

ব্যস্ত সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে সুন্দর করে গুছিয়ে নেওয়াটাই হতে পারে দিনের আত্মবিশ্বাসী শুরুর মুহূর্ত। আর চুল যদি হয় মসৃণ, প্রাণবন্ত ও সহজে সামলানোর মতন, তাহলে সেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় আরও কয়েক গুণ।
এই সহজ যত্ন কিন্তু একসময় এতটা সহজলভ্য ছিল না। আধুনিক শ্যাম্পুর আগ পর্যন্ত নারীদের চুলের যত্ন মানেই ছিল তেল, শিকাকাই কিংবা ভেষজ উপাদান। সময়ের সঙ্গে সেই চর্চা বদলেছে, চুলের যত্নে এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।
১৯৫৪ সালে ইউনিলিভার বাজারে আনে এমন এক ব্র্যান্ড, যা শুধু কার্যকরভাবে চুল পরিষ্কারই করে না, বরং ঘরেই দিত সেলুনের মতো কোমলতা ও উজ্জ্বলতার প্রতিশ্রুতি। উন্নত ফরমুলা ও পুষ্টিকর উপাদানে তৈরি এই শ্যাম্পু দ্রুতই বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নারীরা পেলেন এমন এক সহচর, যা তাদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে দিন শুরু করার শক্তি বাড়িয়ে দিল। এই আত্মবিশ্বাসের নাম— সানসিল্ক।
বাংলাদেশে সানসিল্কের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮২ সালে। তখন আধুনিক শ্যাম্পু ছিল একেবারেই নতুন ধারণা। বেশিরভাগ নারী তখনও ভরসা করতেন প্রাকৃতিক উপাদানের ওপর। সেই সময়ে সানসিল্ক হাজির হয় সহজ, কার্যকর ও আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা নিয়ে। প্রথম ব্যবহারেই চুল হয়ে উঠত মসৃণ ও সহজে সামলানো যায় এমন— যা তরুণীদের দ্রুত আকৃষ্ট করে। বিশেষত যারা বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্মজীবনে নতুন করে পা রাখছিলেন, তাদের কাছে এটি হয়ে ওঠে আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
শুরু থেকেই সানসিল্ক অনুপ্রেরণামূলক বিজ্ঞাপন ও পরিচিত রোল মডেলের মাধ্যমে ভোক্তাদের সঙ্গে গড়ে তোলে গভীর সম্পর্ক। দেশের জনপ্রিয় মুখ যেমন বিজরী বরকতউল্লাহ ও কানিজ আলমাস এই ব্র্যান্ডের প্রচারণায় যুক্ত হন। তাঁদের ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাস সানসিল্কের বার্তাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। তাঁরা দেখিয়েছেন, চুল সুন্দর হলে আত্মবিশ্বাসও বাড়ে। আর সানসিল্ক সেই আত্মবিশ্বাস গড়ার সঙ্গী।
বাংলাদেশি নারীর চুলের ধরন ও প্রয়োজন আলাদা। সেই ভিন্নতাগুলো মাথায় রেখেই সানসিল্ক বিশেষ সমাধান নিয়ে আসতে পেরেছে। এর মাধ্যমে শ্যাম্পুটি দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর্দ্র আবহাওয়ায় ফ্রিজি চুল সামলানো হোক, কিংবা দূষণ আর রোদে ক্ষতিগ্রস্ত চুলের সুরক্ষা— প্রতিটি সমস্যার জন্যই ছিল আলাদা ভ্যারিয়েন্ট। ব্ল্যাক শাইন, পিঙ্ক স্মুথ অ্যান্ড ম্যানেজেবল, ইয়েলো হেয়ার ফল সল্যুশন আর গ্রিন রিফ্রেশিং হাইড্রেশন— অল্প সময়েই শহর থেকে গ্রামে এই নামগুলো পৌঁছে যায় দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে।
শহরের বাইরেও গ্রামীণ বাজারে পৌঁছাতে শুরু থেকেই উদ্যোগী ছিল সানসিল্ক। একবার ব্যবহারযোগ্য সাশ্রয়ী স্যাশে এনে প্রিমিয়াম শ্যাম্পুকে এনেছে সবার নাগালের মধ্যে।
শক্তিশালী ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পৌঁছে গেছে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামেও। মাঠপর্যায়ের প্রচারণায় ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা সরাসরি চুল ধুয়ে দেখাতেন— কীভাবে নিস্তেজ, রুক্ষ চুল মুহূর্তেই হয়ে ওঠে মসৃণ ও ঝলমলে। বড় বড় গ্রামীণ মেলায় একদিনে ৫০০-র বেশি নারী বুথে এসে এই অভিজ্ঞতা নিতেন। সেখান থেকেই গ্রামীণ পর্যায়ে সানসিল্কের প্রতি তৈরি হয় দীর্ঘস্থায়ী আস্থা।
শুধু সৌন্দর্য নয়, সানসিল্ক উদযাপন করেছে নারীর বন্ধুত্ব, ক্ষমতায়ন ও স্বপ্নপূরণের সাহস। ‘লাইফ ক্যান্ট ওয়েট’ ও ‘সানসিল্ক ফ্রেন্ডশিপ’ -এর মতো ক্যাম্পেইন নারী জীবনের প্রাণশক্তিকে তুলে ধরেছে। এসব উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় রোডশো, সেলুন ইভেন্ট ও বিউটি ফেয়ারে তরুণীরা হাতে-কলমে শিখেছেন চুলের যত্ন ও স্টাইলিংয়ের কৌশল।
২০০০ সালের পর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হেয়ার এক্সপার্টদের সঙ্গে কাজ করে সানসিল্ক আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। এ সহযোগিতার মাধ্যমে পেশাদার মানের চুলের যত্নের জ্ঞান পৌঁছে গেছে দেশের ঘরে ঘরে। ফলে ব্র্যান্ডটি একদিকে পেয়েছে অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি, অন্যদিকে থেকেছে সবার জন্য সহজলভ্য।
সাম্প্রতিক সময়ে সানসিল্ক গুরুত্ব দিয়েছে ডিজিটাল যোগাযোগে। ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে হেয়ার টিউটোরিয়াল, মেকওভার প্রতিযোগিতা আর সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন চালু করেছে, যেখানে উদযাপিত হচ্ছে ব্যক্তিত্ব ও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের চুলের সৌন্দর্য। টিভি, মাঠপর্যায়ের ইভেন্ট কিংবা ইনস্টাগ্রাম রিলস— যেখানেই হোক না কেন, তরুণ নারীদের সৌন্দর্যচর্চার আলোচনায় সানসিল্ক এখনো কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের শ্যাম্পু বাজারে শীর্ষে রয়েছে সানসিল্ক। দেশের ৯০ শতাংশেরও বেশি পরিবারে এর ব্যবহার, ৪০ শতাংশেরও বেশি মার্কেট শেয়ার সবই প্রমাণ করে এর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা। নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম আয়োজিত বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ডে শীর্ষে থাকা এ ব্র্যান্ড আসলে শুধু শ্যাম্পুই নয়; এটি হয়ে উঠেছে বড় হয়ে ওঠার সাথি, আত্মবিশ্বাস গড়ার অংশীদার এবং বন্ধুত্ব ও স্মৃতির সঙ্গী।
সময় বদলেছে, প্রজন্ম বদলেছে, দশকের পর দশক ধরে চুলের প্রতিটি গোড়ায় যত্নের ছোঁয়ায় সানসিল্ক গড়ে তুলছে আত্মবিশ্বাসের অগণিত গল্প।
মন্তব্য করুন