দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১১:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘চিড়া-মুড়ি-বিস্কুট কতক্ষণ চাবান যায়’

ঘরের দরজায় বসে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছেন আনোয়ারা বেগম। ছবি : কালবেলা
ঘরের দরজায় বসে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছেন আনোয়ারা বেগম। ছবি : কালবেলা

আনোয়ারা বেগমের বয়স ৭০ পার হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে বাড়িঘর। রান্নাঘর ও টিউবওয়েলও ডুবে গেছে। চুলায় রান্না হয় না ৮ দিন। মানুষের দেয়া শুকনো মুড়ি-চিড়া-গুড় খেয়ে কোনো রকম দিন পার করছেন তিনি। তার মতো অবস্থা একই বাড়ির ওয়াহেদা বেগম ও শিরিনা বেগমেরও।

গত ৭ দিন ধরে পানিবন্দি তারা। তারা সবাই কুমিল্লার দেবিদ্বারের ফতেহাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ সাইচাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ত্রাণের জন্য ঘরের দরজায় বসে অপেক্ষা করছে বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম।

ঘরের ভেতরের কিছু মালামাল চৌকির ওপর বস্তায় রাখা। উঠোনে হাঁটু সমান পানি। পানি স্রোতে টিনের ঘরের এক অংশ হেলে পড়েছে পুকুরের দিকে। যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। রান্না ঘরের চুলায় পানি ভর্তি। টিউবওয়েলের বেশ অর্ধেক ডুবে আছে বন্যার পানিতে।

আনোয়ারা বেগম বলেন, বাইত ৮ দিন ধরে পানি। ঘরে রান্না হয় না, দরজায় বইস্যা রইছি, কেউ যদি বিরিয়ানি দেয় হেললাইগ্যা। মুড়ি-চিড়া-বিস্কিট দেয়, এগুলো কতক্ষণ চাবান যায়, দাঁতেও আর ধরে না। আমরা বুঁড়া মানুষ ভাত খাইতে পারলে জীবনডা বাঁচে।

তিনি আরও বলেন, আমার দুইডা ছেলে আছে, একজন সিএনজি চালায় আর একজন সিএনজির মেকার। তারাও এহন কাজকামে যাইত পারে না। এহন দুশ্চিন্তা পানি কমলে ঘর তো পইরা যাইব। ও বাজান, আমারে এক বান টিনের ব্যবস্থা কইরা দেন না। এক বান টিন অইলে আমার ঘরটা ঠিক করন যাইব।

কালবেলার এই প্রতিবেদকের কাছে অনেকটা আকুতি স্বরেই কথাগুলো বলছিলেন বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম।

ওয়াহেদা বেগম বলেন, ঘরের ধান-চাল-ডাইল সব ভিজ্যা গেছে। কোনো কিছু বাইর করতে পারি নাই। ওহন অসহায় অবস্থায় ঘরে পইড়া আছি। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠছে মানুষ তারারে অনেক কিছু দেয়। বাড়ি ঘরের ভেতরে কেউ আসে না। আমি কয়েকবার রাস্তার গিয়ে দাঁড়াই ছিলাম, রাস্তা ডুবে যাওয়ায় এদিকে কোনো ত্রাণের গাড়ি আসতে পারে না। সকালে কিছু লোক চিড়া-মুড়ি-বিস্কিট দিয়া গেছে। এগুলো কোনো রকম চিবাইয়া খাই।

পথে দেখা হয় বৃদ্ধ ওসমান গনির সঙ্গে। তার বাড়িঘরের অবস্থা জানতে চাওয়ায় তিনি কথা বলতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেছেন। ‘ঘরে হাঁটু সমান পানি’ বাইরে ঘোরাঘুরি করতাছি’ কেউ কোনো ত্রাণ দিচ্ছে না’ দূর থেকে দেখছি একটা ত্রাণের গাড়ি থামানো। কোমরসমান পানি দিয়ে গাড়ির কাছে আসছি ভাবছি খুঁজলে হয়ত এক প্যাকেট দিবে। আপনি একটু সুপারিশ করে বলেন না আমাকে এক প্যাকেট ত্রাণ দিতে।

ওসমান গনিও অনেকটা আকুতি করে কথাগুলো বলছিলেন। পরে তিনি লুঙ্গির গোছ থেকে ১০০ টাকা বের করে বলছেন- আমার কাছে ১০০ টেহা আছে আরও ১০০ টেহা হলে আমি কিছু কিনে বাড়ি যাইতে পারমু, ঘরের সবাই না খাইয়া আছে।

এ বিষয়ে ফতেহাবাদ ইউপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন রহুল কালবেলাকে বলেন, ফতেহাবাদ ইউনিয়ন দেবিদ্বার উপজেলার একটি বড় ইউনিয়ন। এখানের ১৮টি গ্রামই বন্যার পানিতে প্লাবিত। সবগুলো গ্রামে শুকনো খাবারের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে চাল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রচুর খাবার দেওয়া হচ্ছে। পানিবন্দি যতগুলো ঘর আছে প্রত্যেকটি ঘরেই ত্রাণ পৌঁছানো হবে। রাস্তাঘাট ভাঙা পানি থাকায় যানবাহন সমস্যার কারণে সঠিক সময়ে অনেকটা সমস্যা হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করলে ভালো হতো’

কত সৈন্য মারা গেল জানাল ভারতের সেনাবাহিনী

চাঁদা দাবি, ছাত্রদল-যুবদল নেতাসহ আটক ১০

রাত ১২টার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

ক্ষমতার জন্য বিএনপি রাজনীতি করে না : আমিনুল হক

ফর্মে না থাকলেও লিটনের পাশে সালাউদ্দিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বজ্রপাতে শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু

রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি 

এক নজরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও ফলাফল

ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে খোলা হলো হিটস্ট্রোক সেন্টার

১০

জমি লিখে না দেওয়ায় বাবাকে কুপিয়ে জখম

১১

গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

১২

ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন, স্বামী-স্ত্রী গ্রেপ্তার

১৩

ঢাবির জিয়া হলে শিক্ষার্থীরাই বসালেন ঠান্ডা পানির মেশিন

১৪

আ.লীগের সম্পত্তি ক্রোকের প্রস্তাব করবে আপ বাংলাদেশ

১৫

কলেজের অর্থ আত্মসাৎ করে লন্ডনে পাড়ি জমালেন শিক্ষক দম্পতি

১৬

তরুণদের আদর্শ হবে শহীদদের ত্যাগ : চসিক মেয়র

১৭

আখাউড়ায় বজ্রপাতে ২ কৃষকের মৃত্যু

১৮

বিবিসির বিশ্লেষণ / তুরস্ক কেন প্রকাশ্যে ভারতের বিরোধিতা এবং পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে?

১৯

সমাজে ভারসাম্যের জন্য কোরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই : নূরুল ইসলাম বুলবুল 

২০
X