কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৩, ১০:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মশা মারতে সিঙ্গাপুর থেকে আনা হলো বিটিআই ব্যাকটেরিয়া

ফাইল ছবি।
ফাইল ছবি।

মশা মারতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) একটি বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর থেকে ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস সেরোটাইপ ইসরায়েলেন্সিস (বিটিআই) নামক কীটনাশক ব্যাকটেরিয়া আমদানি করেছে।

আজ মঙ্গলবার (১ আগস্ট) ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসে পৌঁছেছে ৫ টন ব্যাকটেরিয়া। বুধবার থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিটিআই প্রয়োগ শুরুর কথা রয়েছে।

ডিএনসিসি জানিয়েছে, বিটিআই হলো এক ধরনের জৈবিক লার্ভিসাইড যা কার্যকরভাবে মশা ও মাছির লার্ভাকে ধ্বংস করে। এ ধরনের কীটপতঙ্গের বংশবৃদ্ধির জলজ আবাসস্থলে এ কীটনাশক প্রয়োগ করলে এটি মশা-মাছির বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। আর বিটিআই ব্যবহারে মানুষ, পোষা প্রাণী, গবাদি পশু এবং উপকারী পোকামাকড়ের ক্ষতি হয় না। এই ব্যাকটেরিয়া কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে সিটি করপোরেশনের কর্মচারী ও মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে সিঙ্গাপুর থেকে দু'জন বিশেষজ্ঞ আসবেন।

ডিএনসিসি প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম শফিকুর রহমান বলেন, প্রথম সপ্তাহে ট্রায়ালের পর আমরা উত্তর সিটির বিভিন্ন এলাকায় এটি ব্যবহার করতে পারব বলে আশা করছি। প্রথম পর্যায়ে আনা বিটিআই আমরা কমপক্ষে চার–পাঁচ মাস ব্যবহার করতে পারব। এটি কার্যকর প্রমাণিত হলে সারা বছর বিটিআই ব্যবহার করা হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সেলিম রেজা বলেন, যেসব এলাকায় ডেঙ্গুর রোগী পাওয়া যাচ্ছে ও প্রকোপ বেশি সেসব এলাকায় আগে প্রয়োগ শুরু হবে। ডেঙ্গু নিধনে আমাদের যে বিশেষ কমিটি আছে তারা এলাকাগুলো নির্ধারণ করবেন। বিটিআই যদি কাজ করতে শুরু করে তাহলে আরও আনা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেন, বিটিআই ভিন্ন প্রকৃতির এবং এটি ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণে আরেকটি অস্ত্র। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি একটি জৈবিক সমাধান। এটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিটিআই খুব একটা কার্যকর হবে না। এটি কিউলেক্স মশার বিরুদ্ধে বেশি কার্যকর। লার্ভিসাইড যদি এডিস মশার উৎপত্তিস্থলে না পৌঁছায় তবে তা কার্যকর হবে না।

প্রতি বছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম এবং চিরুনি অভিযানের মতো নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করলেও মশার বংশবিস্তার রোধে এসব প্রচেষ্টা তেমন কোনো প্রভাব রাখতে পারেনি। মশা নিধনে জটিল নামের সপ্তাহ বা মাসব্যাপী এসব প্রচারণা যে নিষ্ফল তা ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকেই স্পষ্ট। নগরবাসী জলাশয়ে হাঁস, ব্যাঙ ও গাপ্পি মাছ ছেড়ে এবং উড়ন্ত মশা নিধনের জন্য পাখির ব্যবহারের কর্তৃপক্ষের নানা প্রকল্পের সাক্ষী হয়েছে। এগুলো বাদেও ঢাকা উত্তর ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্গম জলাশয়ে মশার উৎস শনাক্ত করে ওষুধ ছড়িয়েছে। মশা নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণের জন্য একাধিকবার বিদেশেও গেছেন প্রতিনিধি দল। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি-ডেড কাউন্টি থেকে ফিরে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এত দিন ভুল পদ্ধতিতে মশা নিধনের চেষ্টা করেছে।

