

গাজীপুরের টঙ্গীতে কয়েক মাস ধরে ভয়াবহভাবে বেড়েছে ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড। এসব ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রোববার বিকেলে জনতার বিস্ফোরণ ঘটে। চেরাগ আলী মোড়, টঙ্গী সরকারি কলেজ গেটসহ বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক নেতারা মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশ নেন। ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ মানুষের দাবি— ‘টঙ্গীকে অপরাধমুক্ত করো, মানুষের জীবন বাঁচাও।’
টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধনে আহ্বায়ক প্রভাষক বশির উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিদিন রাস্তায় রক্ত ঝরছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে জনগণ নিজেদের রক্ষার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।’ ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক প্রত্যয় বেপারী বলেন, ‘টঙ্গী মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। আমরা আজ জানিয়ে দিলাম—অপরাধীদের হাতে এই শহর ছেড়ে দেব না।’
ঠিক একই সময়ে টঙ্গী সরকারি কলেজের সামনে বাংলাদেশ ইউথ রেভলিউশন-BYRL-এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতার চিত্র তুলে ধরেন। এক ছাত্র বলেন, ‘ক্লাস শেষে গেটে দাঁড়াতে ভয় লাগে। কে কখন আক্রমণ করবে বলা যায় না।’ একজন শিক্ষক মন্তব্য করেন, ‘শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, এটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক।’
এর আগে গতকাল বাটা গেট ফ্লাইওভারে অফিসগামী ট্রাস্ট মিটারের কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমানকে ছিনতাইকারীরা হত্যার পর পুরো টঙ্গীতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আজ (গতকাল) তার পরিবার জিএমপি কমিশনারের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করে দ্রুত আসামি গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ও সদ্য প্রমোশনপ্রাপ্ত ডিআইজি জাহিদুল হাসান কালবেলাকে বলেন, ‘ছিনতাইকারী ও মাদকের বিরুদ্ধে আমি জিহাদ ঘোষণা করেছি। কোনো অপরাধী ছাড় পাবে না।’ তিনি জানান, গত রাতে ডিসি ক্রাইম মহিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে কয়েকজন ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে আইনি জটিলতায় অনেক আসামি দ্রুত জামিনে বেরিয়ে আসে, যা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।
টঙ্গীর বাজার রোড, ফায়ার সার্ভিস মোড় ও রেলস্টেশন এলাকা বর্তমানে ছিনতাইয়ের হটস্পট—এমন অভিযোগ জানিয়ে সাধারণ মানুষ বলেন, রাতে বের হওয়া মানেই জীবন বাজি রাখা। এক দোকানি বলেন, ‘টাকা দিই, মোবাইল দিই, তারপরও মারধর করে।’ এক নারী শ্রমিক জানান, দুবার ছিনতাই হয়েছে। ভাগ্য ভালো বেঁচে গেছি।
মানববন্ধনে কয়েকটি দাবি উত্থাপন করা হয়—সিদ্দিকুর হত্যার মূল আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার, টঙ্গীর হটস্পটে স্থায়ী পুলিশ টহল, পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি স্থাপন, মাদকচক্রের গডফাদারদের গ্রেপ্তার এবং দায়িত্বহীন পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
মন্তব্য করুন