মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৩, ১২:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পিরোজপুরে শতবর্ষী ‘কাঠ মসজিদ’

স্থানীয়ভাবে ‘কাঠ মসজিদ’ নামে পরিচিত মমিন মসজিদ। ছবি : কালবেলা
স্থানীয়ভাবে ‘কাঠ মসজিদ’ নামে পরিচিত মমিন মসজিদ। ছবি : কালবেলা

শতবর্ষী ও দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী পুরাকীর্তির শিল্পসমৃদ্ধ দৃষ্টিনন্দন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ। উপজেলার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামের মমিন উদ্দিন আকন ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মসজিদটি নির্মাণ করেন। সম্পূর্ণ নিজস্ব শৈল্পিক ভাবনা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি মসজিদটি তৈরি করেন যা শিল্পকর্মের অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে রয়ে গেছে আজও।

বিচিত্র কারুকাজখচিত সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে তৈরি এই মসজিদ স্থানীয়ভাবে ‘কাঠ মসজিদ’ নামে পরিচিত। ইতিহাসের নিদর্শন এ মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক আসেন।

নির্মাণ

১৯১৩ সালে কাঠ মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কাঠশিল্পের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা থেকে তিনি হরকুমার নাথকে মাসিক ৪০ টাকা বেতনে মসজিদ তৈরির প্রধান মিস্ত্রি নিয়োগ করেন। ২২ জন মিস্ত্রি দীর্ঘ সাত বছর নিরলস কাজ শেষে ১৯২০ সালে শেষ করেন নির্মাণকাজ। মমিন উদ্দিন আকন সব সময় মিস্ত্রিদের কাছে থেকে তাদের কাজ পরিচালনা করতেন এবং কারুকাজগুলো সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা করে দেখতেন। মসজিদটি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর কর্তৃক সংরক্ষিত। মসজিদটি সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি।

উপাদান

বহু দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান কাঠ দ্বারা এটি নির্মিত। অসাধারণ ও দৃষ্টিনন্দন এর নির্মাণশৈলী। বিভিন্ন সময় বর্ষার কারণে নামমাত্র কিছু কাঠ বা রঙের ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে মেরামত করে সৌন্দর্য ধরে রাখা হয়েছে। মমিন মসজিদ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় লোহাকাঠ ও সেগুনকাঠ। কাঠগুলো মিয়ানমার, ত্রিপুরা ও আসাম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। মসজিদের কাঠামো তৈরিতে লোহার পেরেক ব্যবহার না করে কাঠের শলা ব্যবহার করা হয়। ২৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থের মসজিদটিতে চৌচলা টিন শেড দিয়ে পাটাতন তৈরি করা হয়েছে।

নির্মাণশৈলী

অসাধারণ ও দৃষ্টিনন্দন এর নির্মাণশৈলী। ভেতরে আলো-বাতাস প্রবেশ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পাটাতনের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে দ্বিতীয় আর একটি দোচালা টিনের ছাউনি। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি করে এবং পূর্ব ও পশ্চিমে চারটি করে জানালা। পূর্ব দিকে একটি মাত্র প্রবেশদ্বারে কারুকার্যখচিত দুটি খাম্বাবিশিষ্ট দরজা রয়েছে, যাতে মসজিদ নির্মাণের সূক্ষ্ম শিল্পকর্ম ফুটে উঠেছে।

ইউনেস্কো প্রকাশিত বিশ্বের অনন্য মসজিদ নিয়ে প্রকাশিত ৪০০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে এ কাঠ মসজিদটির সচিত্র বর্ণনা স্থান পেয়েছে। তাছাড়াও গোটা বরিশাল বিভাগের মধ্যে শুধু এই মসজিদটির আলোকচিত্র ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় জাদুঘরের স্থাপত্য গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে।

বংশের উত্তারাধিকার সূত্রে মসজিদটি নির্মাণের প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী মমিন উদ্দিন আকনের নাতি (দৌহিত্র) আবুল কালাম আজাদ আকন বর্তমানে মসজিদটি দেখভাল করেন।

তিনি জানান, মসজিদকে কেন্দ্র করে প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর করা দরকার। মসজিদের যত সংস্কার করা দরকার সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। রৌদ্রে বৃষ্টিতে কাঠগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিলীন হয়ে যেতে পারে ঐতিহ্যবাহী মমিন মসজিদটি।

এ ব্যাপারে প্রবীন শিক্ষক নূর হোসেন মোল্লা বলেন, দৃষ্টি নন্দন মমিন মসজিদ আমাদের জাতীয় সম্পদ। তিনি সরকারের কাছে মসজিদটি দ্রুত সংস্কারের পাশাপাশি এটি ভালো করে সুরক্ষার জন্য দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মদ পানে মহা সর্বনাশ, ৬ জনের মৃত্যু

বড় ভাই মির্জা ফখরুলের মতোই কবিতা দিয়ে শুরু করলেন মির্জা ফয়সল

সোনারগাঁয়ে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন

মা ইলিশ রক্ষায় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার টহল

ন্যাশনাল পিপলস যুব পার্টির মাদকবিরোধী আলোচনা সভা

নিউমার্কেটে চুরির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, নগদ টাকাসহ গ্রেপ্তার ১

আন্দোলনরত শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করায় ছাত্রশিবিরের নিন্দা

শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংকের বিবৃতি

কক্সবাজার আদালতে বিচারকের মোবাইল-মানিব্যাগ চুরি

পাঠ্যপুস্তক ছাপার দায়িত্ব হস্তান্তর ‘মাথাব্যথায় মাথা কাটার মতো সিদ্ধান্ত’ : টিআইবি

১০

বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ে ভারতকে হারাল অস্ট্রেলিয়া

১১

মৌসুমি বায়ুসহ আগামী ৪ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস

১২

চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা

১৩

এবার উপদেষ্টাদের নিয়ে মুখ খুললেন সামান্তা শারমিন

১৪

ঢাকায় আসছেন জাকির নায়েক

১৫

ছক্কা মেরে ইতিহাস গড়লেন স্মৃতি মান্ধানা!

১৬

উপদেষ্টা রিজওয়ানাকে এনসিপি নেতার হুঁশিয়ারি

১৭

একটি দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় : কফিল উদ্দিন 

১৮

চাকসু নির্বাচনে নতুন প্রত্যয়ে ছাত্রদল

১৯

বন্দর ব্যবসায়ী নেতারা / মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ

২০
X