সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন দেশের বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মাদ রাসেল। জামিনে কারা মুক্তির পর প্রথম ক্যাম্পেইন ‘বিগ ব্যাং’ এর ঘোষণা দেন। এরপরই শুক্রবার লাইভে আসার ঘোষণা দেন তিনি।
পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) রাত ৮টায় ফেসবুক লাইভে আসেন তিনি।
ফেসবুক লাইভের শুরুতেই মোহাম্মাদ রাসেল বলেন, বিগত দিনগুলোতে হয়ত আপনারা খারাপ ছিলেন। কারণ ইভ্যালিতে অর্ডার করা পণ্য আপনারা পাচ্ছিলেন না। এজন্য আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এতদিন আমি কারাগারে ছিলাম।
জানা গেছে, নতুন করে ব্যবসা শুরু উদ্যোগ নেওয়ায় ইভ্যালির প্লাটফর্মে পণ্য বিক্রিতে ব্যাপক সাড়া পড়ছে। প্রথম অফারে প্রায় দেড় হাজার বিক্রেতা তাদের নানা পণ্য নিয়ে হাজির হচ্ছে। বিগ ব্যাং-এ প্রায় ১৫ হাজার ধরনের কয়েক লাখ পণ্যে নানা রকম অফার থাকছে।
অফারের মধ্যে আকর্ষণীয় ১০ টাকায় পাঞ্জাবি, ১৬ টাকায় কয়েকটি গ্যাজেট আইটেম ও ১০০ টাকা প্রেসার কুকারসহ বেশকিছু পণ্যে সারপ্রাইজিং অফার থাকছে। পাশাপাশি বেশিরভাগ পণ্যেই ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড় থাকছে। তবে বিশেষ সারপ্রাইজ থাকছে মোবাইল ফোনে।
এবার কোনো পণ্যে ইভ্যালি নিজ থেকে ভর্তুকি বা লোকসান দিচ্ছে না। সকল পণ্যেই বিক্রেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে ছাড় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিগ ব্যাং অফারে পুরোটাই থাকবে ক্যাশ অন ডেলিভারি। ফলে পণ্য বুঝে নিয়ে মূল্য পরিশোধ করবেন গ্রাহকরা। অন্যদিকে গ্রাহকদের পরিশোধ করা অর্থ সরাসরি চলে যাবে বিক্রেতার হাতে।
ইভ্যালির এবারের ক্যাম্পাসে অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠানও তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম ওয়ালটন, আখতার ফার্নিচার, স্যামসাং, মার্সেল, যমুনা ইলেক্ট্রনিক্স, মিনিস্টার ইলেক্ট্রনিক, বাজাজ, নোকিয়া, রিয়েল মি, মেক্সিমাস, ভিভো, ওয়ান প্লাস।
দীর্ঘ সময় পর এই ক্যাম্পেইনে ইভ্যালি বড় সাড়া ফেলতে পারবে বলে আশা করছেন মোহাম্মদ রাসেল ও তার সঙ্গে থাকা বিক্রেতারা। এ বিষয়ে মোহাম্মদ রাসেল কালবেলাকে বলেন, প্রায় দেড় হাজার বিক্রেতার পণ্য নিয়ে আজকের অফার উন্মুক্ত করা হচ্ছে। কোনো পণ্যেই লোকসান দেওয়া হচ্ছে না। তবে বেশিরভাগ পণ্যই শুধু উৎপাদন খরচে বিক্রি করা হবে। এজন্য গ্রাহকরা বাজার মূল্যের তুলনায় বিশাল ছাড় পাবে। অফারের আগে লাইভে আরও বিস্তারিত জানানো হবে।
উল্লেখ্য, ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ২০১৮ সালে ইভ্যালি প্রতিষ্ঠা করে হইচই ফেলে দেন মো. রাসেল। মাত্র দুই বছরের মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে ইভ্যালি। কিন্তু ঋণের বোঝাও বেড়ে যায় তাদের। অভিযোগ আছে, দেশি ও বিদেশীয় কয়েকটি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান মিলে ইভ্যালিকে থামানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে। মোটা অঙ্কের বরাদ্দও করে তারা। একপর্যায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেপ্তার করা হয় রাসেলকে।
কিন্তু রাসেলকে গ্রেপ্তারে হতাশ হন প্রতিষ্ঠানটির লাখ লাখ গ্রাহক। তারা ইভ্যালির ব্যবসা চালুর জন্য আন্দোলন শুরু করেন। রাসেলকে মুক্তি দিতে ২০ হাজারের বেশি ক্রেতা-বিক্রেতা আদালতের কাছে লিখিত আবেদন করেন। এর মধ্যে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন রাসেল ও তার প্রতিষ্ঠান। সবশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। তবে তার স্ত্রী ও ইভ্যালির চেয়ারম্যান অনেক আগেই মুক্তি পেয়েছেন।
মন্তব্য করুন