জহিরুল ইসলাম মিলন, ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল)
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বৈশাখ ঘিরে পালপাড়ায় বেড়েছে ব্যস্ততা

মাটির সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত কল্পনা রানী পাল। ছবি : কালবেলা
মাটির সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত কল্পনা রানী পাল। ছবি : কালবেলা

নববর্ষ ঘিরে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা বসে। মেলায় মাটির তৈরি তৈজসপত্রের বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই বাহারি সব মাটির খেলনা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার মৃৎশিল্পীরা। চৈত্রের এ মাঝামাঝি সময়ে মাটির তৈরি খেলনায় শেষ মুহূর্তে রং-তুলির আঁচড় দিচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা।

বুধবার (৯ এপ্রিল) ধনবাড়ী উপজেলার যদুনাথপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর পালপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কল্পনা রানী পাল কাঠের পিড়িতে বসে আপন মনে তার নিপুণ হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় তৈরি করছেন মাটির সামগ্রী।

এর মধ্যে রয়েছে মাটির হাঁড়িপাতিল, নানা প্রজাতির পাখি, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, হাঁস-মুরগি, নৌকা, ফুল, মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ, পিঠা তৈরির ছাঁচ, নানা জাতের ফুল-ফল ও ফুলদানি।

কল্পনা পাল বলেন, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলায় শখের বসে অনেকেই মাটির তৈজসপত্র কেনেন। তাই চৈত্রের এ মাঝামাঝি সময়ে আমাদের কিছুটা কর্মব্যস্ততা বাড়ে। এ কাজের জন্য প্রয়োজন হয় এঁটেল মাটি। কিন্তু এখন মাটির অভাব। তার ওপর রঙের দাম বাড়তি। সে অনুযায়ী পণ্যের দাম অতটা বাড়েনি। এসব মাটির খেলনা ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

ধনবাড়ী ইসলামপুর পালপাড়া গ্রামের পরেশ পাল বলেন, বছরে এই একটা উৎসব ঘিরে আমাদের অনেক আশা থাকে। এমনিতে সারা বছর মৃৎশিল্পের তেমন চাহিদা থাকে না। এখন আর মাটির জিনিসের তেমন কদর নেই। সারা বছর টানাপোড়েনে চলতে হয়। পূর্বপুরুষের পেশা ধরে রাখার চেষ্টা মাত্র। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও সামগ্রীর চাহিদা থাকে। তাই এ সময়টায় ভালো আয় হয়।

মৃৎশিল্পী নিরেশ পাল জানান, বাজারে এখন মাটির তৈরি পণ্যের কদর অনেক কম। প্লাস্টিক পণ্যের মূল্য কম হওয়ায় তা কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন ক্রেতারা। ঐতিহ্যের এই শিল্পের প্রতি মানুষের দৃষ্টি দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে পহেলা বৈশাখে ধনবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বৈশাখী মেলা বসে। তাই এই সময়ে আমাদের কাজটা বেশি করা হয়।

একই গ্রামের জগদীশ পাল ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে আমরা এ পেশার সঙ্গে জড়িত। বেচাকেনা কম বিধায় এ কাজ করতে অনাগ্রহ সবার। ছেলেমেয়েকে এ পেশায় আনতে চাই না। কেননা মানুষ এখন মাটির তৈরি জিনিসের চেয়ে মেলামাইন, প্লাস্টিককে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যদি এ পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে যথাযথ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেন, তাহলে মৃৎশিল্প হারিয়ে যাবে।

সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অনবদ্য রূপ মৃৎশিল্প। এর সঙ্গে একদিকে জড়িয়ে আছে জীবনের প্রয়োজন, অন্যদিকে নান্দনিকতা ও চিত্রকলার বহিঃপ্রকাশ। যে কারণে এই শিল্প বাঙালির নিজস্ব শিল্প, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের অংশ। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে যথাযথ পক্ষ নেওয়ার দাবি মৃৎশিল্পীদের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরানের সঙ্গে লেবাননও কি এই যুদ্ধে সরাসরি ঝাঁপিয়ে পড়ছে?

১৬ জুন : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

ঢাকায় বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস

ইরান-ইয়েমেনের একযোগে হামলা ইসরায়েলে

চলন্ত বাসে গার্মেন্টস কর্মীকে পালাক্রমে ধর্ষণ, অতঃপর...

ইরানের নবম দফার হামলায় জ্বলছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের হামলায় হতাহতের সংখ্যা জানাল ইরান

সোমবার ঢাকার যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ

১৬ জুন : আজকের নামাজের সময়সূচি

ইরানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য জরুরি হটলাইন চালু

১০

অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে বড় জয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু পিএসজির

১১

এবার ইরান-ইয়েমেন থেকে যৌথ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হতে পারে

১২

দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে বিক্ষোভ, মামলায় আসামি ১৫৯

১৩

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর গোয়েন্দাপ্রধান নিহত

১৪

দাউ দাউ করে জ্বলছে ইসরায়েল

১৫

ইসরায়েলের বিমানবন্দরে আঘাত হানল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র

১৬

নেতানিয়াহুর বাসভবন এলাকায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

১৭

এবার ইসরায়েলিদের ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চল ছাড়তে বলল ইরান

১৮

মুসিয়ালা ম্যাজিক! অকল্যান্ডকে ১০-০তে গুঁড়িয়ে দিল বায়ার্ন

১৯

ইসরায়েলিদের পালাতে বলল সেনাবাহিনী

২০
X