মশা নিয়ন্ত্রণের আগের সমস্ত পদ্ধতি ব্যর্থ হওয়ায় এখন ঢাকা উত্তর লার্ভিসাইডিং প্রক্রিয়ায় বিটিআই ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে মশকনিধনে সফল হওয়ার প্রত্যাশা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিটিআই প্রাকৃতিক, সাশ্রয়ী এবং টেকসই। সিঙ্গাপুর ও ভারতের কলকাতাসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি প্রধানত অণুজীব থেকে সৃষ্ট কম-বিষাক্ত কীটনাশক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এ ব্যাকটেরিয়া প্রচুর পরিমাণে টক্সিন তৈরি করতে পারে, যার প্রভাবে কীটপতঙ্গের খাদ্যগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।

ডিএনসিসির উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, বিভিন্ন দেশ এই ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করে। সিঙ্গাপুর, ভারতের বিভিন্ন শহর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইন বিটিআই ব্যবহার করে মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা পেয়েছে। বাংলাদেশের জলবায়ুও এসব দেশের মতোই। কলকাতায়ও কিছু কোম্পানি বিটিআই উৎপাদন করে। কলকাতার একটি কোম্পানি এখানে বিটিআই বিক্রি করার জন্য আমাদের কাছে এসেছিল কিন্তু সস্তা হওয়ায় এটি সিঙ্গাপুর থেকে আনা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুকুর, হ্রদ, নদী এবং ফোয়ারার মতো জলাশয়ে বিটিআই স্প্রে করা যায়। বদ্ধ পানিতে বিটিআই প্রয়োগ করলে এটি মশার বিকাশমান লার্ভাকে মেরে ফেলে।বাড়ির আশেপাশের যেসব জায়গা ও পাত্রে- যেমন ফুলের টব, টায়ার, পাখির স্নানপাত্র ইত্যাদি- পানি জমে, সেখানে বিটিআই ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি পুকুর, হ্রদ এবং সেচের নালার মতো পানির বড় আধারগুলোতেও ব্যবহার করা যায়।

১০০ লিটার পানিতে ১৫ গ্রাম বিটিআই মিশিয়ে দেড় বর্গকিলোমিটার এলাকায় ছিটিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ওষুধটির কার্যকারিতা থাকে ৩০ দিন। কিন্তু চোখে লাগলে বিটিআই দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত ঘটাতে এবং ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। বিটিআই মানুষের জন্য বিষাক্ত নয় এবং এটি জৈব চাষপদ্ধতিতে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হলেন শহীদুজ্জামান

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি ভেঙে ফেলা জহির রায়হান মিলনায়তন 

ভারতের অন্তঃসত্ত্বা নারীকে বাংলাদেশে পুশইন, সন্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দিহান

৫ আগস্টের বিজয়কে ধরে রাখার আহ্বান চট্টগ্রাম ডিসির

ব্লুটুথ হেডফোন নাকি সাধারণ হেডফোন, কোনটি ভালো জানেন?

রাকসু নির্বাচন ঘিরে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ১০ দফা প্রস্তাবনা

‘ছোট সাজ্জাদের’ স্ত্রী তামান্না তিন দিনের রিমান্ডে

ফিক্সিংকাণ্ডে আলোচনায় ঢাকা ক্যাপিটালস, কী বলছে শাকিব খানের দল

জুমার নামাজে না গেলে ২ বছরের দণ্ডের বিধান করল যে দেশ

প্রিমিয়ার ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করল বাংলাদেশ ব্যাংক

১০

সাতক্ষীরায় স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

১১

রাংপানিতে বিজিবির কড়া নজরদারি, আরও ২০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার

১২

বিএনপির ফরম ক্রয়ের রসিদ জমা দিল খুলনা

১৩

বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী দম্পতির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

১৪

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২২ রানের জয় বাংলাদেশের

১৫

নানা আলোচনায় শেষ হলো এইচএসসি পরীক্ষা, ব্যবহারিক কবে

১৬

অক্টোবরে এশিয়ার দুই দলের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল

১৭

নিখোঁজের একদিন পর মাদার ভ্যাসেলের সুপারভাইজার উদ্ধার

১৮

সাবেক মন্ত্রী শাহাবের জমিসহ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

১৯

মাইলস্টোন ট্রাজেডি  / প্রাণ হারানো শিক্ষকরা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন : প্রধান উপদেষ্টা

২০
X