কাজী নজরুল ইসলামের (৪৭) জন্ম কুমিল্লায়। চাকরির সুবাধে ২৫ বছর ধরে তিনি থাকেন চট্টগ্রাম নগরীতে। ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন একটি কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) কোম্পানিতে। চাকরির সেই আয়ে ভালোই চলছি মা, স্ত্রী, প্রতিবন্ধী মেয়ে ও স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে নজরুলের ছোট্ট সংসার। কিন্তু করোনা শুরুর আগ মুহূর্তে ২০১৯ সালে হঠাৎ চাকরি হারান নজরুল। এরপর শুরু হয় লকডাউন আর জীবনের অন্ধকার অধ্যায়। করোনা কাটিয়ে জীবনের ছন্দে ফেরার চেষ্টার মধ্যেই শুরু হয় বিশ্বমন্দা। চাকরি হারানোর পর থেকে নতুন করে জীবন শুরুর তাগিদে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু বয়সটা জীবনের পড়ন্ত বেলার কাছাকাছি চলে আসায় নতুন চাকরি পাননি বলে ধারণা নজরুলের। এরপর একটি চাকরির জন্য তিনি মন্ত্রীর দ্বারস্থ হন, যোগাযোগের চেষ্টা চালান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়েও। প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল নম্বরটি জোগাড় করে যোগাযোগের চেষ্টা করেন, খুদেবার্তা পাঠান হোয়াটসঅ্যাপে। কিন্তু কোনোভাবেই সফল হননি। একটি চাকরির আশায় তিন বছর ধরে গণভবনের দিকে তাকিয়ে আছেন।
নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ১৯৯৮ সালে ডিগ্রি পাস করেছি। এরপর ২০০০ সালের দিকে সিঅ্যান্ডএফ কোম্পানিতে চাকরি শুরু করি। কিন্তু ২০১৯ সালে কোম্পানির অবস্থা খারাপ হওয়ায় অনেক লোককে ছাঁটাই করা হয়। এরপর শুরু হয় অভাব-অনটন। নিজের আয়ে সীতাকুণ্ডে কিছু জায়গা কিনেছিলাম। পরিস্থিতি খারাপ থাকায় সেগুলো বিক্রি করে দিই, কুমিল্লায় পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছি গত পাঁচ বছরে। সংসারে প্রতি মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ আছে। খরচ জোগাতে সহায়-সম্বল বিক্রি করার পর ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ি। এখন মরলে লাখ লাখ টাকার ঋণ নিয়ে মরতে হবে। জানি না আমার ছেলেমেয়েরা কীভাবে এ ঋণ শোধ করবে।
তিনি আরও বলেন, চাকরির খোঁজে প্রতিদিন সকালে বের হয়ে সন্ধ্যায় ফিরি। অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে, আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত চাকরি দিতে পারেনি কেউ। এমনকি কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি, বড় বড় ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হয়েও চাকরি পাইনি। শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না পেয়ে ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে একটি কর্মসংস্থান বা চাকরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি ফোনও এসেছিল। কিন্তু পরে যোগাযোগের চেষ্টা করে সফল হইনি। সব সম্বল হারিয়ে আমি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠিও দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছেন, চেষ্টা করে দেখি আমার ছোট্ট ছেলেমেয়েদের ভাগ্যে কী আছে।
নগরীর হালিশহরের রমনা আবাসিকে ছোট্ট ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন নজরুল। দুই সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলে নাহিদুল ইসলাম এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। বড় মেয়ে সুমাইয়া ইসলাম মানসিক প্রতিবন্ধী। নজরুলের বাবা মারা গেছেন আরও বছর তিনেক আগে। এর পর থেকেই মা সুফিয়া বেগমও থাকতে শুরু করেন নজরুলের বাসায়। ঋণে জর্জরিত নজরুল বৃদ্ধ মা, অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান বলেন, নজরুল ইসলামের চাকরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন