সুমিষ্ট ফল আঙুর চাষের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে মহেশপুরে। এখানে উৎপাদিত আঙুর অস্ট্রেলিয়াসহ অন্য যে কোনো দেশ থেকে আমদানি করা আঙুরের চেয়ে মিষ্টি ও সুস্বাদু।
এবার উপজেলার যুগীহুদা গ্রামের চাষি মো. আব্দুর রশিদ আঙুর চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। তার বাগানজুড়ে গাছে গাছে থোকা থোকা লাল, কালো ও সবুজ রঙের আঙুর ঝুলছে। দৃষ্টিনন্দন এই আঙুরের বাগান দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছে। তারা অনুপ্রাণিতও হচ্ছেন।
ইউটিউব দেখে ২০১৯ সালে ১০ কাঠা জমিতে ছমছম ও সুপার সনিকা জাতের ৭৫টি আঙুরের গাছ রোপণ করেছিলেন। বর্তমানে তার ৩ বিঘা জমিতে ৭০০ আঙুর গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে থোকা থোকা আঙুর ঝুলে আছে। নতুন করে আরও ২ বিঘা জমিতে আঙুর চাষ বাড়িয়েছেন এই সফল কৃষক। তার দেখাদেখি এখন অনেকে আঙুর চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতিদিন তার আঙুর চাষ দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন।
চাষি আব্দুর রশিদ জানান, প্রথমে আমার আঙুর চাষ দেখে স্থানীয়রা বলতো এই মাটিতে আঙুর হবে না। হলেও প্রচুর টক হবে খাওয়া যাবে না। পাগল আঙুর চাষি বলত। আমি তাদের কোনো কথায় কান দিতাম না। আজ তারাই আমাকে বাহবা দিচ্ছে সফল আঙুর চাষি হিসেবে।
তিনি জানান, মানুষের মধ্যে একটা ধারণা আছে, দেশে উৎপাদিত আঙুর টক হয়। কিন্তু এই ধারণা সত্য নয়। তার বাগানে ৭ জাতের আঙুর হয়। কোনোটি লাল, কোনোটি কালো, আবার কোনোটি সবুজ। সবগুলোই সুমিষ্ট।
তিনি বলেন, এবার প্রচুর আঙুর ধরেছে। ভারে গাছ ঝুলে পড়ছে। ৭০০ গাছের প্রতিটি গাছে ২০ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত ধরেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পাইকারি প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। আর প্রতিদিন ১৪-১৫ কেজি করে আঙুর বাগান দেখতে আসা লোকদের খাওয়ান। এবার প্রায় অর্ধকোটি টাকার আঙুরের চারাসহ আঙুর বিক্রি হবে বলে আশা করছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তার কাছ থেকে আঙুরের চারা কিনতে লোকজন আসছে তার কাছে। দেশে আঙুর চাষের প্রসার ঘটালে বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়োজন হবে না বলে জানান এই সফল আঙুর চাষি।
স্থানীয় ফারুক হোসেন জানান, প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম এই মাটিতে আঙুর চাষ সম্ভব না। কিন্তু আব্দুর রশিদ প্রমাণ করে দিলেন আমাদের দেশের মাটিতেও সুমিষ্ট আঙুর চাষ করা সম্ভব।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, রশিদ ভাইয়ে আঙুরের জন্য আমাদের এলাকার পরিচিতি বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আঙুর চাষ দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন।
দর্শনার্থী জালাল উদ্দিন বলেন, লোকমুখে ও ফেসবুকের মাধ্যমে তার আঙুর বাগানে দেখে আজ চলে এলাম। প্রতিটি গাছে থোকা থোকা আঙুর ঝুলে আছে দেখে ভালো লাগলো যে, আমাদের এলাকার মাটিতেও এত সুন্দর আঙুর চাষ করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, এত সুমিষ্ট ফরমালিন মুক্ত টাটকা আঙুর এর আগে কখনো খাওয়া হয়নি।
মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, আব্দুর রশিদের আঙুরের বাগান ঘুরে ঘুরে দেখেছি। প্রতিটি গাছে থোকা থোকা আঙুর ঝুলে আছে। বাজারের আঙুরের চেয়ে ভালো মিষ্টি।
মন্তব্য করুন