কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫০ পিএম
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পদ্মা ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক

পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড। ছবি : সংগৃহীত
পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড। ছবি : সংগৃহীত

দেশে প্রথমবারের মতো ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক পরিচালিত এক্সিম ব্যাংকের সাথে একীভূত হচ্ছে প্রচলিত নিয়মে পরিচালিত দুর্দশাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংক। গত সোমবার বেসরকারি খাতের এ দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে মার্জারের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একীভূত কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে আতঙ্ক বেড়েছে আমানতকারীদের। যার প্রভাবে পদ্মা ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক শুরু হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার দিন ও পরের দিন ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখায় ভিড় করছেন আমানতকারীরা। তবে স্বল্প আমানতকারীদের টাকা দিয়ে দিলেও বড় গ্রাহকদের অর্থ দিতে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় নিচ্ছে পদ্মা ব্যাংক।

একীভূত কার্যক্রম শুরুর পর মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ছিল প্রথম কার্যদিবস। রাজধানীর মতিঝিল শাখায় সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই গ্রাহকদের আনাগোনা ছিল বেশ। স্বাভাবিক দিনের থেকে আমানতকারীদের ভিড় কিছুটা বেশি ছিল। স্বল্প অঙ্কের টাকা সাথে সাথে দেওয়া হলেও বড় অ্যামাউন্টের জন্য সময় নিচ্ছে ব্যাংক কর্মকর্তারা।

টাকা তুলতে আসা শিমুল দম্পতি কালবেলাকে বলেন, আমাদের অল্প টাকা তাই তুলতে এসেছি। সাথে সাথে দিয়ে দিয়েছে। একই সময়ে আরেক গ্রাহক বলেন, পাঁচ লাখ টাকা তোলার জন্য এসেছি, আমাকে দুই দিন পরে আসতে বলেছে।

শুধু টাকা তুলতেই নয়, অনেকেই আসছেন খোঁজখবর নেওয়ার জন্য। কাঞ্চন নামের এক গ্রাহক কালবেলাকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে লেনদেন করি পদ্মা ব্যাংকের সাথে। মার্জারের খবর শোনার পরে খোঁজ নিতে এসেছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন কোনো সমস্যা হবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আমানতকারী বলেন, আমার আমানত ম্যাচিউর হয়েছে। কিন্তু আজকে টাকা দিল না, সপ্তাহখানেক পরে আসতে বলেছে।

আরেক গ্রহক বলেন, ব্যাংকে টাকা রাখলে আতঙ্ক তো কিছুটা থাকবেই। তবে যেহেতু এক্সিম ব্যাংকের সাথে এক হয়ে যাচ্ছে তাই সমস্যা নাও হতে পারে। এখন দেখা যাক কি হয়।

এদিকে হঠাৎ করেই টাকা তুলতে আসা আমানতকারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চাপ বেড়েছে কর্মকর্তাদের ওপর। তারাও বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করছেন।

এ বিষয়ে মতিঝিল শাখা প্রধান মনির হোসাইন কালবেলাকে বলেন, স্বাভাবিকের তুলনায় আমাদের টাকা তোলার চাপ অনেক বেড়েছে। অনেকে ডিপজিট ম্যাচুরিটি আসার আগেই টাকা তুলতে চাচ্ছেন। স্বাভাবিকের তুলনায় ৫০ পার্সেন্ট ট্রেডিশনাল একটা প্রেসার পড়েছে। কারণ মানুষের মাঝে একটা বিষয় কাজ করছে টাকা দিবে কি না। এটা স্বাভাবিক। আমরা গ্রাহকদেরকে বোঝাচ্ছি। অনেকে বুঝতেছে। অনেকে বুঝতেছে না। টাকা দিয়ে দিচ্ছি। শুধু মতিঝিলই নয়। রাজধানীর আরও বেশ কয়েকটি শাখায় খোঁজ নিয়ে একই অবস্থার কথা জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক রিয়াজ খান কালবেলাকে বলেন, এই ধরনের মার্জার প্রক্রিয়া দেশে আগে হয়নি। এ কারণে অনেকেই টাকা তুলে নিচ্ছে। তবে মার্জারের কারণে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কারণ এক্সিম ব্যাংক পদ্মা ব্যাংক থেকে অনেক শক্তিশালী। সুতরাং আমানতকারীদের ঝুঁকিতে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা ব্যাংকে তারল্য সংকট থাকার কারণে অনেক বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু এক্সিম ব্যাংকে আমানতে মুনাফা কিছুটা কম। এজন্য অনেকেই টাকা তুলে নিতে পারে। তবে যাদের মেয়াদি আমানত রয়েছে তাদের সুদের হার পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই এখনই আমানত তুলে নেওয়ার কোনো কারণ দেখেন না এই এমডি।

