বৃষ্টি শেখ খাদিজা
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৮ এএম
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৮ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাজবেলা

প্রসাধনী দেশি নাকি বিদেশি?

মডেল: মৌ রহমান | ছবি: রনি বাউল
মডেল: মৌ রহমান | ছবি: রনি বাউল

ঘরের ড্রেসিং টেবিল মানেই নানান প্রসাধনী পণ্যের পসরা! ক্রিম থেকে শুরু করে পাউডার, লোশন, লিপস্টিক, আইলাইনার, আইশ্যাডো, কাজল—কত কিছুই না রাখতে হয়! একেক বেলায় একেক উপলক্ষে একেকটি কাজে লাগে। একইভাবে স্নানকক্ষে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, সাবান, শাওয়ার জেল, ক্লিনজার, ফেসওয়াশ নিত্যব্যবহারের প্রসাধনী হিসেবে থাকে। কিন্তু এসবের মধ্যে দেশে উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে বিদেশি প্রসাধনীই থাকে বেশি। এ নিয়ে লিখেছেন— বৃষ্টি শেখ খাদিজা

বাংলাদেশে সৌন্দর্য প্রসাধনীর বাজারে বড় একটি জায়গা দখল করে রেখেছে বিদেশি পণ্য। সৌন্দর্যসচেতন নারী-পুরুষ নিত্যদিন যত কিছু ব্যবহার করেন, সেসবের বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি হওয়া বলা যায়। পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত নিখুঁত পরিচর্যার জন্য বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভর করেন অনেকে। মাত্র ১-২ শতাংশ মানুষ দেশে উৎপাদিত প্রসাধনী ব্যবহার করেন।

দেশীয় প্রসাধনী পণ্যের দাম হাতের নাগালে থাকা সত্ত্বেও ক্রেতাদের মধ্যে অনীহা দেখা যায়। গ্রাহকদের আস্থা কম থাকার মূল কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে কালবেলার ‘সারাবেলা’কে হার্বালিস্ট ও আমলকী ব্র্যান্ডের কর্ণধার নন্দিতা শারমিন বলেন, ‘মানুষ আমাদের দেশীয় প্রসাধনী পণ্যের কোয়ালিটিতে বিশ্বাস করে না। তারা ধরেই নেন দেশে যেসব পণ্য তৈরি হয় সেগুলোর গুণগত মান কম। তাই দেশীয় প্রসাধনী পণ্য কেনার ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ ও ভরসার জায়গা কম।’

শুধু গুণগত মান নয়, দেশে প্রসাধনী পণ্য উৎপাদনে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয় উল্লেখ করে নন্দিতা শারমিন বলেন, ‘ব্যবসায়ী যারা রয়েছেন তাদের বড় পরিসরে প্রসাধনী পণ্য তৈরির জন্য প্রথমেই প্রয়োজন একটি ফ্যাক্টরি। এজন্য প্রচুর মূলধন, মেশিন ও উপাদানের দরকার হয়, যা আমাদের দেশে সহজলভ্য নয়। আমরা যদি আমাদের পাশের দেশ ভারতকে ধরি তাহলে তারা নিজেরাই তাদের দেশে প্রসাধনী পণ্য উৎপাদন করছে এবং ক্রেতা হিসেবে তারা তাদের দেশের জনগোষ্ঠীকেই পাচ্ছে, যা তাদের জন্য অনেক বড় একটি সুবিধা। এ ছাড়া দাম থেকে শুরু করে প্যাকেজিং এবং মানের কারণে বিদেশি পণ্যের সঙ্গে আমাদের দেশীয় পণ্যকে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়। বিশেষ করে প্যাকেজিং অনেক বড় একটি ভূমিকা পালন করে। বিদেশি পণ্যের সঙ্গে যদি আমাদের দেশীয় পণ্যের প্যাকেজিংয়ের তুলনা করা অনেকটা মুশকিলই বটে। দেখা যায়, ওদের মতো প্যাকেজিংয়ের মান যদি আমরা আনতে চাই তাহলে সেই মোড়কগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। এটি অনেক বড় একটি বাধা বলে আমি মনে করি।’

এই মুহূর্তে এসে বেশ আনন্দের সঙ্গেই বলা যায়, আমাদের বেশকটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান আছে যাদের কারণে সৌন্দর্যপণ্যের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ধীরে ধীরে বেশ পোক্ত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রসাধনী ব্র্যান্ড আছে বেশ কয়েকটি। অনেক আগে থেকে কিউট, মেরিল, তিব্বতের নাম জানেন অনেকে। সাম্প্রতিক সময়ে স্কিন ক্যাফে, রিবানা, আড়ং আর্থ, রাজকন্যা, আমলকী, অর্গানিকেয়ার, নির্ভানা কালার, লিলি-রিমার্কসহ বেশ কয়েকটি দেশীয় ব্র্যান্ড যুক্ত হয়েছে। দেশীয় এত ব্র্যান্ড থাকার পরও বিদেশি প্রসাধনীর দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা। এ প্রসঙ্গে সাজগোজের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আজমিরী বিনতে রেজাক বলেন, ‘বিদেশি পণ্যের দিকে ক্রেতাদের আগ্রহের প্রধান একটি কারণ হচ্ছে তাদের ব্র্যান্ড দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত এবং তাদের শক্তিশালী ব্র্যান্ড ইমেজ। পাশাপাশি সেলিব্রেটি এনডোর্সমেন্ট, প্রমোশন, বিজ্ঞাপন এবং সামাজিক প্রভাবও এখানে বড় একটি বিষয়।’

