এ জেড ভূঁইয়া আনাস, ঢাকা
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৮ এএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

তারল্য সংকটে ব্যাংক, ডলার জমা রেখে নিচ্ছে নগদ টাকা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

তারল্য সংকট মেটাতে কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলার জমা রেখে টাকা ধার নেওয়া শুরু করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কারেন্সি সোয়াপ বা টাকা-ডলার অদলবদল শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২টি ব্যাংক ৫৮ দশমিক ৮০ কোটি (৫৮৮ মিলিয়ন) ডলার জমা রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এর বিপরীতে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রে জানা যায়, ৩০ মেয়াদি এসব টাকা-ডলার অদলবদলের সোয়াপ হয়েছে। ৩০ দিন শেষ হলেই ব্যাংকগুলো টাকা দিয়ে ডলার নিয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা জমা রেখে কোনো ব্যাংক এখনো ডলার নেয়নি। মূলত যাদের রেমিট্যান্স বেশি আসছে, তারাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সোয়াপ করছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ১১০ টাকা দরে ব্যাংকগুলো প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনছে। এই দামে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার অদলবদল করেছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার নিয়ে সমপরিমাণ টাকা দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বেশ কিছু ব্যাংক ডলার জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে। মূলত যাদের রেমিট্যান্স বেশি আসছে, তারাই সোয়াপ করছে। আবার যেসব ব্যাংকের তারল্য সংকট রয়েছে তারাও সোয়াপ করছে।

ব্যাংকগুলো ডলার জমা দিয়ে টাকা ধার নেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। ২০ ফেব্রুয়ারি বেড়ে হয় ২০ দশমকি ১৯ বিলিয়ন ডলার। গত সোমবার দিন শেষে রিজার্ভ আরও বেড়ে ২০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসেবে ওই দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি টাকা-ডলার অদলবদল পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এ ব্যবস্থার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ডলার-টাকা অদলবদল করতে পারছে। এ পদ্ধতিতে টাকা বা ডলার জমা রেখে ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য বিপরীত মুদ্রা নিতে পারবে ব্যাংক। যে মুদ্রা নেওয়া হবে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সেই মুদ্রা ফেরত দিতে হবে। মুদ্রার অদলবদলের জন্য নির্ধারিত সময়ের জন্য সুদ পাবে একটি পক্ষ। প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ক্ষেত্রে টাকার নীতি সুদহার রেপো এবং ডলারের বেঞ্চমার্ক রেট সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটের (এসওএফআর) মধ্যে যে পার্থক্য থাকবে সে পরিমাণ সুদ পাবে।

ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্ট বলছেন, টাকা-ডলার অদলবদলের এ ব্যবস্থা উভয়পক্ষের জন্যই লাভজনক। কারণ, উদ্বৃত্ত ডলারের বিপরীতে ব্যাংকগুলো তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পেয়ে যাবে। আবার নির্ধারিত সময় পর টাকা ফেরত দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ ডলার পেয়ে যাবে। এ ব্যবস্থার আওতায় সর্বনিম্ন ৫০ লাখ ডলার বা তার সমপরিমাণ টাকা অদলবদল করা যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অনেক দিন ধরেই ডলার ও টাকার সংকটে ভুগছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংকের কাছে ডলার হোল্ডিং বেশি থাকলেও টাকার সংকট রয়েছে। আবার কারো কাছে নগদ অর্থ রয়েছে কিন্তু ডলার সংকট রয়েছে। এ রকম ক্ষেত্রে যার কাছে যে মুদ্রা থাকবে সাময়িক সময়ের জন্য বিপরীত মুদ্রা নিতে পারবে। তুলনামূলক কম সুদ ও সহজ শর্তে অদলবদল সুযোগের কারণে বাজারে তারল্য সংকট কমতে পারে।

দেশে গত দুই বছর ধরে ডলার-সংকট চলছে। এর ফলে রিজার্ভ কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। ডলার-সংকট সামাল দিতে আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তাতে চাহিদা কিছুটা কমলেও ডলারের সংকট এখনো পুরোপুরি কাটেনি। ফলে আমদানি দায় মেটাতে এখনো প্রতি ডলারের জন্য ১২৩ টাকা পর্যন্ত দাম দিতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। আবার কিছু ব্যাংক ঘোষণার চেয়ে বেশি দাম দিয়ে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনছে।

ডলারের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকে টাকারও সংকট চলছে। কারণ, ব্যাংকগুলোকে নগদ টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হচ্ছে। আবার অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেও তারল্য সংকটে পড়েছে কিছু ব্যাংক। তবে কোনো কোনো ব্যাংকের কাছে বাড়তি কিছু ডলারও রয়েছে। সেসব ডলার এখন তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে তার বিপরীতে সমপরিমাণ টাকা নিচ্ছে।

জান যায়, তারল্য সংকট মেটাতে গত রোববার কয়েকটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রায় ১৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা ধার নেয়। আর আন্তঃব্যাংক কল-মানিতে প্রায় ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা ধার করে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাদির মৃত্যুর খবরে উত্তাল চট্টগ্রাম

আমাদের পথ ধ্বংসের নয়, পুনর্গঠনের : হাসনাত আবদুল্লাহ

‘আমরা সবাই হাদি হব, যুগে যুগে লড়ে যাব’

এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি প্রথম আলো কার্যালয়ের আগুন

ঢাবিতে বঙ্গবন্ধু হলের নাম বদলে এখন ‘শহীদ ওসমান হাদি হল’

গভীর রাতে সাধারণ জনগণকে যে আহ্বান জানাল ইনকিলাব মঞ্চ

চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনে হামলার চেষ্টা

গণমাধ্যমে হামলা ও আগুন: যা বললেন ভিপি সাদিক কায়েম

কারও উসকানিতে পা না দিতে আহ্বান সংস্কৃতি উপদেষ্টার

চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সামনে বিক্ষুব্ধ ‘ছাত্র জনতার’ অবস্থান

১০

হাদির খুনিদের হস্তান্তর না হলে আন্দোলন থামবে না: আসিফ মাহমুদ

১১

ওসমান হাদির মৃত্যু: দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ

১২

হাদির জানাজা কখন, জানাল ইনকিলাব মঞ্চ

১৩

শুক্রবার দেশে পৌঁছাবে হাদির মরদেহ

১৪

ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তাল জাবি 

১৫

‘আগুন সন্ত্রাস হাদি ভাইয়ের পথ নয়’

১৬

হাদির মৃত্যু: ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বিক্ষুব্ধ জনতার আগুন-ভাঙচুর

১৭

হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে ইডেন কলেজে বিক্ষোভ মিছিল

১৮

শাহবাগে অবস্থান নিলেন জুলাই মঞ্চের কর্মী-সমর্থকরা

১৯

শরিফ ওসমান হাদি এক অবিচল সাহসের নাম: নাছির উদ্দীন নাছির

২০
X