রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সামিউল করিমের (১১) কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী।
শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের দেশখাগকাটা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বিমানবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল।
পরে কবর জিয়ারত ও মোনাজাত করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। স্থানীয় মসজিদের খতিব মোনাজাত পরিচালনা করেন। পরে বাহিনীর সদস্যরা নিহতের মা-বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জানান।
নিহত সামিউল করিম সামির বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার খারকি এলাকার রেজাউল করিমের ছেলে। তার দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে সামিউল ছোট। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত সে। বড় মেয়ে স্নেহা এবার একই স্কুল থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রধানের পক্ষে গ্রুপ ক্যাপ্টেন মীর্জা নাজমুল কবীর বলেন, বিমান দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহতদের জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে যত ধরনের সহযোগিতা দরকার আমরা তা করব। এ প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিহত শিশুর কবর জিয়ারতে এসেছি। এ পরিবারের পাশে আমরা থাকব।
গত ২২ জুলাই সকালে সামিউলের মরদেহ ঢাকার সিএমএইচ থেকে গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সকাল ১০টায় তার নানার নামে প্রতিষ্ঠিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জানাজা শেষে উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের দেশখাগ কাটা গ্রামে নানাবাড়িতে নানার পাশে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
রেজাউল করিম উত্তরায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এবং বায়িং হাউসের ব্যবসা করেন। অফিসের কাজে ব্যস্ততা থাকলেও প্রতিদিন সকালে তার দুই ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতেন আবার দুপুরে নিয়ে আসতেন বাসায়। সোমবার সকালে তিনি ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে গেটের সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিলেন। ছেলে যখন দোতলার সিঁড়ি বেয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে তা দেখে বাসায় ফিরে অফিসে যান।
দুপুর ১টার দিকে তিনি আবার স্কুলের গেটে ছেলেকে বাসায় নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। স্কুল ছুটি হয়েছে তখন, সামিউল কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বাবার দিকে আসার সময় ৫ ফুট দূরত্বের মধ্যে বিধ্বস্ত বিমানের একটি জ্বলন্ত অংশ সামিউলের পেছনে আঘাত করলে পেছনটা ঝলসে যায়। রেজাউল হতবিহ্বল হয়ে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে শুধু কাঁদছিলেন আর বলছিলেন আমার ছেলেকে বাঁচান। ঝলসে যাওয়া ছেলেটা তখনো তার বুকের মধ্যে ছটফট করছিল।
একজন সেনাসদস্য তখন তার গায়ের পোশাক খুলে দিয়ে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। রেজাউল ছেলেকে ওই পোশাক দিয়ে পেঁচিয়ে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখেন। এর কিছুক্ষণ পরে একটি সামরিক হেলিকপ্টার সেখানে আসে এবং ছেলেকে নিয়ে সিএমএইচে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
রেজউল এসব বর্ণনা করার সময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিলাপ করতে করতে বলেন, আমার ছেলেটা জ্বলছিল, আমি কিছুই করতে পারিনি। চোখের সামনে চলে গেল, আহারে কি যন্ত্রণা না পেল আমার বাপ। আমি কীভাবে ওরে ছাড়া থাকব, কীভাবে এ দৃশ্য দেখে সারা জীবন বাঁচব। আমি তো আর জীবনে ঘুমাতে পারব না, সব শেষ হয়ে গেল।
মন্তব্য করুন