তবে সবাই যে শুধু সৌন্দর্যচর্চার জন্য বিদেশি পণ্যের ওপর আস্থা রাখছেন, তা কিন্তু নয়। এখনো এমন অনেকে রয়েছেন যাদের একমাত্র ভরসা দেশীয় পণ্যেই। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তানজিলা মেঘলা বলেন, ‘শীত এলে অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় ভুগতে হয়। অনলাইনে আন্তর্জাতিক বিউটি ইনফ্লুয়েন্সারদের কনটেন্ট দেখে আমি অনেক ট্রেন্ডি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে কোনো সুফল পাইনি। শেষমেশ মায়ের কথা শুনে তিব্বত পমেড ব্যবহার করি। আর আমার মনে হয় না আমি কখনো এটা ব্যবহার করা বন্ধ করব।’

বিদেশি প্রসাধনী পণ্যের সঙ্গে আমাদের দেশীয় পণ্যের তুলনায় ভালো-খারাপ দিকগুলো নিয়ে সাজগোজের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আজমিরী বিনতে রেজাক বলেন, ‘বিদেশি প্রসাধনী পণ্য আধুনিক প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়, দীর্ঘকাল ধরে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি গ্রাহকের বেশি আস্থা এবং নতুন বিউটি ট্রেন্ড ও বৈচিত্র্যময় পণ্য পাওয়া, যা দেশীয় বাজারে সহজে পাওয়া যায় না। অন্যদিকে দেশীয় ব্র্যান্ডের পণ্যের ভালো দিক তুলে ধরলে এটি স্থানীয় মানুষের ত্বক এবং শারীরিক প্রয়োজনের সঙ্গে মানানসই করে তৈরি করা হয়। দেশীয় পণ্য সাধারণত বিদেশি পণ্যের তুলনায় সস্তা এবং এর উপাদানও দেশীয় পরিবেশের জন্য উপযুক্ত। সেইসঙ্গে দেশের ভেতরে কর্মসংস্থান তৈরিতে তো দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো সরাসরি ভূমিকাও রাখছে।’

বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের পকেটে বিশাল অঙ্কের অর্থ ভরে ভোক্তাদের হাতে যে পণ্য তুলে দিচ্ছে, তা কি মানুষের জন্য নিরাপদ? আশ্চর্যজনক বিষয় হলেও সত্যি, অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের অনেক মারাত্মক কুফল থাকলেও কাউকে এই প্রশ্ন করতে খুবই কম দেখা যায়। বিশেষ করে অনেক প্রতিষ্ঠান দ্রুত ফল পাওয়ার জন্য প্রসাধনীতে এমন অনেক রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিন্তু পণ্যের গায়ে তারা কোনো সতর্কবার্তা লেখে না। বিশেষ করে যেসব পণ্য অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের ত্বকের রং পরিবর্তন করে ফেলে বা শরীরের প্রাকৃতিক কিছু প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করে, সেসব পণ্যের ব্যাপারে ভালোভাবে জেনে নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। অনেক প্রসাধনী বা মেকআপ দ্রব্যের ব্যবহার ঘটাতে পারে মাথাব্যথা, অ্যালার্জি, চর্মরোগ, এমনকি গর্ভধারণে অক্ষমতা, ফুসফুসে সমস্যা, বিষক্রিয়া আর ক্যান্সারের মতো ব্যাধি। গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অনেক রাসায়নিক প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবহার।

প্রসাধনী সংরক্ষণের উপায়

প্রসাধনী যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হয়, তাহলে প্যাকেটের গায়ে থাকা এক্সপায়ার ডেটের আগেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সব প্রসাধনীই তাপ, আর্দ্রতা ও সূর্যালোকের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন প্রসাধনী কোথায় ও কীভাবে সংক্ষণ করা উচিত।

l প্রসাধনী সবসময় বড় বাক্সে রাখুন। প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদা খোপ ব্যবহার করুন।

l বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রিম ৫-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা উচিত। এর চেয়ে কম তাপমাত্রায় সেটি শক্ত হয়ে যেতে পারে। অনেক বেশি তাপমাত্রায় থাকলে ক্রিম বেশি নরম হয়ে যায়। ফলে সেটাও খেয়াল রাখা চাই।

