ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরাঞ্চলখ্যাত পাঁচটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭ দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা।
পানিতে নতুন করে আরও এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের সড়ক, ব্রিজ, কালভার্টে ফাটল দেখা দেওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে সদরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে উপজেলার চরনাছিরপুর, দিয়ারা নারিকেল বাড়িয়া, চরমানাইর ও আকোটেরচর, ঢেউখালীর আংশিক এলাকা প্লাবিত রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে নৌকায়, কলার ভেলাসহ ঘরের মাঝে বাঁশ দিয়ে চৌকি উঁচু করে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
আরও দেখা যায়, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য, আশ্রয় ও সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। শত শত গ্রাম এখন বানের পানিতে ভাসছে। গ্রামগুলোর অধিকাংশ বাড়িতে কোথাও হাঁটুসমান কোথাও বুকসমান পানি। এ অবস্থায় ঘরে চৌকি উঁচু করে, মাচা পেতে কেউবা নৌকায় বসবাস করছেন। সেইসঙ্গে পানির তোড়ে বাড়িঘর ভেসে যাওয়ার সংশয়ের পাশাপাশি খাদ্য আর বিশুদ্ধ পানির সমস্যা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। এ অবস্থায় থাকতে না পেরে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।
অব্যাহত পানি বৃদ্ধির কারণে রাস্তাঘাট ভেঙে উপজেলার সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বানভাসি মানুষের মাঝে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে।
সদরপুর উপজেলার পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। এছাড়াও আবারও নতুন করে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ফলে ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ওঠায় পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে গরু-ছাগল নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সদানন্দ পাল জানান, পানিতে কয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে তা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। এই বিষয়ে আমার এটিওদের তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। যদি কোনো বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের মধ্যে পানি উঠে যায় তাহলে ডিইও স্যারের সঙ্গে কথা বলে এদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।
পানিতে হেলে পড়া বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সর্ম্পকে সদরপুর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এর সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলাম জানান, পল্লী বিদ্যুৎয়িত এলাকাগুলো সংযোগ এখনো বন্ধ না হলেও ঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রয়েছে।
দিয়াড়া নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন জানান, ইউনিয়নের প্রায় পরিবারগুলো পানিবন্দি রয়েছে। কয়েক হাজার পরিবার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এলাকায় ঘুরে ঘুরে এদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
চরনাসিরপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শেখ মো. রোকন উদ্দীন জানান, ইউনিয়নের প্রায় পরিবারগুলো পানিতে বন্দি রয়েছে। আমি প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর রাখাসহ এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করছি।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, উজান থেকে নেমে আসে ঢল এবং যমুনার পানি থেকেই মূলত এ অঞ্চলে নতুন করে পানি আসতে শুরু করেছে।
তিনি আরও জানান, আরও কয়েকদিন পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলেও নদীর তীরবর্তী অঞ্চল এবং চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
মন্তব্য করুন