দেশে ২০১৩ সালে নতুন যে ৯টি ব্যাংক অনুমোদন পায়, তার একটি হলো পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স)। শুরু থেকেই এটির কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ। যেমন- অনুমোদন পাওয়ার আগেই ব্যাংকটি অফিস খুলে লোকবল নিয়োগ দিতে শুরু করেছিল। আবার সম্পর্কের ভিত্তিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত জমা নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি শুরু করেন এর উদ্যোক্তারা। ফলে চার বছর না পেরোতেই সংকটে পড়ে ব্যাংকটি।

পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় ২০১৭ সালে পদ ছাড়তে বাধ্য হন এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ব্যাংকটির এমডি একেএম শামীমকেও অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন এই ব্যাংককে বাঁচাতে মূলধন সহায়তা দেয় সরকারি চার ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। সেই সুবাদে ব্যাংকটির পরিচালনায় যুক্ত হন ওই চার ব্যাংক ও আইসিবির প্রতিনিধিরা। পদ্মা ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।

২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি দ্য ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। এ রকম অবস্থায় শরীয়াহ্ ভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পদ্মা। এর ফলে ব্যাংকের তালিকা থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছে পদ্মা ব্যাংকের নাম। সাবেক ফারমার্স ব্যাংকে অনিয়মের পর জেলে আছেন নির্বাহী কমিটির তৎকালীন চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী এবং তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতী। গত বছরের অক্টোবরে ১৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় তাদের ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়।

অন্যদিকে এক্সিম ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। বর্তমানে এটি ইসলামী ধারার একটি ব্যাংক। ২০০৪ সালে এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ইতোমধ্যে দুর্দশাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংক একীভূত করতে পরিচালক পর্ষদের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) প্রকাশ করল এক্সিম ব্যাংক।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লুকিয়ে রাখা ২৯ কেজি ওজনের বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩ 

হাসনাতের ফেসবুক পোস্টে ৩ দাবি

যানজট ও দুর্ঘটনা রোধে মাঠে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা

রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জবি শিক্ষার্থী ৩ দিনের রিমান্ডে

মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছে ‘সোনারগাঁ’ : মামুনুল হক

‘এ দেশে আ.লীগের নেতাকর্মীদের ভাত নেই’ 

ফিল্ম আর্কাইভে জাতীয় চলচ্চিত্র সংসদের সম্মেলন

‘শাহবাগে বড় স্ক্রিনে দেখানো হবে জুলাই গণহত্যার ডকুমেন্টারি’

নাসিরনগরে দুপক্ষের সংঘর্ষে কৃষক নিহত 

‘সবাইকে কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে একযোগে কাজ করতে হবে’

১০

ভারতের ৩৬ জায়গায় পাকিস্তানের ৪০০ হামলা

১১

কর্ণফুলীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ সিএমপি কমিশনারের

১২

অভিযোগও ভারতের, রায়ও ভারতের, হামলাও ভারতের : পাকিস্তান সেনার মুখপাত্র

১৩

আ.লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য সাগর গ্রেপ্তার

১৪

ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায় : সারজিস

১৫

‘এই দেশ কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়, জণগণের’

১৬

পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াল আরও এক মুসলিম দেশ

১৭

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির নেতৃত্বে শ্যামল-সিরাজ

১৮

পাকিস্তানে থাকা রিশাদ-নাহিদের অবস্থা নিয়ে যা বলছে বিসিবি

১৯

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল শাহবাগ, বাড়ছে জনস্রোত

২০
X