাতা খুলতেন। কালের বিবর্তনে সারা দেশের মতো পুরান ঢাকায়ও হালখাতা নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনায় অনেক ভাটা পড়েছে। এখন হিসাব-নিকাশ কম্পিউটারনির্ভর হওয়ায় লালসালুতে বাঁধাই করা হিসাব খাতার চল অনেকটা কমে গেছে। বলা বাহুল্য, অনেকটা ঐতিহ্য রক্ষার জন্যই এখন হালখাতার আয়োজন চোখে পড়ে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এক চেকপোস্টে বদলে গেল সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক

হত্যার উদ্দেশেই নুরকে আঘাত করা হয়েছিল : মির্জা ফখরুল

বিসিবির নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেন বুলবুল

ছেলেদের বিপক্ষে আবারও মাঠে নামবে মেয়েরা, সূচি চূড়ান্ত

সড়ক দুর্ঘটনায় মা-মেয়ে নিহত

নির্মাতার হুমকি-ধমকিতেই কি ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে দিচ্ছেন রিপা?

সংশোধনী অধ্যাদেশ জারি  / রাজস্বনীতি বিভাগের সচিব হবেন শুল্ক-করের অভিজ্ঞ ব্যক্তি

বিমানবন্দরের কাছে বুড়িমারি এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত

সমন্বয়কদের গ্রেপ্তার নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন রাজসাক্ষী মামুন

আফগানিস্তানে নিহত বেড়ে ১১২৪, আহত ছাড়াল ৩ হাজার

১০

সাদা পাথর লুটে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সিআইডির অনুসন্ধান শুরু

১১

‘গণধর্ষণে’র হুমকিদাতা শিক্ষার্থীর শাস্তি দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের

১২

১৯ বগি ফেলে চলে গেল পর্যটক এক্সপ্রেস

১৩

পান চাষিদের মাথায় হাত

১৪

পেট ফুলে থাকা, ব্যথা, গ্যাস? কখন ডাক্তার দেখানো উচিত জেনে নিন

১৫

অক্টোবরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ চূড়ান্ত

১৬

ছেলে জয়কে নিয়ে সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন শাকিব-অপু

১৭

গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে নতুন তথ্য দিলেন ট্রাম্প

১৮

আবুল খায়ের গ্রুপে বড় নিয়োগ, আজই আবেদন করুন

১৯

বিদেশ থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার নির্দেশনা দিচ্ছেন আ.লীগ নেতারা

২০
X