l কোনো প্রসাধনীর ঢাকনা খুলে রাখবেন না ও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলে ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বকে তিল হয়ে র‌্যাশ দেখা দিতে পারে।

l সরাসরি রোদ বা তাপ লাগে এমন জায়গায় প্রসাধনী রাখবেন না। এমনকি ফ্রিজেও রাখবেন না। এতে করে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সেটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

l প্রসাধনী ব্যবহারের বিভিন্ন অনুষঙ্গ হিসেবে ব্রাশ, পাফ বা স্পঞ্জ এসব নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং না শুকানো পর্যন্ত ব্যবহার করবেন না।

l নিজের ব্যবহার করা পাফ, স্পঞ্জ, তুলি অন্যকে ব্যবহার করতে দেবেন না আর নিজেও অন্যের কিছু ব্যবহার করবেন না। এটি মেনে চললে কারও ত্বকে সমস্যা থাকলে অন্যের মাঝে ছড়াবে না।

l লিপস্টিক ফ্রিজে রাখলে অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। বেস্ট রেজাল্ট পেতে ফ্রিজে ৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় রাখতে পারলে ভালো। শুকিয়ে গেলে কিংবা বাজে গন্ধ বের হলে লিপস্টিক ব্যবহার করবেন না।

l আইলাইনার বা লিপলাইনার পেনসিল রুম টেম্পারেচারে রাখুন। তবে সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখবেন। নিয়মিত শার্প না করলে তাতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারে। সুতরাং নিয়মিত শার্প করে নিতে হবে।

l ওয়াটার বেজড ফাউন্ডেশন অনেক সময় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই শুকিয়ে যায়। এখান থেকে রেহাই পেতে অ্যালকোহল ফ্রি টোনার কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিন।

l অয়েল বেজড ফাউন্ডেশন মাঝেমধ্যে ঝাঁকিয়ে রাখবেন। এর ফলে পুরোটা সমানভাবে মিশে থাকে।

l যে কোনো পণ্যের গায়ে ব্যবহারের ও যত্নের বিশেষ কিছু নির্দেশনা লেখা থাকে। সেগুলো আগে পড়ে তারপর ব্যবহার করবেন।

l চোখের জন্য উপযোগী মেকআপ পণ্য তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। যেমন মাশকারা সিল খোলার চার মাসের মধ্যে নষ্ট হতে থাকে। মাশকারা জমে গেলে কখনো পানি মিশিয়ে সেটা ব্যবহার করবেন না। তাতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ভয় থাকে। এ ছাড়া কোনো আলাদা পণ্য একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করবেন না।

l পাউডার যে কোনো রুম টেম্পারেচারে সংরক্ষণ করা সম্ভব।

l টোন ক্রিমগুলো আলো ও আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখা ভালো। তবে চাইলে ফ্রিজে রাখতে পারেন।

l ত্বকের যত্নে ব্যবহারের উপযোগী অন্যান্য প্রসাধনী ফ্রিজে রাখা যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ ও ল্যাবরেটরি স্কুলের সংঘর্ষ

আকিফ জাভেদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে রংপুরের আটে আট

নিজস্ব প্রযুক্তির নজরদারি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করল পাকিস্তান

লস অ্যাঞ্জেলেসের আগুন ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’তে লাগার সুযোগ আছে কি?

পাকিস্তানের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ক্ষীর বিক্রি করছেন ট্রাম্প!

রেলওয়ে মহাপরিচালকের কাছে ছাত্রদলের ১৩ দাবি

তিন দল নিয়ে নারী বিপিএল শুরুর পরিকল্পনা বিসিবির

২,৫০০ জনের সাজা মওকুফ করলেন বাইডেন, কারা তারা?

আদিবাসীদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তি দাবি ঐক্য পরিষদের

লন্ডনে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় খতমে কোরআন 

১০

দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দেশটাকে স্থিতিশীলতায় নিয়ে আসুন : এ্যানি

১১

খামারবাড়িতে বিএনপিপন্থি কৃষিবিদদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

১২

লস অ্যাঞ্জেলেসে আগুনে আলোচিত হচ্ছে কোরআনের আয়াত

১৩

কেশবপুরে ‘আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট’ অনুষ্ঠিত

১৪

এনসিটিবির সামনে সংঘর্ষ / ৩০০ জনের বিরুদ্ধে পাহাড়ি ছাত্র-জনতার মামলা

১৫

‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিগত ১৬ বছর বগুড়া বিমানবন্দর চালু করা হয়নি’

১৬

‘অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল, তাদের নতুন কিছু দেওয়ার নেই’

১৭

আত্মগোপনে থাকা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা নিশাত গ্রেপ্তার

১৮

আ.লীগ চোরের খনি : প্রিন্স

১৯

বিএনপি নেতা হত্যায় যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

২০
X