ফাহিম ফয়সাল
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ০৯:০২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

হেডলাইটের সাদা আলোয় ভোগান্তি নগরবাসীর

রাজধানী
রাজধানীতে সাদা আলো জ্বালিয়ে গাড়ি চলছে। ছবি : কালবেলা
রাজধানীতে সাদা আলো জ্বালিয়ে গাড়ি চলছে। ছবি : কালবেলা

প্রাণের শহর ঢাকায় যন্ত্রের মতো ছুটছে মানুষ। বর্তমানে যান্ত্রিক এ শহরে রাত হলেই নতুন আতঙ্ক এলইডি লাইট বা সাদা আলো। রাজধানীতে রিকশা-ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের হেডলাইটে ব্যবহার হচ্ছে উজ্জ্বল সাদা আলোর এলইডি লাইট। এই আলো বিপরীত দিকের যানবাহনের চালকসহ পথচারীদের চোখে তৈরি করে ভীষণ সমস্যা। এটি চোখে পড়লে মুহূর্তেই সব অন্ধকার হয়ে যায়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ বা প্রশাসন থেকে এসব লাইটের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ফলে যে যার মতো যে কোনো যানবাহনে ব্যবহার করছে ক্ষতিকর এ বাতি। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, রাজধানীতে চলাচল করা প্রায় সব ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশায় লাগানো হচ্ছে এই এলইডি লাইট। এতে বিপদ বাড়ছে বহুগুণ।

ঢাকার বাসিন্দা শাহরিয়ার আলম বলেন, রাতে সড়কে চলাচলের সময় এলইডি লাইটের কারণে কিছু দেখা যায় না। রাতে দুর্ঘটনার মূল কারণ এসব এলইডি লাইট। এ বিষয়ে কারও কোনো নজর নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

জয়নুল আবেদিন নামে এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, প্রাইভেটকার, বাস, ট্রাকসহ এখন সব গাড়িতে এলইডি লাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে রাস্তায় মোটরসাইকেল চালাতে অনেক সমস্যা হয়। মাঝেমধ্যে বাইক থামিয়ে দিতে হয়, এই তীব্র আলোর কারণে রাস্তা দেখা যায় না। একটু এদিক-সেদিক হলেই বাস ও ট্রাকের নিচে চাপা পড়তে হবে।

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে নিউমার্কেট থেকে পান্থপথ যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি প্রাইভেটকারের সাদা আলো আমার চোখে এসে লাগে, আমি কিছু না দেখতে পেয়ে বাইকের গতি কমিয়ে দিই। পরে দেখা যায়, আমার সামনেই একটি কুকুর দাঁড়িয়ে ছিল। সে সময় মোটরসাইকেল স্লো না করলে হয়তো দুর্ঘটনার শিকার হতাম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে যেমন হাই বিম ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা নেই, অন্যদিকে অবৈধ লাইট বিক্রি হচ্ছে অবাধে। আবার আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। এসব কারণেই রাতে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।

বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ কালবেলাকে বলেন, যানবাহনের হেডলাইট মডিফাই করে এলইডি লাইট বসানো হচ্ছে। বর্তমানে এর পরিমাণ বেড়েছে। এ আলো সড়ক নিরাপত্তার জন্য অনুকূল নয়, ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, রাতে এ হেডলাইটের উজ্জ্বল আলোর কারণে দৃশ্যমানতা কমে যায় অন্য গাড়ির চালকদের। বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির চালকদের মনোযোগ নষ্ট করে এই আলো। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কা বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, গাড়ির হেডলাইট প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহারের বিষয়ে আরও কড়াকড়ি করা দরকার। কোনোভাবেই গাড়িতে এলইডি লাইট ব্যবহার করা উচিত নয়। যেসব গাড়ির মালিক এ কাজ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে নানা বিষয়ে কাজ হচ্ছে, যার মধ্যে বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, গাড়ির ফিটনেস, চালকের অতিরিক্ত গাড়ি চালনার ফলে ক্লান্তি ও মনোযোগ ব্যাহত হওয়া উল্লেখযোগ্য। কিন্তু রাতের বেলা বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির হেডলাইটের নিষিদ্ধ এলইডি লাইটও যে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে থাকে, সেটি নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না। এ আলো চোখে পড়লে মুহূর্তেই সব অন্ধকার হয়ে যায়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এর জন্য কঠোর আইন করা দরকার।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার কালবেলাকে বলেন, যানবাহনে অবৈধ এলইডি হেডলাইটের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। এটা ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এলইডি হেডলাইট লাগানো যানবাহনে সব সময়ই মামলা করা হচ্ছে। অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ এবং ডাম্পিং করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আগামীতেও আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্টদের নির্দেশনা দেওয়া আছে, প্রতিটি মোড়ে তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।

অটোরিকশা-ইজিবাইকে এলইডি লাইট ব্যবহার বাড়ার কারণ কী: কোনো নিয়মকানুন না মেনেই ঢাকায় চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা-ইজিবাইক। এসব অটোরিকশা-ইজিবাইক চালকদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে আছে যত্রতত্র পার্কিংয়ের অভিযোগ। যখন যেখানে ইচ্ছা দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী পরিবহন করেন তারা। প্রায় সব অটোরিকশা-ইজিবাইকেই এলইডি লাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্তত পাঁচজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক জানিয়েছেন, এলইডি লাইটে চার্জ কম লাগে, তাই তারা এসবের দিকে ঝুঁকছেন।

ঢাকার অটোরিকশার খুচরা পার্টস বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলোর সঙ্গে যেসব হেডলাইট দেওয়া হয়, সেগুলোতে আলো খুব কম হয়। যার ফলে এসবের মালিকরা ওই হেডলাইট বাদ দিয়ে বেশি আলোর জন্য এলইডি লাইট ব্যবহার করছেন। সাধারণত এসব লাইট ১৫০ থেকে ৪০০ টাকায় পাওয়া যায়। কমদামের এসব লাইটে চার্জও কম খরচ হয়।

এলইডি লাইটে চোখের বিপদ: এলইডি লাইট মানুষের চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিক আলোকরশ্মি উৎপন্ন করায় এলইডি লাইট সরাসরি চোখের রেটিনার ওপর আঘাত করে। এতে দৃষ্টিশক্তির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। কাজেই যানবাহনে এ ধরনের লাইটের ব্যবহার পরিহার করা উচিত।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহা. আমানুল্লাহ বলেন, যে কোনো তীব্র আলো চোখের ভেতর রেটিনার সেন্টার পয়েন্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সূর্যগ্রহণের সময় বিকিরিত রে-র দিকে তাকালে সেই আলো রেটিনাকে পুড়িয়ে দেয়, আর এলইডি ফগলাইট, সার্চলাইট ও লেজার লাইটের তীব্র আলো রেটিনার আরও বেশি ক্ষতি করে। যাদের চোখে মাত্র ছানি পড়া শুরু হয়েছে, তারা এ আলোর সামনে পড়লে চোখে সম্পূর্ণ অন্ধকার দেখেন। বর্তমানে এ ধরনের আলোর কারণে শিশুদেরও চোখের ব্যাপক সমস্যা দেখা যাচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুঃসময় যেন পিছুই ছাড়ছে না পাক তারকা ক্রিকেটারের, এবার যেন হারাবেন পদটাই

হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ে যা জানা জরুরি

বিপাকে স্বরা ভাস্কর

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মাঝ আকাশে নগ্ন অবস্থায় ধরা বিমানবালা

মরদেহ দাফনের পর জীবিত ফিরে এলো রবিউল!

সারাক্ষণ চার্জার প্লাগে রাখেন? জেনে নিন কী হতে পারে

এশিয়া কাপে ভারতের একাদশ কেমন হবে, জানালেন তারকা ক্রিকেটার

বায়ুদূষণের শীর্ষে দুবাই, ঢাকার অবস্থান কত

মৌদিকে আদর্শগত শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করলেন বিজয়

১০

কেবিন ক্রুদের আসল কাজ কী

১১

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১২

বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের বড় সুখবর দিল সরকার

১৩

জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে এবার আইপিএলে কাজ করা অ্যানালিস্ট

১৪

আমরা লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে : নেতানিয়াহু

১৫

৩ প্যাকেট কাঁচা নুডলস খেয়ে ১৩ বছরের কিশোরের করুণ পরিণতি

১৬

তিস্তার বন্যায় কৃষকের স্বপ্ন ভাসছে অনিশ্চয়তার অথৈ জলে

১৭

ব্যাংকিং টিপস / ব্যাংকের সুদের হার ও চার্জ সম্পর্কে সচেতন থাকুন

১৮

শতভাগ লুটপাটমুক্ত দল জামায়াতে ইসলামী : ড. মোবারক

১৯

মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে এসে মারা গেলেন ছেলেও

২০
X